২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাশ্মিরের ইতিহাসই মুছে ফেলতে চাইছে ভারত!

খালিদা শাহ অভিযোগ করেছেন ভারত সরকার কাশ্মিরের ইতিহাসই মুছে ফেলতে চাইছে। - ছবি : আলজাজিরা

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের সাবেক নেতা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মেয়ে খালিদা শাহ অভিযোগ করেছেন ভারত সরকার কাশ্মিরের ইতিহাসই মুছে ফেলতে চাইছে।

শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ছিলেন আধুনিক কাশ্মিরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। কয়েক দশক ধরে তার জন্মদিন ৫ ডিসেম্বর রাজ্যটিতে সরকারি ছুটি হিসেবে চলে আসছিল। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে সরকারি ক্যালেন্ডার থেকে দিবসটি বাদ দেয়া হয়েছে।

কাশ্মিরের প্রধান শহর শ্রীনগরে তাদের বাড়িতে বসে ৮৪ বছর বয়সী খালিদা শাহ আলজাজিরাকে বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই ক্ষতিকর’। কাশ্মিরের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে গত আগস্টে ক্র্যাকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি এ বাড়িটিতে গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন।

তার ভাই ফারুক আব্দুল্লাহ ও ভাতিজা ওমর আব্দুল্লাহও তখন থেকেই গৃহবন্দি আছেন। তারাও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

কেন্দ্রীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার কর্তৃক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় সরকার এর মাধ্যমে কাশ্মিরের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করছে’।

৭০ বছর আগে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সময়ে অর্জন করা কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা গতবছরের ৫ আগস্ট বাতিল করে দেয় মোদি সরকার। সংবিধান থেকে এ সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয়ায় কাশ্মির হারায় তার নিজস্ব পতাকা, পৃথক সংবিধান এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা।

কাশ্মির আন্দোলনের কর্মীদের এখন ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে এখন ভারতের অন্যান্য এলাকার লোকজনও জমি কিনতে পারবেন এবং বসতি স্থাপন করতে পারবেন। ফলে অঞ্চলটিতে জনতান্ত্রিক পরিবর্তন চলে আসবে।

১৯৩১ সালে কাশ্মিরের হিন্দু শাসকের বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভে ২২ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ১৩ জুলাই পালন করা শহীদ দিবসটিও বাতিল করেছে মোদি সরকার।

তিন প্রজন্ম ধরে কাশ্মির শাসন করা পরিবারের মেয়ে খালিদা শাহ বলেন, ‘ভারতের সাথে সম্পর্কের কারণে কাশ্মিরের জনগণের সাথে আমাদের শত্রুতা তৈরি হয়ে গেছে।’

শেখ আব্দুল্লাহর উত্থান শুরু হয় ১৯৩১ সালে। তখন তৎকালীন শাসক দোগরা রাজা হরি সিংহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া তাকে রাতারাতি হিরো বানিয়ে দেয়।

পরে পাকিস্তানের স্থপতি মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর একজন সমালোচক হিসেবে ভারতের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহার নেহরুর প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন তিনি।

১৯৮২ সালে তার মৃত্যুর পর ভারতীয় শাসনের বিপক্ষে এবং পাকিস্তানপন্থী মতামত অঞ্চলটিতে বৃদ্ধি পায়। এ সময় অনেকে শেখ আব্দুল্লাহর শাসনকে কাশ্মিরীদের মতাদর্শের সাথে ঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করতে থাকেন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়া কাশ্মিরের পূর্ণ দাবি করে আসছে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশই। কিন্তু তারা এর পৃথক অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে পেয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement