২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম, তাই সেবা নিতে অস্বীকার

এয়ারটেল -

ডিশ টিভিতে সমস্যা হয়েছে এক গ্রাহকের, তিনি ফোন করলেন কোম্পানিকে। গ্রাহকের বাড়িতে পাঠানো হয় এক সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারকে। কিন্তু গ্রাহক যখনই জানতে পারলেও ওই ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম; স্রেফ জানিয়ে দেন মুসলিমদের কাছ থেকে সেবা নিবেন না তিনি। কোম্পানিও ওই গ্রাহকের দাবি মেনে ‘হিন্দু’ প্রতিনিধি পাঠানোয় বিতর্ক আরও চরমে উঠেছে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষনৌয়ে স্যাটেলাইট টিভি সংযোগ এয়ারটেল ডিটিএইচ(ডাইরেক্ট টু হোম) সার্ভিসের এক গ্রাহক এই চরম জাতি বিদ্বেষমূলক আচরণ নিন্দার ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তোলপাড় চলছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টাগ্রামের মতো সাইটগুলিতে।

যদিও এয়ারটেলের পক্ষ থেকে পরে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ভারতীয় এয়ারটেল এই ধরনের জাতি বিদ্বেষমূলক ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। কিন্তু তার আগেই তারা ওই গ্রাহকের দাবি মতো মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার পরিবর্তন করে ওই বাড়িতে হিন্দু ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। উত্তর প্রদেশের লক্ষনৌয়ের বাসিন্দা পূজা সিংহ নামে এক গ্রাহক তাঁর বাড়ির এয়ারটেল ডিটিএইচ-এ কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে সংস্থায় অভিযোগ জানানোর পর এক প্রতিনিধি তাঁর বাড়িতে যান। তিনি ছিলেন মুসলিম। পূজার অভিযোগ, সংস্থার ওই সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার তাঁর সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এরপর ফের সমস্যা দেখা দেওয়ার পর তিনি অভিযোগ জানালে অন্য এক সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার পাঠায় এয়ারটেল; কিন্তু তিনিও কাকতালীয়ভাবে মুসলিম।

এর পরেই পূজা ওই প্রতিনিধির মাধ্যমে সংস্থার সেবা নিতে অস্বীকার করেন এবং কোনও ‘হিন্দু’ প্রতিনিধি পাঠানোর দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে টুইটও করেন তিনি; কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এয়ারটেলও পূজার দাবি মেনে ‘হিন্দু’ প্রতিনিধি পাঠায়।

আর এরপরেই এয়ারটেল ও পূজা দু’জনের বিরুদ্ধেই তীব্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আছড়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অধিকাংশেরই বক্তব্য, পূজা যদি জাতি বিদ্বেষের দায়ে অভিযুক্ত হয়, তা হলে সেটা সমর্থন করায় সমান অপরাধী এয়ারটেলও। অনেকে ওই টেলিকম সংস্থার সমস্ত সেবা ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। সরব হন বিশিষ্টজনদের একটা বড় অংশও।

পরে দেয়া বিবৃতিতে এয়ারটেরে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রাহক, কর্মী বা সহযোগী সংস্থা, কারও মধ্যেই এয়ারটেল জাতি-ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করে না। কোনও গ্রাহক অভিযোগ জানালে সেই সময় যে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যে কর্মী ফাঁকা থাকেন তাঁকেই পাঠানো হয়। এই ঘটনাকে এ ভাবে ধর্মীয় রং চড়ানো উচিত নয়।

ফেসবুক-টুইটারে এত কাণ্ডের পরও পূজা অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। এরপরও টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি শুধু হিন্দু প্রতিনিধি পাঠাতে বলেছিলাম। তার জন্য যে ভাবে আমাকে অপদস্থ করা হচ্ছে, তা কল্পনাতীত। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, আমি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম।’

আরো পড়ুন : মেহবুবা মুফতির পদত্যাগ, সঙ্কটে কাশ্মির
প্রায় সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো বিজেপি। যার জের ধরে ইস্তফা দিলেন জম্মু-কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। কারণ, বিজেপি-র সঙ্গে জোট বেঁধেই মেহবুবার দল পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) এত দিন উপত্যকায় সরকার চালাচ্ছিল।পরে মেহবুবা মুফতি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, উপত্যকায় পেশীশক্তির জোর চলবে না।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করে জম্মু-কাশ্মিরে সরকার থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের কথা জানান বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। তিনি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মিরে পিডিপি-র সঙ্গে পথচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকার থেকে সরে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’’ এর পরেই রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি তার ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে আসেন। বিজেপি জম্মু কাশ্মিরে রাজ্যপালের শাসন চায়, বৈঠকে এমনটা জানিয়েছিলেন রাম মাধব।

জম্মু-কাশ্মির বিধানসভায় মোট ৮৭টি আসন। ২০১৪-র মে মাসে উপত্যকায় যে নির্বাচন হয়, সেখানে পিডিপি পেয়েছিল ২৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ২৫টি। এ ছাড়া ওমর আবদুল্লার দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ১৫টি, কংগ্রেস ১২টি এবং অন্যরা ৭টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি এবং পিডিপি যৌথভাবে ম্যাজিক সংখ্যা ৪৪ ছাড়িয়ে ৫৩-য় পৌঁছয়। সেই জোটই এত দিন সরকার চালাচ্ছিল উপত্যকায়।

রাম মাধব ওই সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাস, সহিংসতা ও কট্টরবাদ উপত্যকায় সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করছিল। শুজাত বুখারির খুন তার উদাহরণ।’’ তিনি জানান, জম্মু-কাশ্মির মন্ত্রিসভা থেকে বিজেপি-র সকল সদস্য আজই পদত্যাগ করবেন। এর পর তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের নিরাপত্তা এবং সংহতির মতো বৃহৎ স্বার্থকে মাথায় রেখে বলতেই হয়, জম্মু-কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে কারণেই আমরা সরকার থেকে সরে এসে রাজ্যের ভার রাজ্যপালের হাতে তুলে দিতে চেয়েছি।’’

রমজানের মাসে উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু, সেই সংঘর্ষ বিরতির সুযোগ নিয়ে উপত্যকায় একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। দু’টি ভিন্ন ঘটনায় খুন হয়েছেন সাংবাদিক শুজাত বুখারি এবং সেনা জওয়ান আওরঙ্গজেব। ঈদ শেষ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন। এর পরেই পিডিপি-র সঙ্গে কেন্দ্রের বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ে।

যদিও রাম মাধব এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন, পিডিপি-র সঙ্গে এই বিরোধ জোটের শুরুর দিন থেকেই ছিল। তার কথায়, ‘‘আদর্শগত কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও আমরা সে দিন উপত্যকায় পিডিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলাম শুধু জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে। না হলে, সেই সময়েই রাজ্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের শাসনে চলে যেত।’’

পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে মেহবুবা মুফতিও বলেন, ‘‘ক্ষমতার জন্য নয়, উপত্যকায় শান্তি ও মানুষের আস্থা ফেরাতে জোট করেছলাম। চেয়েছিলাম অস্ত্রবিরতি চুক্তি জারি রাখতে। পাকিস্তানের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলাম। আর সেই প্রক্রিয়ায় কাজও হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মিরের মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরেছিল। কিন্তু অস্ত্রবিরতি তুলে নেয়া হয়েছে। এটা কাশ্মিরের মানুষ মেনে নিতে পারবেন না।’’

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement