২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুরগিছানা বাঁচাতে জমানো ১০ টাকা নিয়েই হাসপাতালে ছোট্ট শিশু

- ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে যখন মনুষ্যত্বের ভাণ্ডারে টান পড়ছে বলেই সবার ধারণা, তখন একটি শিশু প্রমাণ করে দিয়েছে, মানুষেরই তো মনুষ্যত্ব থাকে। দুর্ঘটনায় মৃত একটি মুরগিছানাকে বাঁচানোর জন্য যে ভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেল শিশুটি, তা দেখে হতবাক হয়েছে বিশ্ব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই যেন আদরে ভরিয়ে তুলছে তাকে।

শিশুটির বয়স মাত্র ৬ বছর। ভারতের মিজোরামের সাইরাঙের বাসিন্দা ওই শিশুটির নাম ডেরেক সি লালছানহিমা। সম্প্রতি বাই-সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত একটি মুরগিছানার ওপর দিয়ে সাইকেলটা চালিয়ে ফেলে ডেরেক। সাইকেলের চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ওই মুরগিছানাটি।

অন্য কোনো শিশু হলে হয়তো মুরগি মালিকের ভয়ে পালিয়েই যেত। কিন্তু ডেরেক না পালিয়ে বরং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। বিষয়টাকে পাত্তা না দিয়ে সাইকেল নিয়ে চলে যেতে পারেনি সে। সাইকেল থেকে নেমে তৎক্ষণাৎ মুরগিছানাটাকে হাতে তুলে নেয়। মুরগিছানাটি আসলে তার আগেই মারা গিয়েছিল। ফলে ডেরেক হাতে তুলে নিলেও মুরগিছানাটি নড়াচড়া করছিল না। কিন্তু সে তা বুঝতে পারেনি। কী করবে প্রথমে তা-ও বুঝে উঠতে পারছিল না সে। মুরগিছানাটি নিয়ে সে বাড়িতে ফিরে আসে।

ডেরেকের বাবা প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিলেন, মুরগিছানাটি আর বেঁচে নেই। কিন্তু ছেলের আবেগে তিনি কোনো বাধা দিতে চাননি। বরং তাঁর পরামর্শেই ডেরেক বাড়ির কাছেই একটি হাসপাতালে মুরগিছানাটি নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। সাথে নিয়ে যায় তার সঞ্চয়ের ১০ টাকা।

এক হাতে মুরগিছানা এবং আরেক হাতে ১০ টাকা নিয়ে সে হাসপাতালে ঢুকে একটি নার্সকে পেয়ে সব কথা খুলে বলে। কিন্তু হাসপাতালে তো মরা মুরগিছানাকে জ্যান্ত করার কোনো চিকিৎসা নেই। তাই তাকে সেখান থেকে বিফল মনোরথ হয়ে বের হয়ে আসতে হয়।

চিকিৎসা দিতে না পারলেও নার্সের মন ছুঁয়ে যায় ডেরেকের সরলতা। এক হাতে ১০ টাকা এবং অন্য হাতে মুরগিছানা নিয়ে ওই ছবিটা সে নার্সই তুলেছিলেন। সেটাই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। নার্সের তোলা ওই ছবিটা ফেসবুকে শেয়ার করেন ডেরেকের প্রতিবেশী সাংমা।

তবে হাল ছাড়তে রাজি হয়নি ডেরেক। হাসপাতালে কেউই চিকিৎসা করছেন না দেখে, কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসে ডেরেক। তারপর বাবার কাছে চেয়ে একটি ১০০ টাকার নোট নিয়ে আবারো হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। মুরগিছানাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায় সে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে নাছোড়বান্দা ছেলেকে সত্যি কথাটা বলে দেন ডেরেকের বাবা।

এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকের পোস্ট সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। একজন লিখেছেন, ‘তার খাঁটি এবং সৎ হৃদয়ের উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ ঝরে পড়ুক।’ কেউ কেউ তো তার মধ্যেই ঈশ্বরকে দেখেছেন। আবার কেউ লিখেছেন, ‘আমাদের সকলেরই ওর থেকে শেখা উচিত।’


আরো সংবাদ



premium cement