২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইজ্জত

-

মেয়ে পটানোতে যে আমি বরাবরই ওস্তাদ, এ আর নতুন কী! আমার বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে আমার সমস্ত কাজিনও জানে আমার এ সুকর্মের কথা। এ যাবৎকালে কয়টা মেয়েকে ছল করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে যে ভালোবাসার অভিনয় করেছি, তার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
সেদিন নানার বাড়ি কেশারখিল গেলাম অনেক দিন পর। অনেক দিন পর সমবয়সের মামাতো ভাইয়েরা আমাকে দেখে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। একেকজন একেক কায়দায় আমাকে সাদরে গ্রহণ করে নিলো বলে আনন্দে আমার চোখে পানি চলে এলো। শুনেছি ভালোবাসা নাকি যাকে তাকে বিলোবার জিনিস নয়। কাজিনরা উজাড় করে এত ভালোবাসছে দেখে আমার যে পরম তৃপ্তিতে মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। আহা!
বিকেলে মামাতো ভাইদের সাথে আমিনবাজারে গেলাম আড্ডাস্থলে। মামাতো ভাইয়েরা মহা উল্লাসে আমার মতো এই অখ্যাত কাজিনকে তাদের বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে দেখে পরানটা আনন্দে ঝিলিক মারতে লাগল। সবাই আমাকে আন্তরিকতার সাথে কদর করছে। কেউ কেউ আবার চাতকের মতো আমার পানে অপলক চেয়ে আছে, হয়তো আমার স্মার্টনেস দেখে তারা অনুমান করছে আমি শহরের কোনো ছেলে।
এক চা দোকানে যখন কাজিন আর কাজিনের ফ্রেন্ডসদের সাথে আমাদের এক ঘণ্টার দ্বিধাহীন আড্ডা তুঙ্গে, তখনই মামাতো ভাই আরাফ এক মনোরম সুবিশাল কসমেটিক দোকানের দিকে তাকিয়ে বললÑ ‘দেখ দেখ ডানাকাটা পরী।’
পড়ন্ত বিকেলে ডানাকাটা পরীর আবির্ভাব আবার কোথা থেকে, সেটা তদন্তে আমাদের সবার বিস্মিত চোখ যখন ওই সুবিশাল কসমেটিক দোকানটার দিকে, তখনই বুঝলাম আরাফ ভুল বলেনি। মেয়েটি আসলেই ডানাকাটা পরীর মতো। রূপের আভা ছড়িয়ে সে একমনে বিক্রেতা থেকে কসমেটিক সামগ্রীর দর কষাকষিতে নিমগ্ন।
আরাফ বললÑ ‘তুই তো মেয়েদেরকে ভালোই পোষ মানাতে পারিস। এ মেয়েকে পারবি?’
আরাফ কথাটা বলাতে ওর বন্ধুদের কাছে মনে মনে আমার দাম এক শ’ গুণ বেড়ে গেল মনে হলো। রনি নামে আরাফের এক বন্ধু বললÑ ‘আরাফ প্রায়ই আপনার এই প্রতিভার কথাটি বলে। পারবেন ওই মেয়েকে পটাতে?’
আমি বললামÑ “পারব মানে? এক শ’ বার পারব।”
বলেই তির তির করে ছুটে গেলাম কসমেটিক দোকানে, যেখানে আছে ডানাকাটা পরী।
দোকানে ঢুকতেই ডানাকাটা পরীকে সামনাসামনি দেখলাম। ওরে মা, কী রূপ গো! দেখেই মনে প্রেম প্রেম ভাব চলে আসে। দোকানে আরো দু-চারজন পুরুষ কাস্টমার। তারা পছন্দের পণ্য কিনবে বলে এদিক-সেদিক চোখের দৃষ্টি ফেলছে।
গিয়ে দাঁড়ালাম ডানাকাটা পরীর পাশে। পরী একবার আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় কসমেটিক চয়েজে মন দিলো। আমি ছোট্ট করে বললামÑ ‘হ্যাললো!’
বিস্মিত চোখে পরী আমার দিকে তাকিয়ে বললÑ ‘আমাকে বলছেন?’
মনে মনে বললাম ‘হ্যাঁ গো, বলতে এলাম ভালোবাসি।’ কথাটা শব্দ করে বলতে না পারলেও শান্ত গলায় বললামÑ ‘কেমন আছেন?’
পরী তাজ্জব গলায় বললÑ ‘ভালো আছি। বাট আপনি কে? আচ্ছা আপনি কি আমার ফেসবুকের সাড়ে চার হাজার ফ্রেন্ডের মধ্যের কেউ? অথবা আমার ৯০ হাজার ফলোয়ারের মধ্যে কেউ?’
পরীর কথা শুনে বুঝলাম ইনার ২৪ ঘণ্টা ফেসবুকে অ্যাক্টিভ থাকার বাতিক আছে। এই ফাঁকে বাইরে এক পলক চোখ ফেলে দেখি চা দোকানে আরাফ আর আরাফের বন্ধু রনি অবাক ভঙিমায় আমার কাণ্ডকারখানা দেখছে।
পরীকে বললামÑ ‘না আমি ফেসবুক চালাই না। বোরিং লাগে। এই পথ দিয়ে হেঁটে যেতে আপনাকে দেখেছি। বেশ সুন্দরীই বলতে হবে আপনাকে।’
পরী তরল গলায় বললÑ ‘ থ্যাঙ্কস। কিন্তু এভাবে অচেনা কাউকে এসব বলাটা ভদ্রতার কাতারে পড়ে না।’
পরীর কথায় আমি নার্ভাসনেস হওয়ার আগেই টের পেলাম কেউ একজন পেছন থেকে আমার শার্টের কলার চেপে ধরেছে। ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখি দৈত্যের মতো বড় বড় চোখওয়ালা এক বদমাশ আমাকে শাসিয়ে বলছেÑ ‘আমার স্ত্রীকে ইভটিজিং করছিস? শালা মেথরের ঘরের মেথর কোথাকার।’ বলতে বলতে আমাকে দোকান থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করল। বুঝলাম ইনি ডানাকাটা পরীর স্বামী। দৈত্যের মতো বড় বড় চোখওয়ালা বদমাশ আমাকে কষে এক চড় মেরে বললÑ ‘কেন আমার বউয়ের সাথে টাংকি মারতে এসেছিস? দশবার কান ধরে ওঠবোস কর।’
কী আর করা! ইজ্জত বাঁচাতে বদমাশের কথামতো দশবার কান ধরে ওঠবস করতে করতে অদূরে চায়ের দোকানে কাজিন আর কাজিনের বন্ধুদের দিকে চোরা চোখে তাকালাম। সবার চোখ মুখজুড়ে আতঙ্ক ভাব থাকলেও তানভির নামের যে ছেলেটি লাল চায়ের কাপ হাতে বসে আছে, সে দম ফাটানো হাসি চেপে রাখতে ক্রমেই ব্যর্থ হচ্ছে। ভারি লজ্জা হলো আমার। বলতে এলাম ভালোবাসি। হারালাম ইজ্জত।


আরো সংবাদ



premium cement