২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কবি শরীফ আবদুল গোফরানের পাশে বিসিএ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

কবি, গীতিকার, সাংবাদিক ও শিশুসাহিত্যিক কবি শরীফ আবদুল গোফরান দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। গত বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর অসুস্থ কবির খোঁজ-খবর নিতে তার বাসায় যান বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির (বিসিএ) সভাপতি সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠক আবেদুর রহমান ও সেক্রেটারি সাহিত্যিক ইবরাহীম বাহারী।

এ সময় তাদের সাথে ছিলেন একাডেমির নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পী ও কবি ইব্রাহীম মণ্ডল, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যক একাডেমির প্রচার সম্পাদক হারুন ইবনে শাহাদাত। তারা কবি শরীফ আবদুল গোফরানের আশু রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া করেন এবং বেশ কিছু সময় কাটান।

কবি শরীফ আবদুল গোফরান ১৯৫৫ সালের ৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোর্টের মুরগাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী কেরামত আলী, মাতা বেগম মরিয়ম। ছোট বেলা থেকেই কবি শরীফ আবদুল গোফরান সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। দৈনিক আজাদ পত্রিকার মাধ্যমে তার সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার ‘মুকুলের মাহফিলে’ তার প্রথম লেখা ছড়া ‘সত্য ন্যায়ের ঝান্ডা তোলো’ শিরোনামে ছাপা হয়।

কবি শরীফ আবদুল গোফরান-এর গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া পুরোপুরি শিশুদের জন্যই। তার লেখা সাবলীল ও গতিময়। তার কবিতায় ছন্দ, গল্পের রস, বৈশিষ্ট্য স্পষ্টত: জলে উঠা দ্যুতি। যে কাউকে সহজেই মুগ্ধ করার ঢঙও তার লেখায় স্পষ্ট। তিনি যা লেখেন তা ছোটদের উপযোগী হয়েও সকলের।

কবি শরীফ আবদুল গোফরান শৈশব থেকে শুরু করে অদ্যবধি প্রবহমান। সেই প্রবহমানতার অনবদ্য সৃষ্টি তার সাহিত্যকর্ম। অনেকের মতো ছড়ার হাত ধরেই তার লেখালেখির জগতে প্রবেশ। তার প্রথম ছড়াগ্রন্থ ‘ছড়ায় ছড়ায় বৃষ্টি ঝরে’। প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। তবে তিনি ছড়া নিয়ে থেমে থাকেননি। ছড়ার পাশাপাশি সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে ছিল তার পদচারণা। কবিতা, গল্প নাটক, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী, জীবনী গ্রন্থ ইত্যাদি বিষয়ে তার অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার পাতায়। তার লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে নাওনদী নীল আকাশ, ছড়ায় ছড়ায় বৃষ্টি ঝরে, ফুলে ফুলে প্রজাপতি, সুবাসিত ভোর, বড় মানুষের গল্প, ছোটদের ফররুখ, ষড়ঋতুর বাংলাদেশ, সবার প্রিয় সানাউল্লাহ নূরী, ভাষা আন্দোলন, বাংলাভাষা সংরক্ষণের ইতিহাস ও কেঁপে ওঠে মায়াবি চাঁদের মুখ।

সাংবাদিকতা দিয়েই কবি শরীফ আবদুল গোফরানের কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সাপ্তাহিক অগ্রপথিক, পাক্ষিক ইসলামিক সলিডারিটি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা ও শিশু কিশোর পত্রিকা সবুজ পাতায় বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শরীফ আবদুল গোফরান মাসিক ফুলকুড়ি পত্রিকায় বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে দীর্ঘ ২১ বছর দৈনিক সংগ্রামের সহ-সম্পাদক এবং এক যুগেরও অধিক নীল সবুজের হাট বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কবি শরীফ আবদুল গোফরান বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক সংস্থার সাথে যুক্ত আছেন। এর মধ্যে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য, বাংলা একাডেমির সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সদস্য ও বাংলা সাহিত্য পরিষদের সদস্য।

তিনি তিন সেশন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিস সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। দুই সেশন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
তাছাড়া তিনি কিশোর থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মতিঝিল আইডিয়াল বিজ্ঞান চক্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, অভিনয় নাট্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মুক্তাঙ্গন সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নাবিক সাহিত্য সংসদের সভাপতি, ঢাকা সাহিত্য সমাজের সভাপতি, নাঙ্গলকোর্ট ফোরাম ঢাকার সভাপতিসহ অসংখ্য সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠনের সাথে কাজ করেন। তাছাড়া তিনি দীর্ঘ দিন বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন।

কবি শরীফ আবদুল গোফরান তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-শব্দশীলন একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমি পুরস্কার, বাংলাদেশ সাব-এডিটরস কাউন্সিল সম্মাননা, নাঙ্গলকোর্ট নজরুল সংসদ সাহিত্য পুরস্কার, নবাবজাদা সৈয়দ হাসান আলী সিএনসি পদক, ঢাকাস্থ নাঙ্গলকোর্ট ফোরাম সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকাস্থ নাঙ্গলকোর্ট ছাত্র ফোরাম সংবর্ধনা ২০১৪ লাভ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement