ঈদ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত গৃহিণীরা
- মো: আবদুস সালিম
- ০৩ জুন ২০১৯, ০০:০০
ঘর-সংসার নিয়ে গৃহিণীদের প্রায় সব সময়ই কমবেশি কর্মব্যস্ত থাকতে হয়। বলা যেতে পারে, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন তারা একটু বেশিই ব্যস্ত। দীর্ঘ এক মাস রোজার পর ঈদও প্রায় এসে গেছে। রোজার মাসে সাহরি, ইফতারসহ অন্যান্য সময়ের খাবারের আয়োজন করতে গিয়ে দিনের অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে যায়। আর ঈদুল ফিতর চলে আসা মানে রোজার নানা আয়োজনের পাশাপাশি ঈদুল ফিতর পালনের প্রস্তুতি।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁন হাউজিংয়ের বাসিন্দা মাসুমা সুলতানা নন্দা বলেন, সংসারে ছোট ছেলেমেয়ে থাকা মানে সাংসারিক কাজে বেশি ব্যস্ত থাকা। রোজার মাস শুরু হওয়া মাত্র আমার দুই ছেলেমেয়ে নতুন জামাকাপড়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রায় চার বছর বয়সের মেয়ে নওরিন ঈদ সম্বন্ধে তেমন ভালো না বুঝলেও প্রায় ১২ বছর বয়সী ছেলে নিসর্গ যেন সবই বোঝে। যেমনটি আমরা একসময় বুঝতাম। কয়েক বছর ধরে ও বলে দিচ্ছে কী ধরনের পোশাক, জুতা ইত্যাদি কিনতে হবে এবং কোন মার্কেট থেকে তা। এর একটু ব্যতিক্রম হলে যেন ওর ঈদের পুরো আনন্দটাই মাটি। আমিও মনে করি, ওদের চাহিদার ধরন যদি ভালো বা রুচিশীল হয় তবে ওদের ইচ্ছার ওপরও বেশি গুরুত্ব দেই। তাতে ওরা যেমন বেশি আনন্দ পায়, ওদের আনন্দ দেখে আমারও বেশ ভালো লাগে। ঈদে মুখরোচক কিছু যে খাবার রান্না করতে হবে তা কয়েক দিন আগেই কিনে রেখেছি। ওদের বাবাকে নিয়ে পোলাও চাল, সেমাই, চিনি, লবণ, মসলা ইত্যাদি কিনেছি। এসব ব্যাপারে ওদের বাবা আমাকে সহযোগিতা করে বলে একটু ভরসা পাই, খাটাখাটনি বা পরিশ্রমও কম হয়। মাসুমা সুলতানা বলেন, ঈদের দিন আমাদের বাসায় প্রচুর অতিথি আসেন। তাদের আপ্যায়ন করতে হয়। আর সে কারণেই রান্নাবান্নার প্রতি একটু বেশিই নজর দিতে হয়। প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা বলেন, আমার হাতের রান্না করা খাবার নাকি বেশ মজা হয়। হয়তো সে কারণেও অতিথিদের আগমন বেশি। এখন আর আগের মতো কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। তাই সব দিক আমি একাই সামাল দেই। তাতে অবশ্য একটু সমস্যাই হয়। তবে গুছিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করি বলে ঝামেলা কোনো রকমে সামাল দিতে পারি। কাজের শেষে ঠিকই আনন্দ লাগে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের সেনপাড়ার গৃহিণী লায়লা বেগম বয়সে প্রবীণ হলেও ঈদের সময় তার ব্যস্ততাও যেন বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘তিন ছেলেমেয়ে বিয়ে দিয়ে আমি এখন আর আগের মতো ব্যস্ত থাকি না, বয়সও বেড়েছে। বয়সের কারণে কিছু রোগব্যাধিও হয়েছে। তার পরও ছেলেমেয়ে নাতিনাতকররা তো আছে। তবে তিন ছেলেমেয়ের দু’জনই সপরিবারে বিদেশে থাকে। এক মেয়ে আছে ঢাকার উত্তর বাড্ডায়। মাঝে মধ্যে ওরা ঈদের আগেই চলে আসে আমাদের মিরপুরের বাসায়। তাতে মনটায় বেশ ভালো লাগে। নাতিন চটপটি, ফুসকা ইত্যাদি একটু বেশিই পছন্দ করে। সবাই মিলে এগুলো বাসায়ই তৈরি করি। এসব খেতে আমারও বেশ মজা লাগে। মিষ্টি জিনিস এখন তেমন ভালো লাগে না। কারণ বয়স বেড়েছে না? ঈদের দিনে ওই মেয়েকে নিয়ে পোলাও, গোশত ইত্যাদি রান্না করে ফেলি। সে কারণে হাটবাজার আগেই করে রেখেছি। গোশত, সালাদ ইত্যাদি কাঁচামাল কিনব ঈদের আগের দিন। বাসার কাপড়-চোপড় ধোয়ার কাজও অনেকটা সেরে ফেলেছি সবার সহযোগিতায়। লায়লা বেগম বলেন, আমি একসময় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম। তখন পেশাগত কাজের পাশাপাশি সংসারের কাজকর্ম করতাম। তাতে ছেলেমেয়েরা আমাকে সহযোগিতা করত। তা দেখে আমার বেশ ভালো লাগত। এ জন্য ওদের আমি ঈদের দিনে সালামি দিতাম। এখন ওরাই আমাকে সালামি দেয় আর বলে, তোমার বয়স হয়েছে, এখন আমাদের সালামি নেয়ার বয়স নেই, তাই মা তোমাকে সালামি দেই। বুঝি, তুমি তাতে বেশ খুশিও হও।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা বোশরা বেগম বলেন, আমাদের পারিবারিক তথা সামাজিক পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় বা মজবুত রাখে ঈদ। ঈদে কেনাকাটা, অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি বিষয় শুধু আনন্দেরই নয়, এক ধরনের দায়িত্বও। মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না। মানুষ মানুষের সাথে মিশবে, একজন আরেকজনের ভালোমন্দ বুঝে সেই অনুযায়ী কাজ করবেÑ এমনটিই আমাদের শিক্ষা দেয় সুস্থ বা ভালো সমাজ। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটি হলো, দরিদ্রদের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ওদের চোখের সামনে দিয়ে সামর্থ্যবানেরা নতুন দামি কাপড় পরে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য মানে সমাজে সামাজিক বৈষম্য দৃশ্যমান হওয়া, যা মোটেই কাম্য নয়। জাকাত, ফিতরা ইত্যাদি সঠিকভাবে দেয়া ছাড়াও তাদের প্রতি সব ধরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করতে হবে আমাদের। তাহলেই আমরা সুস্থ সমাজ আশা করতে পারি।