সরকারি সম্পত্তিতে স্কুলঘর মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থী দিয়ে পিইসি পরীক্ষা
- পিরোজপুর সংবাদদাতা
- ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ দীর্ঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকেই ম্যানেজিং কমিটি গঠন, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের ভর্তি, শিক্ষাদান, শিক্ষক হাজিরাসহ নানা বিষয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত সরকারি সম্পত্তির ওপর বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার সময় কাগজপত্রে বিদ্যালয়ের নামীয় সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করা হয় মাঠের মধ্য থেকে। আর জমিদাতা হিসেবে জমি দান করেন স্থানীয় মৃত উপেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ছেলে নিহার রঞ্জন মণ্ডল। জমিদাতা হিসেবে তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সভাপতিও ছিলেন। কিন্তু এরপর দিনে দিনে বিদ্যালয় পরিচালনার নামে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলে যায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টুটু রানী হালদার ও তার স্বামী বাবুল বড়ালের কাছে। সূত্র মতে, ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু হয় বিদ্যালয়টির, নিবন্ধিত হয় ২০১০ সালে আর শিক্ষার্থী থাকুক বা না থাকুক জাতীয়করণ হয় ২০১২ সালে। সরকারি-বেসরকারি কর্তাব্যক্তিরা বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে পার্শ্ববর্তী একটি পাঠশালা এমনকি এর বাইরে থেকেও শিক্ষার্থী এনে কয়েক ঘণ্টার জন্য একটি পড়াশোনার চিত্র প্রদর্শন করা হয়। চলতি বছরের সদ্যসমাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বড় ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মূলত বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মাত্র একজন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় নিপা মণ্ডলের বিপরীতে কাগজে-কলমে পরীক্ষার্থী দেখানো হয়েছে চারজন। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনই পার্শ্ববর্তী একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাথে যোগসাজশে নাম পরিবর্তন করে ভাড়া করা হয়। জানা যায়, ভাড়াটে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে দু’জন ষষ্ঠ শ্রেণী এবং একজন অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেসের আলী বিশ^াস বলেন, আমি বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে এ তথ্য পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়গুলো আমি নাজিরপুরের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি যে তদন্ত রিপোর্ট দিবেন সেটি পেলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।
নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিকদার আতিকুর রহমান জুয়েল বলেন, ভাড়া করা শিক্ষার্থী দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সরকারি সম্পত্তিতে স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমি অবগত নই। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকার বিষয়ে আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। অন্য সব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটির কোন্দলের কারণে শিক্ষার্থী কম। ক্যাচমেন্ট সমস্যা থাকার কারণে অভিভাবকরা তাদের শিশুদের এ বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়েছে এবং উপবৃত্তি যদি চালু হয় তবে আগামীতে শিক্ষার্থী আসবে। সরকারীকরণের সময় পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বেতন ভাতা চালু হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাধুরী রানী বলেন, আমরা তো বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ঠিকঠাকমতো চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক অনিমা বিশ্বাসের সাথে কথা বলে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি দীর্ঘা এম এল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ভোকেশনাল স্কুলের কর্মচারী হিসেবে কর্মরত মিল্টন রায়ের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে দীর্ঘা এম এল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (যিনি পিইসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন) অশোক কুমার সমাদ্দার বলেন, অভিযোগ সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা