২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্জ্য পানি ব্যবহার হচ্ছে সিল্ক শাড়ি তৈরিতে

-

মাটির নিচের পানির উৎস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ দেশ। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং নগরায়নের কারণে সেখানে পানির উৎস এবং সরবরাহ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।

দক্ষিণ ভারতে ব্যাঙ্গালোর শহরের কৃষকদের সেচের পানির কুয়ো শুকিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত।

সেই সমস্যা কাটাতে কয়েকজন কৃষক শহরের অশোধিত বর্জ্য পানি ব্যবহার করছেন কৃষি কাজে, তবে খাদ্য শস্য বা সবজি ফলানোর জন্য নয়।

তারা এ পানি ব্যবহার করছেন তুঁত উৎপাদনে - যা কাজে লাগানো হয় সিল্কের শাড়ি তৈরির কাজে।

ভারতের ব্যাঙ্গালোর শহরকে বলা হয় ভারতের সিলিকন ভ্যালি। কিন্তু গগনচুম্বী অট্টালিকা আর আইটি পার্কের এই শহরের মাটির নিচে এক গুরুতর সমস্যা দানা বাঁধছে।

এই শহরের বাসিন্দাদের জন্য পানির প্রধান উৎস হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি এবং তা তোলা হয় মাটির গভীর পর্যন্ত যাওয়া পাম্প মেশিন দিয়ে।

ব্যাঙ্গালোরে এরকম চার লাখ পাম্প আছে। এগুলো থেকে পানি তোলার পর হাজার হাজার ট্যাঙ্কারে করে সেগুলো লাখ লাখ লোকের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়।

মনে করা হয়, ব্যাঙ্গালারের জন্য প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কোটি লিটার পানি দরকার হয়।

কিন্তু শহর যত বড় হচ্ছে, পানি তোলার পরিমাণও ততই বাড়ছে এবং এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে - অচিরেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর শেষ হয়ে যাবে।

পানির ট্যাঙ্কার অপারেটর হরিশ বলছেন, আমরা যদি পানি না নিয়ে যাই, তাহলে শহরের লোক কোনো পানিই পাবে না।

"যেসব জায়গা আগে ছিল জলাশয়, লোকে যেখানে চাষবাসও করতো। তখন ৩০০ ফিট নিচেই পানি পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন পানির স্তর ৭শ. ৮শ, ১ হাজার ফিট থেকে নামতে নামতে ১৪শ থেকে ১৫শ ফিটে নেমে গেছে।"

অন্যদিকে এই নগরায়নের কারণে মাটির ওপরে পানির উৎস এত কমে গেছে যে কৃষিকাজের জন্য পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে।

এই পরিবর্তন নিজের চোখে দেখেছেন কৃষক মুনিরাজু ।

"আমি এই ক্ষেত্রে কাজ করছি ছোটবেলা থেকে। এখন আমার বয়স ৪৫। আমাদের কুয়ো শুকিয়ে যাওয়ার পর আমি পাঁচ বছর অন্য একজনের খামারে কাজ করি। বর্ষার সময়ং পয়প্রণালীর পাইপে কিছু পানি পাওয়া গেল - সেটা আমরা পাইপ লাগিয়ে আমাদের ক্ষেতের জন্য ব্যবহার করেছি" - বলছিলেন তিনি।

কিন্তু এ ভাবে পয়ঃবর্জ্যের লাইন থেকে পানি এনে কৃষিকাজে ব্যবহার করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসব ফসল বা সবজি থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।

এ কারণে মুনিরাজু অন্য এক বুদ্ধি বের করলেন। তিনি তুঁতের চাষ শুরু করলেন।

এই তুঁত গাছের পাতা সিল্ক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। রেশমের শুঁয়োপোকা গুটিতে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে খাওয়ানো হয় এই তুঁত গাছের পাতা।

এই গুটি থেকে পাওয়া যাওয়া সিল্ক সুতো - আর এ দিয়ে তৈরি হয় শাড়ি।

তিনি বলছেন, তার পরিচিত অন্য অনেক কৃষকই এখন তুঁত চাষ করছেন।

"স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষক আমার পরামর্শ নিয়ে এখন তুঁত চাষ করছে, এবং তারা বেশ ভালো উপার্জন করছে"- বলছেন তিনি।

ব্যাঙ্গালোরের পানি ব্যবহার সংক্রান্ত একজন বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ বলেন, এটা চাষীদের অনুপ্রাণিত করবে, বিচক্ষণভাবে পানি ব্যবহার করতে।

তার কথা, "ভারত প্রতিবছর ২৫০ কিউবিক কিলোমিটার পানি ব্যবহার করছে - যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত পানি ব্যবহারের পরিমাণের চেয়েও বেশি।"

"কাজেই মণিরাজু যা করছেন তা ভারতের লাখ লাখ কৃষককে পথ দেখাতে পারে। আমরা এর ফলে খাদ্য পণ্যের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষের জন্য শহরের অশোধিত পানি ব্যবহার করতে পারি।"


আরো সংবাদ



premium cement