২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চমক

-

মধুমিতা এক্সপ্রেস নামক দ্রুতগামী বাসটি মেঘনা সেতু পার হলো। মোতাহার বাসের জানালা দিয়ে আশ্চর্য হয়ে দেখছে আজ পথে কোনো জ্যাম একেবারে নেই।
জ্যামকে খুব ভয় মোতাহারের। জ্যামের ভয়ে আজকাল শহর থেকে গ্রামে যায় না মোতাহার। কিন্তু ডালিয়ার বিশেষ অনুরোধে আজ সে গ্রামে যাচ্ছে। কত অনুনয় গলায় স্ত্রীকে বলেছে, ‘বৃহস্পতিবার অফিসটা করে আসি? শুক্র আর শনিতো এমনিতেই সরকারি বন্ধ।’
কিন্তু ডালিয়াকে বোঝানো যায় না। সে মধুমাখা গলায় বলে, ‘না গো না। তুমি বসকে বলে ছুটি নাও। বাড়িতে আসো। তোমার জন্য চমক আছে।’
চমকের কথা শুনে কৌতূহল বাড়ে মোতাহারের। উৎসুক গলায় জানতে চায়, ‘কিসের চমক গো?’
ডালিয়া চমকের কথা অগ্রিম বলতে নারাজ। আহ্লাদে বলে, ‘উঁহু। এখন নয়। তুমি আগে বাড়ি আসো। তার পর দেখবে চমক।’
মোতাহার আর কথা বাড়ায় না। চমক দেখার কৌতূহলে সে মনে মনে উত্তেজিত হয়ে অবশেষে বসের কাছ থেকে বৃহস্পতিবারের ছুটিটা নিয়ে বাড়ি রওনা দেয়।
ডালিয়া মোতাহারের দাম্পত্য জীবনের এখন পাঁচ বছর চলছে। এখনো ওরা সন্তানের মুখ দেখেনি।
স্ত্রী হিসেবে ডালিয়া অতি সুন্দরী হলেও সংসারি হিসেবে অতি অলস। কৌশল করে সে ঠিকই স্বামী মোতাহারকে দিয়ে সংসারের খুঁটিনাটি খাটুনি খাটিয়ে নেয়।
সকালে হাঁড়ি পাতিল ধোয়া, ঘরদোর ঝাড়– দেয়া, টয়লেটের কমোড ক্লিন করা, ঘরের ফ্লোর মোছা, এমনকি রাতে মশারি টানানোর কাজটাও ডালিয়া মোতাহারকে দিয়ে সুকৌশলে করিয়ে নেয়।
মোতাহার প্রথমে ডালিয়ার কৌশল ধরতে পারে না। পরে চতুর স্ত্রীর এসব চালাকি ধরতে পেরে মুখে কিছু না বললেও অনেকটা বিরক্ত হয়।
২. বাস থেকে নেমে পড়ে মোতাহার একটা রিকশায় চেপে বসে রওনা দেয় গ্রামের দিকে। বাড়ি গিয়ে সে চমক দেখবে। কিন্তু জানে না কী সেই বিশেষ চমক। বিয়ে বার্ষিকী নাকি! বিয়ে বার্ষিকীর তো আরো চার মাস দেরি। তবে কি ডালিয়ার জন্মদিন! না, সেটাও তো গত মাসে চলে গেছে। তাহলে কী! কিসের এই চমক!
কলবেল বাজতেই ডালিয়া দরজা খুলে দিলো। অনেক দিন পর স্বামীকে দেখে মিষ্টি করে হাসল ডালিয়া। সিলিংফ্যান ছেড়ে দিলো। তার তলে বসে পথের ক্লান্তি দূর করল মোতাহার।
ভাত খেয়ে রেস্ট নিতে খাটে শুতে শুতে মোতাহার ডালিয়াকে বলল, ‘কী তোমার সেই চমক?’
ডালিয়া বলল, ‘চমক দক্ষিণের বারান্দায়। দেখে আসো।’
মোতাহার আবার কৌতূহলী হয়ে উঠল। যে চমকের জন্য অফিস থেকে একদিন আগে ছুটি নিতে হয়েছে, না জানি কী সেই চমক অপেক্ষা করছে দক্ষিণের বারান্দায়।
উদাস পায়ে দক্ষিণের বারান্দায় ছুটে আসে মোতাহার। কই, বারান্দায় তো কিছু নেই, শুধু দু’টি বড় গামলায় অনেক অধোয়া জামা কাপড় পড়ে আছে। মোতাহার ডালিয়াকে ডেকে বলে, ‘কই গো চমক! এখানেই তো কোনো চমকই দেখছি না।’
ডালিয়া এসে বলল, ‘ওই যে গামলায় জামা কাপড় দেখছো, ওটাই চমক।’
কিছু না বুঝে মোতাহার বলল, ‘এটা চমক?’
ডালিয়া মুচকি হেসে বলল, ‘হ্যাঁ। এগুলো আমার অনেক দিনের অধোয়া জামা। তোমাকে এসব ধুতে হবে। সব জমিয়ে রেখেছি।’
মোতাহার হা করে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘এসবের জন্য তুমি অফিস থেকে আমাকে দিয়ে ছুটি নিয়েছিলে?’
ডালিয়া বলল, ‘হ্যাঁ। জামা কাপড়ের সংখ্যা খুবই বেশি। ধুতে সময় লাগবে না? কাল ভোরেই কিন্তু এগুলো ধোয়া স্টার্ট করবে। এখন কি চা খাবে? চা এনে দেবো?’
মোতাহার জবাব দিচ্ছে না। রাগে তার শরীর জ্বলছে। বাড়ি এসে এই চমক দেখবে, সে ভাবতেই পারেনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement