কথা ছিল, সংবাদ সম্মেলনটা শেষ করে জুমআ নামাজ আদায় করতে ঠিক দেড়টা নাগাদ পার্শ্ববর্তী আল নুর মসজিদে যাবেন বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনটা দীর্ঘায়িত হয়েছিল বেলা ১টা ৪০ পর্যন্ত। হয়তো সেটাই রক্ষা করেছে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে।
সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই জুমআ নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে মসজিদের ভিতর থেকে মধ্য বয়সের এক নারী রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে এসে সতর্ক করে দেন তামিমদের। সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে তামিমরা নিরাপদে থাকলেও নামাজরত মুসল্লিদের ওপর চালানো হামলায় মসজিদে বয়ে গেছে রক্তের বন্যা। মসজিদ আল নুর ও পার্শ্ববর্তী লিনউড মসজিদে করা এ হামলায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় নিন্দা ও শোকে মুহ্যমান সারা বিশ্ব। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও জড়িত থাকায় ক্রিকেট বিশ্বের পরিচিতি মুখরাও নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন সবার সামনে। বাদ যাননি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বুম বুম খ্যাত ড্যাশিং ব্যাটসম্যান শহীদ আফ্রিদিও।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিনিয়র সদস্য তামিম ইকবালের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্বই রয়েছে আফ্রিদির। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস এবং পিএসএলে পেশোয়ার জালমির হয়ে একসাথেই খেলেছেন তারা। তাই তো ঘটনার পরপরই তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই তারকা। আর এক টুইট বার্তায় নিজেই একথা জানিয়েছেন আফ্রিদি।
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে দেয়া এক বার্তায় শহীদ আফ্রিদি লিখেছেন,‘ভয়াবহ দুর্ঘটনা ক্রাইস্টচার্চে। আমি সবসময়ই নিউজিল্যান্ডকে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ একটি দেশ হিসেবেই দেখেছি। সেখানে মানুষরাও খুব বন্ধুপরায়ণ। আমি তামিমের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এবং স্টাফরা নিরাপদে আছে এটাই বড় পাওয়া। উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বের এক জোট হওয়া উচিৎ। ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করা উচিৎ। হামলায় নিহতদের জন্য দোয়া। আল্লাহ সহায় হন।’
আরো পড়ুন : মসজিদে হামলাকারী একজন অস্ট্রেলীয় সন্ত্রাসী : প্রধানমন্ত্রী মরিসন
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারী একজন অস্ট্রেলীয় চরমপন্থী ও ডানপন্থী সন্ত্রাসী। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। একজন সহিংস উগ্রবাদী সন্ত্রাসীর এ হামলার ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো জায়গা নেই। হতাহতদের প্রতি সমবেদন ও শোকের বহি:প্রকাশ হিসেবে তিনি জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নুর-এ নামাজরত মুসল্লিদের ওপর হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণকারী সন্ত্রাসী, উগ্রবাদী ও চরমপন্থী বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেছেন। ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, এই হামলার সঙ্গে তাদের দেশের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা, অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী তা তদন্ত করে দেখছে। এর বাইরে কোনো বিস্তারিত তথ্য তিনি দিতে অস্বীকার করেছেন।
হামলায় হতাহতদের স্বজন ও কিউদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা কেবল মিত্রই না, আমরা একটি পরিবার এবং আমরা অংশীদার।
এর আগে খবরে বলা হয়, ক্রাইস্টচার্চে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৪৯ মুসল্লিকে হত্যা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, একটি আধা স্বয়ংক্রীয় শর্টগান ও রাইফেল দিয়ে সাউথ আইল্যান্ডে আল নুর মসজিদে অন্তত ৫০টি গুলি ছোড়েন ২৮ বছর বয়সী এই যুবক।
সামাজিক যোযোগমাধ্যম টুইটারে হামলাকারী নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রাফটন থেকে এসেছেন। এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ার সময় এই হামলার দৃশ্য মসজিদের ভেতর থেকে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করেন এই শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী।
শুক্রবার জুমআর নামাজ পড়ার সময় মুসল্লিদের ওপর এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত এক নারীসহ চার ব্যক্তিকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। অভিযুক্তদের একজন আটকের সময় সুইসাইড ভেস্ট পরা অবস্থায় ছিলেন।
এদিকে মসজিদে হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটনার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ৮৭ পাতার ইশতেহার প্রকাশ করেন শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর আভাস আগেই দিয়েছিলেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা