১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


রংপুরে ফালগুনির বোরহানি হালিম ইফতারিতে আনে ভিন্ন মাত্রা ইফতারে ঐতিহ্য

রংপুর মহানগরীতে অবস্থিত ফালগুনি হোটেলের হালিম : নয়া দিগন্ত -

রংপুর মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী ইফতারসামগ্রী বিক্রেতা ফালগুনি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের তৈরি হালিম, বোরহানি ও বুন্দিয়া ইফতারিতে আনে ভিন্নমাত্রা। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবং রাসায়নিক পদার্থমুক্ত হালিম, বুন্দিয়া এবং হালিম কিনতে তাই আসরের নামাজের পর থেকেই ভিড়ে ঠাসা থাকে নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জাতীয় পার্টির অফিসের সামনের এ হোটেলটি। এবার হোটেলটির নতুন আইটেম বোরহানি, ছানাপোলাও ও শাহী হালুয়া।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ আড়াই যুগ ধরে সফলতার সাথে ঐতিহ্যবাহী ইফতারসামগ্রী বিক্রি করে আসছে ফালগুনি হোটেল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে বুন্দিয়া এবং হালিম এখানকার ব্র্যান্ড আইটেম এবং তৈরী সব ইফতারসামগ্রীই রাসায়নিক পদার্থমুক্ত। মানসম্মত ও খাঁটি উপকরণ দিয়ে এখানে ইফতারসামগ্রী বানানো হয়। তৈরীকারক ও পরিবেশনকারীরা থাকেন পরিচ্ছন্ন। আন্তরিক পরিবেশে এবং সাধ্যের দামের ভেতরে এখানে ইফতারসামগ্রী পাওয়া যায়। তাই নগরী তো বটে, নগরীর বাইরে থেকেও মানুষ এখানে আসেন ইফতারসামগ্রী কিনতে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রংপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র পায়রা চত্বরের পূর্ব পাশে সেন্ট্রাল রোড়ে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনের ফালগুনি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে উপচেপড়া ভিড়। দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় এবং খাবারের মান ভালো হওয়ায় এখানে নানা বয়সী মানুষ আসেন ইফতারসামগ্রী কিনতে। বুন্দিয়া ও হালিমের কদর বরাবরের মতো এবারো রমজানে অন্য খাদ্যসামগ্রীর চেয়ে বেশি। এবার এখানে যোগ করা হয়েছে সুস্বাদু ছানা পোলাও শাহী মসকট। এখানে বুন্দিয়া এবার ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য দিকে এ হোটেলের হালিমের কদর সবচেয়ে বেশি। এখানে টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির আদলে তৈরি হালিমের ছোট বাটি ৫০ টাকা এবং বড় বাটি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুনভাবে যোগ হওয়া বোরহানি প্রতি লিটার ১২০ টাকা, ছানা পোলাও ১৬০ টাকা কেজি এবং শাহী মসকট হালুয়া প্রতি পিস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে অন্যান্য ইফতারসামগ্রীর মধ্যে মিস্টি ২০০ টাকা, লাডু ঝুড়ির, নিমকিপোড়া চানাচুর ১৬০ টাকা করে, স্পেশাল শাহী জিলাপি, খোরমা ও নিমকি ১৪০ টাকা করে, বুট ১২০ টাকা, জিলাপি ১০০ টাকা কেজি এবং পিঁয়াজু, আলুচপ, বেগুনি পাঁচ টাকা, ডিমচপ ১০ থেকে ২০ টাকা, সবজি-রোল ১৫ থেকে ২০ টাকা পিচ দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ শসা সব ক্রেতাকে ফ্রি দেয়া হয়।
রোজাদাররা সারিবদ্ধভাবে এখান থেকে ইফতার আইটেম কিনে থাকেন। এর মধ্যে হালিম, বোরহানি, বুন্দিয়া, ছানা পোলাওয়ের বিক্রি এবার বেশি। আসরের নামাজের আগে থেকেই এখানে শুরু হয় বেচাকেনা। চলে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। অনেকেই এ হোটেলে বসেই ইফতার সারেন নিয়মিত। তবে বেশির ভাগই কিনে নিয়ে বাসাবাড়ি, দোকান পাট ও ইফতার মাহফিলে নিয়ে যান।
এ হোটেলে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ইফতারসামগ্রী কেনেন নগরীর শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার ওবায়দুল কবির। তিনি বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে ফালগুনি হোটেলের বুন্দিয়া ও হালিম দিয়ে ইফতার করি। এখানকার হালিম ও বুন্দিয়ার স্বাদ অতুলনীয়। কোনো ভেজাল থাকে না। দামও নাগালের মধ্যে। এ হোটেলের কর্মচারীরা আন্তরিক হওয়ায় কেনাকাটা করা যায় ঝামেলামুক্তভাবে।
এ হোটেলে ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা নগরীর কামারপাড়া এলাকার কোহিনুর বেগম বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই স্বামী সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম রিপন এখান থেকে হালিম ও বুন্দিয়া কিনে ইফতার করেন। আমার সন্তানরাও এখন এই বুন্দিয়া ও হালিমের ভক্ত।
ফালগুনি হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর মালিক ইবরাহিম হক ব্যাপারী বলেন, আমাদের তৈরি বুন্দিয়া হালিমসহ সব খাবার কেমিক্যাল ও ভেজালমুক্ত। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দক্ষ কারিগর দ্বারা তৈরি করা হয়। এবার আমরা সুস্বাদু বোরহানি, ছানা পোলাও শাহী মসকট হালুয়া নতুন সংযোজন করেছি, যা কিনতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন রোজাদাররা। তিনি বলেন, আমাদের তৈরি হালিম, বোরহানি, বুন্দিয়া, বুট, ছানাপোলাও ও শাহী মসকট হালুয়া ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে না রেখেই খাওয়া যায়, নষ্ট হয় না। দীর্ঘদিন থেকে আমরা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভেজালমুক্ত খাঁটি ইফতারসামগ্রী সরবরাহ করে আসছি। রোজাদাররা যেন কোনোভাবেই খারাপ ইফতারসামগ্রী না খায় এবং বেশি দামে না কেনেন সেটি নিশ্চিত করেছি।
রংপুরে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি ইফতারের জন্য ফালগুনি হোটেলের তৈরি বুন্দিয়া ও হালিমের কদর সব সময় বেশি থাকে। এখানকার ইফতারসামগ্রীতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয় না। মানসম্মত উপকরণ দিয়ে এখানে ইফতারসামগ্রী তৈরি হয়।


আরো সংবাদ



premium cement