২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উদ্বোধনের অপেক্ষায় পায়রা সেতু

সহজ হবে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে যাতায়াত
-

পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সাথে রাজধানী ঢাকা ও বরিশালের যাতায়াত আরো দ্রুত ও সহজতর হচ্ছে। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ ও দুমকী উপজেলার লেবুখালী এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া পায়রা নদীর উপর ‘পায়রা সেতু’র নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে এই সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিয়ে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লং জিয়াং রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে ‘কর্ণফুলী সেতু’র আদলে দেশে দ্বিতীয়বারের মতো নির্মিত হচ্ছে ‘এক্সট্রা ডোজ প্রি-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ টাইপের এই সেতু। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ দিকে সেতুটি খুলে দেয়া হলে ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ ঘুচবে। আর এ সেতুর বদৌলতে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দ্বারও খুলে যাবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতুটি চালু হলে কক্সবাজারের চেয়েও কাছের দূরত্বে চলে আসবে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র সাত ঘণ্টা। জানা যায়, বারবার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির তিন দফা আবেদন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর পর অবশেষে জুলাই মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর।
সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, কর্ণফুলী দ্বিতীয় সেতুর আদলেই নির্মাণ করা হয়েছে ফোর লেন লেবুখালীর পায়রা সেতু। পায়রা নদীর মূল অংশের ৬৩০ মিটার ‘বক্স গার্ডার’ চারটি স্প্যানের উপর নির্মিত হয়েছে, যার মূল অংশ ২০০ মিটার করে দু’টি স্প্যান ১৮.৩০ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরে উপকূলীয় পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান চলাচলের জন্য। এ ছাড়া সেতুর মূল অংশের দুই প্রান্তে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট-এ ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। লেবুখালী সেতুর ৩২টি স্প্যান এখন দাঁড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ারের উপর। সেতুটির ২৮টি স্প্যানের ১২টি বরিশাল প্রান্তে এবং ১৬টি পটুয়াখালী প্রান্তে। তিনি আরো জানান, মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের উপর নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে সেতুতে। যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে মনে হবে ঝুলে আছে। এ ছাড়া পায়রা নদীতে জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতু ১৮.৩০ মিটার উঁচু থাকবে। এতে নদীতে বড় বড় জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, খরস্রোতা পায়রা নদীর ভাঙন থেকে লেবুখালী সেতু রক্ষায় পটুয়াখালী প্রান্তে এক হাজার ৪৭৫ মিটার নদী শাসন কাজ চলছে। সেতুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরিশাল প্রান্তেও নদী শাসনের প্রয়োজন। প্রকল্পের আওতায় বরিশালে একটি প্রশাসনিক ভবনও নির্মাণ করা হচ্ছে। সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে পায়রা সেতু।
এ দিকে সেতুর টোল আদায়ের জন্য পটুয়াখালী প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে টোল প্লাজা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ সেতুতে টোল আদায় করা হবে।
বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ বলেন, সেতুটি খুলে দেয়ার পর পদ্মার এ পারের ১১ জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। বরিশাল থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। পদ্মা সেতু খুলে দিলে পর্যটন শিল্পের প্রসার হবে। কুয়াকাটা থেকে ঢাকা সড়ক যোগাযোগে কোনো ফেরির প্রয়োজন হবে না। এমনকি উত্তরবঙ্গের সাথেও কুয়াকাটার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবে এ সেতু। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা কক্সবাজারের চেয়ে কাছে হবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগবে মাত্র সাত ঘণ্টা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আর মাত্র পাঁচ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে, যা শেষ করতে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। এতে আগামী মাসের মধ্যে সেতুর সব কাজ শেষ করে খুলে দেয়া সম্ভব হবে। সেতু নির্মাণকাজের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বর্তমান সরকার সব অবকাঠামো টেকসই ও গুণগতমান রক্ষা এবং বজায় রাখতে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল। গুণগতমান রক্ষার্থে কনসালট্যান্ট ও ঠিকাদারসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা সজাগ রয়েছেন বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল