২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বড়াই

-

কিছু কিছু সাধারণ ঘটনা ঘটলেও আনন্দে চোখে পানি চলে আসে। এই মুহূর্তে অতি সাধারণ একটি ঘটনায় আমার চোখে পানি চলে এসেছে। ছোট মামা আমেরিকা থেকে আমার জন্য একখানা আইফোন পাঠিয়েছেন। এমন একটি দামি জিনিস মামার কাছে কখনো চাওয়ার ছিল না। ওইদিন ফোন কলে জাস্ট বললেন, ‘তোর কি লাগবে ভাগ্নে?’
হেসে বললাম, ‘তোমার যা ইচ্ছে, তা পাঠিয়ে দিও।’
সেই যা ইচ্ছে তা পাঠানো জিনিসটা যে আস্ত একখানা আইফোন হবে, কে ভেবেছে! আইফোন পেয়ে মামাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম। নতুন ঝকঝকে আইফোনটি হাতে নিয়ে প্রথমে মনে পড়ল জাকিরকে। জাকির আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। বাড়ি খুলনায়। এই ছেলের ভয়াবহ কিসিমের একটি রোগ আছে, বড়াই রোগ। নিত্যনতুন পোশাক, জুতার ছবি আর অভিজাত সব রেস্টুরেন্টে গিয়ে দামি খাবারের সামনে বসে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করাটা তার নিত্যদিনের রোগ। এই রোগের আসল ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে বড়াই। ফেসবুকে এ ধরনের পোস্ট হচ্ছে মূলত বড়াই দেখানো।
জাকির নামে এই ছেলের আরো একটি বড়াই ফেসবুকে লক্ষ করি। তা হলো মোবাইল বড়াই। কয়েক মাস পরপর সে নতুন মোবাইল কিনে ফেসবুকে সবাইকে দেখায় আর ক্যাপশনেও লিখে দেয় মোবাইলের দাম কত আর কোন কোম্পানির। ওর এসব বড়াই দেখে আমি অনেক দিন থেকে বিরক্ত।
যেহেতু আজ থেকে আমি একটি আইফোনের মালিক, তাই প্রথমে ভাবলাম জাকিরের মতো আমিও ফেসবুকবাসীর মধ্যে আমার এই গুড নিউজ ছড়িয়ে দেবো। সন্ধ্যার আগেই উক্ত কাজটি সমাধা করলাম। ফেসবুকে পোস্ট করেই দিলাম আমার আইফোনের ছবি আর ক্যাপশনে লিখলাম এই সাত রাজার ধন কে কোন দেশ থেকে পাঠিয়েছেন।
এমন ঘটনা পোস্ট করার পরপরই অজস্র লাইক-কমেন্টের বন্যা। নেগেটিভ কিছু কমেন্টও এসেছে। তার মধ্যে প্রিয় বন্ধু শুভ লিখেছে, ‘আইফোন আমাদেরকে দেখিয়ে বড়াই দেখাস?’
মাইন্ড করার মতো শুভর কমেন্ট, কিন্তু আমি মাইন্ড করিনি। হোক এটা আমার বড়াই দেখানো। জাকির ছেলেটা কম দামের মোবাইল কিনে ফেসবুকে বড়াই দেখাতে পারে, আমি কেন আইফোনের মতো দামি জিনিসের মালিক হয়েও বড়াই দেখাতে পারব না!

২.
সন্ধ্যার আগে আব্বা হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘বাজারে যা। আমার হাঁপানির ওষুধ লাগবে।’
বাধ্য ছেলে হয়ে আব্বার জন্য ওষুধ কিনতে বাজারে রওনা দিলাম। আমার পকেটে ছোট মামার পাঠানো আইফোন।
ফিরে আসার পথেই বিপদ। সন্ধ্যার আবছায়ায় মুখোশধারী কারা যেন আমার সম্মুখে দাঁড়ায়। হাতে অস্ত্র।
‘তোমরা কারা?’
‘আমরা কারা সেটা জানতে হবে না। আইফোন দে।’
‘মানে? কিসের আইফোন?’
‘ভং ধরিস না। ফেসবুকে কি ছেড়েছিস? আমরা কী ফেসবুক চালাই না! সব দেখেছি। মামা আইফোন পাঠাইছে যে, সেটা বের কর।’
‘না না। ওটা দেয়া যাবে না।’
মুখোশধারী একজন ঠাস করে চড় মারল আমার গালে। বাকিরা মিলে ধস্তাধস্তি করে আমার পকেট থেকে কেড়ে নিলো স্বপ্নের আইফোন। সবাই একে একে দৌড়ে পালাল।
বাসায় এসে এ ঘটনা কাউকেই জানাইনি। এটা হচ্ছে বড়াইয়ের খেসারত। ফেসবুকে এই ব্যাপারটা জানিয়ে বড়াই না দেখালে আজ এই বিপদ আসত না।
আয়নার দিকে তাকালাম। যে হারামজাদা আমাকে ঠাস করে চড় মেরেছে, সে চড়ের লাল দাগ আমার গালে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চড়ও খেলাম, আইফোনও হারালাম।


আরো সংবাদ



premium cement
‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫ চৌগাছায় সিদ কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরি

সকল