২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিয়ে বহির্ভুত সম্পর্ক : সাফাই সাক্ষ্য দিলেন ইউএনও, সময় চাইলেন বান্ধবী

- ছবি : সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে তার বান্ধবীর আনা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা গত রোববার (০৯ জুন) দু'পক্ষকে ডাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসেননি অভিযোগকারী ওই নারী। তিনি মৌখিকভাবে সময় চেয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এমরান হোসেন তাকে লিখিতভাবে সময় চেয়ে মেইল পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে, ইউএনও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজ কি সাক্ষ্য দিয়েছেন তা জানা যায়নি।

বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এমরান হোসেন ঘটনাটির তদন্ত করছেন। তিনি জানান, তদন্ত কাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগকারী আসেননি। তিনি মোবাইল ফোনে সময় চেয়েছেন। আমরা বলেছি, লিখিতভাবে সময় চেয়ে মেইলে আবেদন করতে।আসিফ ইমতিয়াজ তার পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

অভিযোগকারী ও্ই জানান, আমার উপর হামলা করা হয়েছে। আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি আছি। তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সময় চেয়েছিলাম। আগামী ১৬ জুন তারিখ দিয়েছেন। 

এদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজ বান্ধবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক অতঃপর অন্তঃসত্ত্বার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর বিতর্কিত উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও উপজেলাবাসী। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও এলাকা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষও এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ। তাই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে কার্যালয়ে না এসে বাসায় বসে অফিস করছেন ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজ। এছাড়াও তার ব্যবহৃত সরকারি ফোন নাম্বারটিতে কল দিলেও কেউ পাচ্ছেন না তাকে। অনেক সময় সরকারি নম্বর বন্ধ থাকে। ফলে উপজেলাবাসী তার কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগীতা পাচ্ছেন না। উপজেলাবাসীসহ সাধারণ জনসাধারণ এমন কালিমা লিপ্ত অফিসারকে আর দেখতে চায় না।

জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলায় নব-যোগদানকারী ইউএনও তার পূর্বের কর্মস্থল চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় পূর্বে বিয়ে করা স্ত্রীর সাথে ডির্ভোস হয়। কিন্তু শ্বশুর পেশাদার উকিল হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ বিলম্বিত হচ্ছিল চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এডিসি (এলএ)আসিফ ইমতিয়াজের। কিন্তু পরিচিত হওয়া নতুন বান্ধবীর সাথে সংসার করার তর সইছিল না তার। শেষ পর্যন্ত পৃথক বাসা নিয়ে বিয়ে না করেই সংসার শুরু করেন। অসাবধানতাবশত পেটে চলে আসে সন্তান। সব কিছুই গোপন রেখে আসিফ চাইছিলেন অনাগত সন্তানকে গর্ভপাত ঘটাতে। কিন্তু রাজি হলেন না বান্ধবী। এ নিয়ে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দেন সেই বান্ধবী।

গত ০৩ এপ্রিল লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে বিচার চান ওই নারী। এরপর একজন এডিসিকে বিষয়টির তদন্তভার দেয়া হয়। এডিসিকে এ ঘটনা অস্বীকার করেন আসিফ ইমতিয়াজ। পরে চট্টগ্রাম প্রশাসন তাকে বদলির জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করে। পরে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাহিরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাকে বদলি করা হয়। বদলির পরই তার জীবনের কলঙ্কিত ঘটনাটি আরো ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। সর্বশেষ এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যিনি এমন একটি জঘন্য কাজ করেছেন তিনি কীভাবে এই উপজেলাবাসীর উন্নয়নে ভাল কাজ করবেন। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বান্ধবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ও অন্তঃসত্ত্বার ঘটনায় এখন উপজেলার আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এখন তদন্ত করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আমরাও আছি খুবেই লজ্জার মাঝে এই বিয়ষটি নিয়ে। সবাই এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের তীর ছুড়ছে আমাদের দিকে।আমরাও এই বিষয়ে উত্তর দিতে দিতে নাজেহাল অবস্থায় আছি। উপজেলাবাসী তাকে আর চাই না। তার শাস্তি দাবী করছে। আর তাকে এখানে রাখলে উপজেলা সুনাম নষ্ট হবে।বদলী হলে আমরাও এই দুর্নাম থেকে বাচঁব। 

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থার মাঝে আছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেন নি।


আরো সংবাদ



premium cement