২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাপ দেখলেই ধরে ফেলেন ইব্রাহীম আলী (ভিডিও)

সাপ দেখলেই ধরে ফেলেন ইব্রাহীম আলী (ভিডিও) - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাপুরে ইব্রাহীম আলী গ্রামে গ্রামে সাপের সন্ধানে ঘুরে বেড়ান। কোথাও সাপের উপদ্রুবের খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে সাপ ধরে আনেন। সাপের কামড়ে আহত রোগীদেরও তিনি চিকিৎসাও দেন। এ ভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিষধর সাপ ধরে দীর্ঘ ৩২ বছরের সাধনা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান ইব্রাহীম আলী।

সাপ সম্পর্কে মানুষের অহেতুক ভীতি দূর করার জন্যই তার পিতা ও ওস্তাদদের নির্দেশে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির সাড়ে ৪ হাজার সাপ ধরার রেকর্ড করেছেন।

এই সাপুড়ে জানিয়েছেন, সাপ ধরলে মানুষের উপকার হয়। তিনি যে সাপ ধরছেন, আর সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করছেন, তা বলতে গেলে বিনা পারিশ্রমিকে। তার কাজে খুশী হয়ে যে যা দেয় তাই নেন হাসিমুখে। এ ছাড়া, সাপ ধরা এখন তার নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছে। সাপ ধরার পাশাপাশি তিনি সাপের কামড়ে আহত রোগির চিকিৎসা করেন। গত ৩০ মার্চ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের দাসটিলা গ্রামে সাপের কামড়ে আহত রোগীর চিকিৎসা করতে আসেন।

জানা গেছে, দাসটিলা গ্রামের সুনা মিয়ার ছেলে আফজল (২৬) সন্ধ্যায় মটর সাইকেল যোগে বাড়ি থেকে বের হন। কিছু পথ যাওয়ার পর বুঝতে পারলেন তার পায়ে একটি সাপ জড়িয়ে ধরে কামড় দিয়েছে। তাৎক্ষণিক তিনি আক্রান্ত স্থানের উপরে 'ডোর' বেঁধে দেন। এ ঘটনাটি ঘটে ২৭ মার্চ। চিকিৎসা নিয়ে কোনো কাজ না হওয়াতে আহত আফজলের পরিবারের লোকজন সাপুরে ইব্রাহীমকে খবর দেয়। খবর পেয়ে তিনি ছুটে আসেন তাদের বাড়িতে। তার চিকিৎসায় দুই দিন পর আফজল সুস্থ হয়ে উঠেন।

ইব্রাহীম সম্প্রতি সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার তেরহাতী, সিকন্দরপুর, ইলাশপুর ও গোয়ালাবাজার অগ্রণী ব্যাংকের এসির ভিতর থেকে পঙ্কি আলদ নামে কয়েকটি বিষধর সাপ ধরেন। তিনি যেসব সাপ ধরেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দুধরাজ, গোখরা, মাছুয়া গোখরা, ভাইপার, রাজগোখরা, শঙ্খনীল, নগাই আলদ, কেরেট আলদ, সুর্যমুখী ও পঞ্চনাগসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপ। সাপ ধরতে তাকে সহযোগিতা করেন তারই ছেলে আল-মামুন ও মাহিদুল হোসেন।

সর্পরাজ ইব্রাহীম আলীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, মানুষের উপকার করাই তার আসল লক্ষ ও উদ্দেশ্য। তার দাদা ছিলেন ঢাকার সাভার এলাকার বাসিন্দা, বাবা তাহের আলী ভারতের আসাম রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানেই তার বেড়ে উঠা। ১৮বছর বয়স হওয়ার পরে ভারতের আসামের বিভিন্ন ওস্তাদের মাধ্যমে সাপ ধরা বিদ্যায় পারদর্শী হন ইব্রাহীম আলী। এর পর তার ওস্তাদ এবং বাবার নির্দেশে দেশে চলে আসেন।

ইব্রাহীম জানান, ভারত ও বাংলাদেশে তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রশংসা পত্র অর্জন করেছেন। আগে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে বসবাস করেছেন। বর্তমানে তিনি সিলেটের চন্ডীপুল এলাকায় বসবাস করেন।

সাপ ধরলে টাকা পয়সা দিতে হয় কি না জানতে চাইলে উত্তরে ইব্রাহীম আলী বলেন, এতে বকশিস হিসেবে লোকজন যা দেয় তাতেই আমি খুশি। এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ও ভারতে প্রায় চার হাজার সাপ ধরেছেন বলে জানান। দেশে যেসব সাপ ধরেন তিনি, তা ঢাকা সাভারে পাঠিয়ে দেন বলে জানান।


আরো সংবাদ



premium cement