ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে নারী সহকর্মীদের আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠা নাটোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. গোলামুর রহমানকে ওএসডি করা হয়েছে। সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গোলামুর রহমানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে আদেশ জারি করা হয়েছে। অপর আদেশে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব মো. শাহরিয়াজকে নাটোরের নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গোলামুর রহমান শিপিং কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজারের পদ থেকে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে মাস দেড়েক আগে নাটোরের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কাজে অসহযোগিতা এবং নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ উঠতে থাকে।
এসময়ে তার কাছে আসা সুন্দরী নারীদের প্রতি একটু বিশেষ দৃষ্টি দেয়াটা অধিনস্তরা বুঝতে পারলেও প্রতিবাদ করার সাহস পান নাই। এরই শিকার হন নাটোর জেলা প্রশাসনে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসক স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই কর্মকর্তাকে ফেসবুকে ম্যাসেঞ্জারে বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্ট পাঠালে চাকুরীর স্বার্থে তিনি তা গ্রহণ করে সৌজন্য রক্ষা করে সম্মানের সাথেই যোগাযোগ রাখায় তাকে নোংরা প্রস্তাব দেন। এসময় ওই নারী কর্মকর্তা বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগপত্রে তিনি জানান, মুহম্মদ গোলামুর রহমান নাটোরে যোগদানের তিনদিনের মাথায় তাকে (নারী কর্মকর্তা) সংস্থাপন শাখায় বদলী করে সকল কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথি নিয়ে একান্তে কথা বলতে ডিসির বাংলো বা সার্কিট হাউজে যেতে বলতেন। তিনি অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজের জন্য তাকেই কাছে ডাকতেন।
তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় জেলা প্রশাসক পূজার সময় ছুটি আটকিয়ে দিয়ে তাকে নাটোরে থাকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরই মধ্যে তাকে ফেসবুক একাউন্ট এর মাসেঞ্জারে এবং গভীর রাতে কারণে-অকারণে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কু-প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করতে শুরু করেন। তিনি (নারী কর্মকর্তা) অত্যন্ত বিনয় ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তাকে এড়িয়ে চলেছেন।
গত ১৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসক মুহম্মদ গোলামুর রহমান তাকে চরম খারাপ প্রস্তাব দিলে লজ্জায় কাউকে বলতেও পারেন নাই। এরই মধ্যে ওই নারী কর্মকর্তাকে খুলনায় বদলী করা হলে জেলা প্রশাসক তার ওই বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
পরে ২৪ অক্টোবর তিনি লিখিত ভাবে ঢাকায় জনপ্রশাসনের এপিডি অনু শাখার অতিরিক্ত সচিব বরাবর প্রমানাদি সহ বিস্তারিতভাবে জানিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়ে আবেদন করলে তার পরপরই তাকে আগের করা বদলীর আদেশ অনুযায়ী অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়াও জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান গত ৭ নভেম্বর নাটোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশে পুরাতন ডিসি বাংলো পরিদর্শনে গেলে সেখানে কর্তব্যরত মাস্টার রোলের কর্মচারী মোতালেব হোসেন গেটের চাবী আনতে দেরি করায় জেলা প্রশাসক নিজেই তাকে শারীরিক ভাবে মারপিট করে তার এবং আর এক কর্মচারী আব্দুল আজিজের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে তাদের অন্যত্র বদলীও করে দেন।