০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১তম বর্ষপূতি আজ

-

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তি আজ। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রায় দুই দশকের চলা সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের আজকের দিনে সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি নামে অভিহিত।

সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর পর কেটে গিয়েছে ২১টি বছর। কিন্তু এখনো এ চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্কের শেষ হয়নি।

বহুল আলোচিত এ চুক্তির ২১ বছর পূর্তিতে পাহাড়ে চলছে নানান কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে সরকার ও জনসংহতি সমিতির আলোচনা সভা, র‌্যালি ও কনসার্ট।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১তম বর্ষপূতি উপলক্ষে রাঙ্গামাটির জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি এবং রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ সভাপতি কিশোর কুমার চাকমার সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, নারীনেত্রী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন।

এদিকে ২ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় পরিষদের সভাকক্ষে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

মহিলা আসন-৩৩ এর সম্মানিত সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা-র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন রাঙ্গামাটি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ রিয়াদ মাহমুদ, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার মো: আলমগীর কবীর।

চুক্তির ২১ বছর পূর্তিতে পাহাড় চলছে নানা বিশ্লেষণ। চুক্তি স্বাক্ষরের দুদশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পাহাড়িদের মধ্যেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। তাদের অভিযোগ, চুক্তির মূল ধারাগুলো আজো বান্তবায়ন হয়নি। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। রয়েছে নানান হতাশা ও বঞ্চনা।

মূলত পার্বত্য অঞ্চলে বিরোধ জিইয়ে রাখার কারণে পাহাড়ে আজো শান্তি আসেনি বলে মনে করেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়। তিনি বলেন, মূল যে অংশগুলোকে ভিত্তি করে চুক্তিটা প্রতিষ্ঠিত সেগুলোর অবস্থা কি তা সহজেই অনুমেয়। এখন যে অবস্থা তাতে আমরা দেখি কেবল সংঘাতের অবসান এবং অস্ত্রধারী যারা জনসংহতি সমিতির নেতা ছিল তাদের অস্ত্র সমর্পনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা। এ দুটো জিনিস ছাড়া চুক্তিকে কেন্দ্র করে কিছু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্ষমতায়ন হয়েছে। কিন্তু চুক্তির মধ্যে অন্যান্য যে মৌলিক যে বিষয়গুলো রয়েছে তার বাস্তবায়ন আমরা দেখছি না।

চাকমা রাজা বলেন, সরকারের ভেতর থেকে কয়েকটি অংশ এখানে চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে পূর্ণাঙ্গভাবে নেই বলে জনগণের ধারনা। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দেখা যায় যে সরকারি দলের যে সমর্থন আছে কিন্তু সরকারের ভেতর থেকে চুক্তিবিরোধী বক্তব্য ও কার্যকলাপ দেখা যায়, যা একেবারে অমূলক। তারপরও নির্বাচনের পর নতুন সরকার আসলে এসব বিষয়ের অবসান হবে এবং তাদের উপর চুক্তির বাস্তবায়নের বিষয় নির্ভর করছে বলে তিনি মনে করেন।

চুক্তির মাধ্যমে যে শান্তি আশা করেছিল মানুষ তা পায়নি। পার্বত্যচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দুপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে পাহাড়ে কাক্সিক্ষত শান্তি ফিরে আসেনি বলে পার্বত্য চুক্তি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি বলে মনে করেন বাঙালি অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত সংগঠনের নেতারা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশা পাহাড়ের মানুষের।


আরো সংবাদ



premium cement