৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রাজধানীতে জমে উঠেছে ছবিমেলা

-

রাজধানীতে চলছে ১০ দিনব্যাপী দশম ছবি মেলা। এবারের ছবিমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘স্থান’। এই আয়োজন চলবে মার্চ ৯ পর্যন্ত। এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলার দশম আয়োজন শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ধানমন্ডির পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ছায়ানটে গিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাই, যুক্তরাষ্ট্রের রুবিন মিউজিয়াম অব আর্টের কিউরেটর বেথ সিট্রন, নেপালের লেখক ও সম্পাদক কুন্দা দীক্ষিত। এ বছর ছবিমেলা আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী, কৃষিবিজ্ঞানী ও লেখক প্রয়াত নওয়াজেশ আহমেদকে। ছবি মেলায় ছবির ভাষায় দর্শক জানছেন ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সমকালীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি, তাদের সমাজসংস্কৃতি। ছবি দেখে উপলব্ধি করতে পারছেন বিদেশীদের প্রকৃতি, পরিবেশ, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র এবং বিভিন্ন বয়সের মানুষের চিন্তার তফাত। রিকশাভ্যানে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহরের সর্বত্র, আনাচেকানাচে যাচ্ছে তৃণমূল মানুষের কাছে।
ছবিমেলার এবার ২১টি দেশের ৪৪ জন শিল্পীর কাজ নিয়ে ৩৩টি প্রদর্শনীর আয়োজন রয়েছে। থাকছে আটটি কর্মশালা। উৎসবের সব প্রদর্শনীস্থলই ধানমন্ডি এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থিত। পান্থপথে নির্মাণাধীন দৃক-পাঠশালা ভবনে উৎসবের মূল প্রদর্শনীস্থল এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য গ্যালারি হিসেবে আছে ধানমন্ডি ও পান্থপথে অবস্থিত দৃকের দুটি গ্যালারি, গ্যেটে ইনস্টিটিউট, জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ, বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা।
উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের কিংবদন্তি আলোকচিত্রী প্রয়াত রশীদ তালুকদারের কাজ নিয়ে ‘রশীদ তালুকদার (১৯৩৯-২০১১) : আ লাইফস ওয়ার্ক’।
সবকিছু মিলিয়ে ধানমন্ডি এলাকা জমে উঠেছে ছবির মেলার আয়োজন। গতকাল সোমবার ছবিমেলার পঞ্চম দিন। উৎসব পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, ছবিমেলা বরাবরই মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে, বিশেষ করে তাদের বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও তাই করবে। সংখ্যাগুরু বিশ্বের (এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ইত্যাদি) স্বল্প পরিচিত শিল্পীদের পরিচিতি ও উপস্থিতিকে শক্তিশালী করে তাদের পরিবর্তন ও সাফল্যের পথে কাজ করার জন্য সাহায্য করা ছবিমেলার লক্ষ্য।

আলোকচিত্রই ইতিহাসের সাক্ষী
গত শনিবার ছবিমেলায় আলোকচিত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন ভারতের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাই। রাজধানীর গ্যেটে ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের ভেতরের সব আসন নির্ধারিত সময়ের আগেই পূর্ণ। ঢোকার অপেক্ষায় বাইরে দাঁড়িয়ে অনেকে। সবাই এসেছেন বিশিষ্ট ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাইয়ের বক্তব্য শুনতে। রঘু রাই মঞ্চে উঠতে উঠতে মিলনায়তনে তিল ধারণের জায়গা থাকল না।
রঘু রাই নিজের ও বর্তমান সময়ের আলোকচিত্র নিয়ে কথা বললেন। ভালো আলোকচিত্রী হওয়ার নানা পরামর্শও দেন। জীবন নিয়ে নিজের দর্শনের কথাও তুলে ধরেন। এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলার তৃতীয় দিন গত শনিবার দিনের শেষ আয়োজন ছিল রঘু রাইয়ের সঙ্গে আলোচনা। তিনি শ্রোতাদের কাছে জানতে চান, ছবি তোলার উদ্দেশ্য কী? নিজেই উত্তর দেন, সময় ও মূল্যবান মুহূর্ত, বড় ঘটনা, দৈনন্দিন জীবনকে ধরে রাখা। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগে আধুনিক ক্যামেরা, লেন্স ব্যবহার করে সবাই ফটোগ্রাফার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন রঘু রাই। তিনি বলেন, বিষয়বস্তু শক্তিশালী হলে একটি আলোকচিত্রই ইতিহাসের বড় সাক্ষী হতে পারে। তিনি আরো বলেন, আগেই ছবির বিষয়বস্তু নির্ধারিত করে রাখা যাবে না। পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্তু থেকে বারবার ছবি তোলাকে তিনি সৃজনশীলতাবিরোধী বলেই মনে করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাণভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া জনস্রোতকে ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকার যে তরুণ আলোকচিত্রী, তিনিই রঘু রাই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, উদ্বাস্তু, পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ ইত্যাদি নিয়ে কাজের জন্য ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭২ সালে। একাত্তরের ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকেও তিনি পান ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’।


আরো সংবাদ



premium cement