২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা করাকে ঘৃণা করেন মেলানিয়া ও লরা বুশ

পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা করাকে ঘৃণা করেন মেলানিয়া ও লরা বুশ - সংগৃহীত

মার্কিন প্রশাসনের একটি বিতর্কিত অভিবাসন নীতির সমালোচনা করেছেন দেশটির সাবেক ও বর্তমান দুই ফার্স্ট লেডি। বিতর্কিত ওই নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করেছে এরকম পরিবারগুলো থেকে বাবা-মা ও শিশুদের আলাদা করে দেয়া হচ্ছে। এই নীতির সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী লরা বুশ।

স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন ফাস্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বলেছেন, পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা করে দেয়াকে আমি ঘৃণা করি। দরকার হলে এই আইনের পরিবর্তন করা হোক। 

অবৈধ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ ঘোষণার পর এমন বিরল প্রতিক্রিয়া দেখালেন মেলানিয়া।

এদিকে সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ ট্রাম্পের এই বিতর্কিত নীতির নিন্দা জানিয়েছেন। এ নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধও লিখেছেন লরা বুশ। তিনি লিখেছেন, বাবা-মার কাছ থেকে সন্তানকে আলাদা করা নির্মম, অনৈতিক ও হৃদয়বিদারক। রুপান্তরিত বাক্স স্টোরে  শিশুদের গুদামজাত করা বা তাদের মরুভূমির মধ্যে তাঁবুর শহর বানানোর ব্যবসায় থাকা উচিত নয় আমাদের সরকারের।

পরিবার থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেশকিছু ছবি অনলাইনে প্রকাশ পেয়েছে। ওইসব ছবির দিকে ইঙ্গিত করে লরা বুশ বলেন, এই ছবিগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার জাপানিজ-আমেরিকান বন্দীশালার কথা মনে করিয়ে দেয়। আর আজকের যুগে ওই বন্দিশালার ঘটনাগুলোকে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাকর অধ্যায়গুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গত ৬ সপ্তাহে আমেরিকার ‘জিরো টলারেন্স অভিবাসন নীতি’-র কারণে অন্তত ২ হাজার মানুষকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক যারা আশ্রয়ের আশায় মার্কিন সীমান্ত পার হবার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের অনেককেই কারাগারে রাখা হয়েছে। এ কারণে বহু শিশুই এখন তাদের বাবা-মা থেকে আলাদা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে উদ্বিগ্ন মেলানিয়া ট্রাম্প।

মেলানিয়ার মুখপাত্র স্টিফানি গ্রিজহ্যাম একটি বিবৃতিতে বলেন, নাবালকরা তাদের পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এটি মেলানিয়ার একেবারে পছন্দ নয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিবাসন প্রক্রিয়ার সফল সংস্কার চান। ট্রাম্প-পত্নী পরিবার-বিচ্ছিন্ন শিশুদের বেশ কয়েকটি ছবি দেখেছেন। সীমান্তে আশ্রয় প্রার্থী অভিবাসীদের থেকে সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাটি ওর কাছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। তবে অভিবাসন নীতি নিয়ে দু’পক্ষই যাতে আলোচনায় বসেন, এই নীতি সংস্কার নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন এমনটাও চান মেলানিয়া।

আর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এসব শিশুদের ডিটেনশন সেন্টার, ওয়ারহাউজ ও সুপারমার্কেটে রাখা হয়েছে। সমালোচকরা সরকারের বিতর্কিত এই নীতিকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন।

অন্যদিকে পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা করার এই নীতির জন্য দায়ভার উল্টো ডেমোক্রেটদের ওপরই চাপিয়েছেন ট্রাম্প। শনিবার এক টুইট বার্তায় তিনি দূরত্ব মিটিয়ে একটি নতুন আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। তবে সমালোচকরা বলছেন, গত মাসে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা করার এই নীতি ঘোষণা করেন।  

পূর্ববর্তী অভিবাসন নীতি অনুযায়ী মেক্সিকো থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় প্রথম বার প্রবেশ করলে যারা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদেরই আটক করা হত। পরিবর্তিত অভিবাসন নীতিতে যারাই অবৈধভাবে মেক্সিকো-আমেরিকা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছে, তাদের প্রত্যেককেই আটক করা হচ্ছে। 

হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে অভিবাসী নাবালকরা। মার্কিন প্রশাসনের তরফ থেকে যদিও এই শিশুদের বয়স নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। ওদিকে, অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিরুদ্ধে নিউ জার্সি ও টেক্সাসে বিক্ষোভ হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের আটককেন্দ্রের সামনে ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতার নেতৃত্বে রবিবার (১৭ জুন) এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে  যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় তারা।

শুধু ডেমোক্র্যাটরাই নয়, কতিপয় সংস্কারপন্থী রিপাবলিকানও ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র বিরোধী। অভিবাসন প্রত্যাশীদের সন্তানদের তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন না করতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শনিবার এ নীতি নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য চেয়ে হোয়াইট হাউসকে চিঠি লিখেছেন সিনেটর সুসান কলিনস ও জেফ ফ্লেক। রবিবার সিবিএস-এর ফেস দ্য নেশন অনুষ্ঠানে কলিন্স বলেন, ‘এসব শিশুকে তাদের মা-বাবা থেকে আলাদা করাটা আমাদের আমেরিকান মূল্যবোধের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।


আরো সংবাদ



premium cement