২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তানে হামলা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুললেন সিধু

সাবেক তারকা ক্রিকেটার, পাঞ্জাব প্রদেশের মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা নভোজিৎ সিং সিধু - ফাইল ছবি

কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলায় ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনীর উপর হওয়া আত্মঘাতী হামলা নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন আগেই। এবার পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযান ও তার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পাঞ্জাবের মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা নভোজিৎ সিং সিধু। তিনি প্রশ্ন করেন,‘পাকিস্তানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলায় কি আদৌ শতাধিক সন্ত্রাসী হত্যা করা হয়েছে? নাকি বনে জঙ্গলে বোমা ফেলে গাছ উপড়ে ফিরে এসেছে বিমান সেনারা? আর ভোটের আগে সেটাকেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে?’

গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ৪১ জন ভারতীয় আধা-সামরিক পুলিশ নিহত হয়। এই ঘটনার ১২দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার কাশ্মিরের লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি পার হয়ে পাকিস্তানে ঢুকে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে’ বিমান হামলা করে ভারত। এসময় নয়া দিল্লী দাবি করে যে, পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত আজাদ কাশ্মিরের বালাকোট ও চাকোটিতে একাধিক সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করেছে এবং এই হামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

নয়া দিল্লীর তথাকথিত এই দাবির পর ভারত জুড়ে আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ শুরু হলেও তা উবে যেতে সময় লাগেনি। ভারতের এই দাবি নিয়ে বিবিসি, গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো সরেজমির রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং ভারতের দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। এসব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় হামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জন নিহত হওয়া তো দূরের কথা, সেখানে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি বলে উল্লেখ করা হয়। এসব সংবাদমাধ্যমে আরো বলা হয়, আজাদ কাশ্মিরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়েছে এবং একজন স্তানীয় বেসামরিক বাসিন্দা আহত হয়েছেন।

এরপর হামলা ও হতাহতের বিষয়ে নয়া দিল্লীর দাবি নিয়ে খোদ ভারতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, আজাদ কাশ্মিরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলায় ৪০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সেই একই সংবাদমাধ্যমে পরে নিহতের সংখ্যা ৩৫ জন বলে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রোববার দাবি করেন, পাকিস্তানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় ২৫০-র বেশি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে তার ‘এই দাবি’ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের তুমুল সমালোচনায় সরব হয়েছে ভারতের বিরোধী দলগুলো। এরইমধ্যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। সোমবার সকালে তাতে যোগ দেন নভোজিৎ সিং সিধুও।

নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে মোদী সরকারকে ব্যঙ্গ করে তিনি লেখেন,‘ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলায় ৩০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, এটা সত্যি না মিথ্যে? যদি কোনো সন্ত্রাসী নিহত না হয়ে থাকে, তাহলে এতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযান চালানোর উদ্দেশ্য কী ছিল? আপনার সন্ত্রাসীদের বুপর হামলা চালাতে গিয়েছিলেন নাকি গাছ উপড়াতে? নাকি সবটাই নির্বাচনী ভাঁওতা?’
তিনি আরো লেখেন,‘বহিঃশত্রু দমনের নামে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিয়ে এই রাজনীতি বন্ধ হোক।’

পাশাপাশি ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযান নিয়ে হাঁকডাক করায় মোদি সরকারকে বিদ্রূপও করেন সিধু। হিন্দিতে লেখেন,‘উঁচি দুকান, ফিকা পকওয়ান।’ বা বাংলায়- ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’। অবশ্য তার এই মন্তব্য নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

তবে সিধু একা নন, পাকিস্তানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানে কতজন সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছে, সরকারকে তার হিসাব দিতে হবে বলে বলে দাবি তুলেছেন বিজেপি বিরোধী শিবিরের অনেকেই। মোদির নাম করে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেন,‘আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম পাকিস্তানের সমালোচনা করলে খুশি হন। অথচ তারাই বলছে বালাকোটে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তাহলে কি আন্তর্জাতিক মহলকেও এখন পাকিস্তানের সমর্থক বলবেন? প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাব দিতেই হবে।’

এদিকে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান বীরেন্দ্র সিং ধানোয়া। এখানে তিনি বলেন, ভারতীয় বিমানবাহিনী নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতেই বোমা নিক্ষেপ করেছে। তবে হামলায় কত জন নিহত হয়েছে তার হিসেব দেয়া সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement