বালিয়াডাঙ্গীতে ১৩৮ স্কুলে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার পরই অকেজো
৫ হাজার টাকার নিম্নমানের ডিভাইস ১৮ হাজার টাকায় সরবরাহ- আবুল কালাম আজাদ বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও)
- ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ১৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার কিছুদিন পরই সবগুলো অকেজো হয়ে গেছে। এতে সরকারের বিপুল অর্থ গচ্চা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেট করে অতি নিম্নমানের মেশিন তিন গুণেরও বেশি টাকায় বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ফান্ড থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে উপজেলার ১৩৮টি বিদ্যালয়ে উপজেলা প্রশাসন নিম্নমানের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সরবরাহ করে। উন্নয়ন পরিকল্পনা ফান্ড থেকে ১৩৮ বিদ্যালয়ের নিজ নিজ দায়িত্বে জুনের মধ্যেই বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার কথা থাকলেও সেই মেশিনগুলো তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরবারাহ করা হয়। অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের মেশিনগুলো শত চেষ্টা করেও আর চালু করা যাচ্ছে না।
অভিভাবকরা জানান, যন্ত্রের সাহায্যে শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করা হবে জেনে খুশি হয়েছিলেন; কিন্তু মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ায় বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা মনিটরিং করতে পারছেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অতুল চন্দ্র বলেন, উপজেলার সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিভাইস থাকলেও তা বর্তমানে অচল। এটি বসানোর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে।
জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমভেদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কাটার সময় শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে গরহাজির থাকেন। আবার বর্ষা মৌসুমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। অনেকে আবার প্রক্সি শিক্ষক (প্যারা শিক্ষক বলা হয়) দিয়ে ক্লাস করিয়ে থাকেন।
সূত্র জানায়, মার্চে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক এনামুল কাদের খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নিজ দায়িত্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন পরিকল্পনা ফান্ড থেকে বায়োমেট্রিক ৮ এর পৃষ্ঠার পর
মেশিন জুনের মধ্যেই কেনার তাগিদ দেয়া হয়; কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেশিনগুলো সরবারাহ করে উপজেলা প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, এ যন্ত্র কেনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সরকারদলীয় নেতাদের পরিচয়ে স্থানীয় একশ্রেণীর সিন্ডিকেটের উদ্ভব হয়। তারা পাঁচ হাজার টাকারও নিচে নিম্নমানের ডিভাইস কিনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ১৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এতে প্রতিটি ডিভাইসে গড়ে ১৩ হাজার টাকা বেশি দাম নিয়ে বিদ্যালয় প্রধানদেরকে গছিয়ে দেয়া হয়। তারা আরো জানান, মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলের অনেক বিদ্যালয় ইন্টারনেট সংযোগ নেই এবং বিদ্যুৎ থাকে না। সেখানে বায়োমেট্রিক হাজিরা খুব বেশি কার্যকর হবে না। আর নিম্নমানের এ সব মেশিন চীন থেকে আমদানি করা। সরকারের অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কারণে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এলাকার সচেতন মহলের দাবি, বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড় হয়ে আসবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন জানান, দেশের বেশির ভাগ এলাকাতেই এখন বিদ্যুৎ আছে। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই দেখে শুনে ভালো যন্ত্রটিই কিনবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা