১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


হুড়াসাগর শাখা নদী পুনঃখনন শুরু শাহজাদপুরে ১২ মৌজার প্রায় এক হাজার একর জমির ধান নষ্ট

হুড়াসাগর নদী খনন শুরু হওয়ায় কৃষকেরা কাঁচা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন হনয়া দিগন্ত -

বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনাÑ (ডেল্টা প্লান) ২১০০ অংশ-১ এর আওতায় সিরাজগঞ্জ পাউবোর তত্ত্বাবধানে শাহজাদপুরে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে হুড়াসাগর শাখা-১ নদীর ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে। এ সময় নদী পুনঃখনন করায় উপজেলার ১২টি মৌজার প্রায় এক হাজার একর (তিন হাজার বিঘা) জমির থোড় ও ছড়া বের হওয়া ধানগাছ কৃষকেরা কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে তারা প্রায় ২৫ হাজার টন ধান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অনেক কৃষকই মহাজনের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়ে ধান আবাদ করেছিলেন। এখন দাদনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন এ চিন্তায় তারা দিশেহারা।
জানা যায়, শাহজাদপুরের হাটপাচিলের পূর্বপাড়ার আধা কিলোমিটার দূরে যমুনা নদী থেকে হুড়াসাগর শাখা নদী উৎপত্তি হয়ে গোপালপুর, ভাঙ্গা, সৈয়দপুর, মলকান্দিরসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে নগরঢালায় করতোয়া নদীতে মিলেছে। স্বাধীনতার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড হাটপাচিলে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করায় হুড়াসাগর নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরে পলি ও বালু জমে ভরাট হয়ে নদী ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। ডিএস রেকর্ডে হুড়াসগর শাখা নদী খাস খতিয়ানভুক্ত। নদী পাড়ের স্থানীয় কৃষকরা জমি পত্তনি নেয়ায় এসএ এবং আরএস রেকর্ড তাদের নামে হয়েছে। প্রায় তিন যুগ ধরে এই জমি তারা ভোগদখল করে আসছেন। এ দিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ দাবি করছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮৮-৮৯ সালে হুড়াসাগর শাখা নদী প্রস্থে ১০০ ফুট ও দৈর্ঘে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করে সেই সময় স্থানীয় কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। তবে কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সে তথ্য পাউবো বিভাগ দিতে পারেনি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ অংশ-১ এর আওতায় দেশের ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, মৎস্য চাষ, ভূমি পুনরুদ্ধার ও বনায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজাদপুর উপজেলার করতোয়া নদীর পূর্বপাড় নগরঢালা থেকে কৈজুরির হাটপাচিল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার হুড়াসাগর শাখা নদী পুনঃখনন কাজ করছে। প্রায় ১২ মিটার (৩৬ ফুট) প্রস্থ ও দুই মিটার গভীর করে নদী পুনঃখনন করা হচ্ছে। খননকৃত মাটি অপরিকল্পিতভাবে দুই পাড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টি ও বর্ষায় মাটি ধসে খালের গভীরতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিরাজগঞ্জ পাউবো এই নদী পুনঃখনন কাজ শুরু করায় সৈয়দপুর, মলকান্দি, গোপালপুরসহ ১২টি মৌজার প্রায় এক হাজার একর জমির থোড় ও ছড়া বের হওয়া ধানগাছ কাটা পড়ছে। এতে কৃষকরা ফসল হারিয়ে বিলাপ করছেন। বর্তমানে ছোটমারাচপুর থেকে দুই ভাগে নদী খনন করে পূর্বে গোপালপুর এবং পশ্চিমে নগরঢালার দিকে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্কেভেটর মেশিনের সাহায্যে পুনঃখনন করায় দিনমজুররা কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এলাকার কৃষকরা বাধ্য হয়ে ধানগাছ কেটে নিয়ে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। রক্তে ঘামে ফলানো ফসল হারিয়ে শত শত কৃষক পথে বসেছেন। অনেকেই মহাজনের ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন? এ চিন্তায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
হুড়াসাগর শাখা নদী পুনঃখনন এলাকা শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের পূর্ব কৈজুরির গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ভূমিহীন অখিল মণ্ডলের সাথে কথা হয়। সে একটি বোরো স্কিমের মালিক। তার স্কিমে ৯ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। তিনি নিজে ১০ হাজার টাকায় এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে বোরোর আবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত এক বিঘা জমিতে লিজসহ তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। আর মাত্র এক মাস পরেই ধান ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু নদী পুনঃখননে সে জমির ধান কাটা পড়েছে। স্কিমের অন্য কৃষকরা ক্ষেতের ধান কাটা পড়ায় সেচের টাকা পরিশোধ করছে না। এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তিনি দোকান থেকে বাকিতে ডিজেল তেল কিনে স্কিমের জমিতে পানি সেচ দিয়েছেন। দোকান মালিকের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন। এ চিন্তা তাকে সর্বক্ষণ তাড়া করে ফিরছে।
একই গ্রামের শামীমের দুই বিঘা, হাজী মো: ফজর আলী মোল্লার দুই বিঘা, সাবেক মেম্বার গফুরের সাড়ে তিন বিঘা, সরোয়ারের আড়াই বিঘা, জেন্দার আলীর চার বিঘা, ইউনুস আলীর তিন বিঘা, শহীদ আলীর এক বিঘাসহ অনেকের জমি পুনঃখননের আওতায় পড়েছে। শামীম বলেন, পানি উন্নয়ন বিভাগ জমি অধিগ্রহণ করেছে বলে দাবি করছে, তাবে এ বিষয়টি তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তার বাবা দলিল মূলে জমি খরিদ করে ভোগদখল করে আসছেন। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হুট করে নদী পুনঃখনন কাজ শুরু করায় শত শত কৃষক জমি ও ফসল হারিয়ে এখন পথে বসেছেন। তাদের এক মাস সময় দিলে কষ্টে ফলানো ফসল ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ সে সুযোগ তাদের দেয়া হচ্ছে না।
পূর্ব কৈজুরি গ্রামের বাসিন্দা রহম প্রামাণিকের পরিবারের অবস্থা সবচেয়ে বেশি করুণ। এক সময়ের সচ্ছল এই পরিবারটি ধারদেনা ও জমি বিক্রি করে ছেলে শাহ আলমকে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় ধরা পরে সর্বস্ব হারিয়ে শাহ আলম শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসায় পরিবারটির ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়ে ছয় বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন। এই জমির ধানেই তার সারা বছরের সংসার খরচ চলে। হুড়াসাগর শাখা নদী পুনঃখননে জমি ও ধান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কিভাবে সংসার চলবে, কী করে দাদনের ঋণে টাকা পরিশোধ করবেন এ চিন্তায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম (কবি) মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, ডিএস রেকর্ডে হুড়াসাগর শাখা নদী খাস খতিয়ানভুক্ত আছে। পরে এসএ এবং আরএস রেকর্ডে এসে ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, খাস খতিয়ানভুক্ত জমি কী করে ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়? ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো জমি খনন করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮৮-৮৯ সালে ১০০ ফুট প্রস্থে এবং ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘে হুড়াসাগর শাখা নদীর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেই অধিগ্রহণকৃত জমিতেই পুনঃখনন কাজ চলছে। কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, সে তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
লটারিতে মোটরসাইকেল জিতছে মা, সংসার ভাঙল মেয়ের আমাদেরকে পরকালের জন্য তৈরি হতে হবে : অ্যাডভোকেট জুবায়ের ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরোক্ষ আলোচনা ইরানের দক্ষতা অর্জন করে নিজেদের মানকে উন্নত করতে হবে : আবদুল হালিম বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু মধ্য রাতে, চিন্তিত জেলেরা ভোটে জেতার ৬ মাসের মধ্যেই আজাদ কাশ্মিরকে ভারতের অংশ বানাতে চান যোগী পোরশায় অটোরিকশার ধাক্কায় শিশু নিহত কালশীতে পুলিশ বক্সে আগুন অটোরিকশা চালকদের ২১ কেজির ভোল মাছ সাড়ে ৩ লাখে বিক্রি ভিন্নভাবে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ জানালো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কটিয়াদীতে চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রবীণ ২ নবীনের লড়াই

সকল