১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


অসহায় জাহানারার পাশে কেউ নেই

-

পঞ্চগড়ে স্বামী নির্যাতিতা অসহায় জাহানারা তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জেলার আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের কিসমত রসেয়া গ্রামের দরিদ্র সুটমিয়ার মেয়ে জাহানারা বেগমের সাথে ঠাকুরগাঁও জেলার দেবীপুর ইউনিয়নের শোল্টহরি গ্রামের নাসির উদ্দীনের ছেলে মকবুল হোসেনের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় ১৯৯৮ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে। সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে ভাড়া বাসায় তাদের সংসার জীবন শুরু হয়। এর কিছু দিন পরই চলতে থাকে যৌতুক নিয়ে অত্যাচার ও শারীরিক নির্যাতন। বড় ছেলে ইমরান যখন জন্মগ্রহণ করে তখন বাবা হিসেবে মকবুল কোনো ভূমিকা রাখেনি। এমনকি ছেলেকে একনজর দেখতেও আসেনি। এভাবে কেটে যায় দুই বছর। ক্রমেই ইমন ও ইসাদ নামে আরো দুই সন্তানের জননী তখন জাহানারা। পান থেকে চুন খসলেই চলে শারীরিক নির্যাতন। জাহানারা জানান, ভাত রাঁধতে দেরি হওয়াতে এক দিন তার স্বামী মকবুল লোহার রড দিয়ে বেদম মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেন। মেরে ফেলার জন্য আমার মাথায় আঘাত করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। প্রতিবেশীরা আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে আমি হাসপাতালে বিছানায় হাত-পায়ে প্লাস্টার ও মাথায় ১৪টি সেলাই নিয়ে ব্যথায় কাতরাতে থাকি। দীর্ঘ দিন হাপাতালে চিকিৎসা চলাকালে মকবুল স্ত্রী জাহানারার খোঁজ নিতেও আসেনি বলে জানান তিনি। সুস্থ হয়ে ভাড়া বাসায় ফিরে জাহানারার জীবন সংগ্রামের আরেক অধ্যায় শুরু হয়। স্বামী মকবুলের খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, সাবিনা ও আছমা নামের আরো দুই মহিলাকে মকবুল বিয়ে করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গোপনে তাদের সাথে বসবাস করে। এ নিয়ে স্বামীকে প্রশ্ন করলে সন্তানদের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন করে। এর কিছু দিন পর ওই দুই মহিলাকে টাকা দিয়ে তালাক দিয়ে দেয়। দেশের বাড়ি পঞ্চগড়ে ঈদে বেড়াতে এলে আমেনা নামে এক মহিলার প্রেমে পড়ে মকবুল। শুরু হয় সংসারে চরম অশান্তি। দাম্পত্য জীবনে জাহানারা নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে মকবুলের সাথে সংসার করে এলেও ঠিকমতো সংসারের খরচের টাকা তিনি পেতেন না। পর নারী আসক্ত মকবুল তাকে তালাক দেয়ার জন্য নানা হুমকি দিতে থাকে। তিন সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে স্বামীর সংসারে পড়ে থেকে অনেকটা নিরূপায় হয়ে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালে জাহানারা বাদি হয়ে স্বামী মকবুলের নামে মামলা করেন। দীর্ঘ দিন মামলা চলার পর ২৭ নভেম্বর ২০১৭ মকবুল বাদি হয়ে স্ত্রী জাহানারাসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি চুরির মামলা করে বলেও জানান জাহানারা। চুরির মামলা দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার দায়ের করা মামলা তুলে নেয়ার জন্যই তার স্বামী মকবুলের এই অপকৌশল। তিনি আরো জানান, আমিনা বেগমকে বিয়ে করার জন্য মকবুল তাকে একতরফা তালাক দেয়। এর পর আমেনাকে বিয়ে করে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও শোল্টহরি নিয়ে উঠায়। অভিযোগের বিষয়ে মকবুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার বর্তমান স্ত্রী আমেনা বেগম ফোন রিসিভ করে জানায়, আমার স্বামী মকবুল আমাকে বিয়ে করেছে বছর দুয়েক আগে। এখন আমি তার সন্তানের মা হতে চলেছি। জাহানারার বিষয়ে সে আরো জানায়, সে যদি এতই ভালো তবে কেন এত বছর স্বামীকে ধরে রাখতে পারেনি। মকবুল আমাকে বিল্ডিং করে দিয়েছে এবং প্রতি মাসে যা আয় করে খরচের টাকা রেখে বাকি সম্পূর্ণ টাকা আমাকে বিকাশ করে পাঠায়। জাহানারা নিজেই একজন খারাপ প্রকৃতির মহিলা বলেও সে জানায়। এ ব্যাপারে জাহানারার প্রতিবেশী সমাজসেবক জহিরুল ইসলাম জানান, দেবীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেল হোসেনের নেতৃত্বে মকবুল-জাহানারার বিষয়টি সমাধানের জন্য আপসের জন্য বসেছিলাম। বৈঠকে জাহানারার দাবি ছিল পাঁচ লাখ টাকা দিলে সে মামলা তুলে নেবে। আর মকবুল এক লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল। টাকার পরিমাণে ব্যাপক ব্যবধান থাকায় সমাধান ভেস্তে যায়। তিনি মকবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ অবস্থায় অসহায় জাহানারা নারীবাদী সংগঠনগুলোর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
খাদ্য মূল্যস্ফীতির চক্রে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রিতে মজুরি ৬ শতাংশ ফ্রান্সে কারা কর্মকর্তাদের হত্যা করে প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই নিউ কালেডোনিয়ায় সহিংসতার পর কারফিউ, বন্ধ বিমানবন্দর থাইল্যান্ডের কারাগারে অনশনে থাকা তরুণীর মৃত্যু ভারতীয় পত্রিকার রিজার্ভ চুরির খবর মিথ্যা : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গোক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট, যুবলীগ নেতা গ্রেফতার রাফা ক্রসিং বন্ধের জন্য মিসরকে দায়ী করল ইসরাইল দেশের মাটি ধরে রাখাই এখন অনেক কঠিন : কিয়েভ কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ডোনাল্ড লু'র সফর নিয়ে আ'লীগ ও বিএনপিতে এত কথাবার্তা কেন?

সকল