২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাংবিধানিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা

মহিন্দা রাজাপাকসা - ছবি : সংগৃহীত

গুরুতর সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। সাবেক প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসা গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী রনিল
বিক্রমাসিঙ্গেকে বরখাস্ত করে এই নিয়োগ দেন। বিক্রমাসিঙ্গে সবেমাত্র তিন দিনের ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন।

সিরিসেনার এই উদ্যোগ শ্রীলঙ্কা ও সেইসাথে নয়া দিল্লিকে বিস্মিত করেছে। আর ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রধান বিক্রমাসিঙ্গে জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি এখনো দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন, পার্লামেন্টেই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে।

তিনি বলেছেন, এখন বিষয়টি পার্লামেন্টের ওপর বর্তালো। ভবিষ্যত কেবল পার্লামেন্টই নির্ধারণ করতে পারে। গত এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হবে কিংবা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে।

রাজাপাকসাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার কয়েক ঘণ্টা আগে সিরিসেনার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ- এর মধ্যে তার শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টি তথা এসএলএফপি রয়েছে) ও অন্যান্য ছোট দল ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে যায়। অথচ বিক্রমাসিঙ্গে ভারত সফর করে সেখান থেকে সমর্থন নিয়ে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিরিসেনার এই সিদ্ধান্তে শ্রীলঙ্কার বেশির ভাগ লোকই বিস্মিত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা একে ভারতকে কোণঠাসা করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

সিরিসেনা ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিক্রমাসিঙ্গের ইউএনপির সাথে জোট গড়েছিলেন। তিনি বিক্রমাসিঙ্গেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজাপাকসার নবগঠিত শ্রীলংকা পদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি) বিপুল বিজয় লাভ করার পর সিরিসেনা ও বিক্রমাসিঙ্গের মধ্যে বিভেদ প্রকট হয়ে পড়ে।

ওই জয়ের পর জোট সরকার ত্যাগ করার জন্য সিরিসেনার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এসএলএফপি সদস্যরা রাজাপাকসাকে সমর্থন করে, তারা সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য সিরিসেনার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

ইউপিএফএ মহাসচিব মহিন্দা আমারাবিরা মিডিয়াকে বলেন, শুক্রবার জোটের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের সময় সরকার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে নতুন কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়টি খুবই গোপন রাখা হয়। সরকার থেকে বের হয়ে রাজাপাকসার এসএলপিপির সাথে জোট বাঁধার আগে
সিরিসেনা ২৩ জন এসএলএফপি সদস্যের সাথে বৈঠক করেন। তখনই বিক্রমাসিঙ্গেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়।

রাজাপাকসা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সামাজিক মিডিয়ায় সাংবিধানিক জটিলতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হতে থাকে। ২৯তম সংশোধনী (২০১৫) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের কোনো ক্ষমতা নেই প্রেসিডেন্টের। প্রেসিডেন্ট বড়জোর প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে অনুরোধ করতে পারেন। ওই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টর ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর ফলে শ্রীলংকায় সাংবিধানিক সঙ্কটের সৃষ্টি হতে পারে। এখন দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে দুজনই দাবি করতে পারেন যে তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

রাজাপাকসাকে নিয়োগ করার পর সিরিসেনা এক সরকারি চিঠিতে বিক্রমাসিঙ্গেকে জানান, তাকে অপসারণ করা হয়েছে। এর জবাবে বিক্রমাসিঙ্গে চিঠিতে জানান, সাংবিধানিকভাবে তাকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন। তিনি পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের কথাও উল্লেখ করেন।

এদিকে ইউপিএফএ ও এসএলপিপির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠেছে। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এই দুই দলের মোট আসন ৯৫টি। আর ইউএনপির রয়েছে ১০৬ সদস্য। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩টি আসন। রাজাপাকসাকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে এসএলএফপি-এসএলপিপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সিরিসেনা ও রাজাপাকসার মধ্যে আলোচনা হলেও তা এত দ্রুত ঘটে যাবে কেউ তা ভাবেনি। এখন হয়তো স্পিকার কারু জয়সুরিয়া পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান করবেন। সেখানেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে সাংবিধানিক সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

এদিকে রাজাপাকসা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, দেশ ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে জন্য ইউএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল