১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


গণতান্ত্রিক রূপান্তরে কতটা সফল হবে তিউনিসিয়া?

গণতান্ত্রিক রূপান্তরে কতটা সফল হবে তিউনিসিয়া? - ছবি : সংগ্রহ

তিউনিসিয়াতেই ‘আরব বসন্তের’ সূচনা হয়েছিল। আর সেখানেই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে আরো একবারের মতো ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। ২০১১ সালে গণবিপ্লবের মাধ্যমে জাইন আল আবেদিন বেন আলীর সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ব্যাপারে জাতীয়ভাবে সব দল ও মতের ঐক্যের মাধ্যমে তিউনিসিয়া তার যাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছে। বিপ্লবের পর সে দেশে প্রতিটি সরকারে ডান বাম ইসলামিস্টদের কোয়ালিশন হয়েছে। বিদেশী শক্তির প্রভাবের কাছে নত হয়ে কোনো পক্ষ বিপ্লবের আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদের ক্ষমতাকে নিশ্চিত করার সঙ্কীর্ণ পথে এগোয়নি। ইসলামিস্টরা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও ক্ষমতাকে একক হাতে কুক্ষিগত রাখার মানসিকতা দেখায়নি। সেকুলারিস্ট নেতৃত্বও নানা ধরনের চাপের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি।

ফলে আরব বসন্তের পর অন্য কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের মতো তিউনিসিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা অথবা রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়নি। অবশ্য, দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট এখনো রয়ে গেছে। তবে রাজনৈতিক সঙ্কটের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব পেরোতে সক্ষম হয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব। গণতান্ত্রিক কাঠামোর একটি সংবিধান সব দলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন সম্ভব হয়েছে, যার ভিত্তিতে এখন জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতা এবং রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি অনুগত থাকার কারণে তিউনিসিয়ার সামরিক বাহিনী বাইরের নানা উসকানির মুখেও ক্ষমতা দখলের কোনো প্রচেষ্টা চালায়নি। এ প্রক্রিয়ায় আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ৬ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনের যে সূচি নির্ধারিত রয়েছে, তা হবে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিউনিসিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ‘আন-নাহদা’ এবারই প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। দলের সহসভাপতি ও ৭১ বছর বয়সী আইনজীবী আবদেল ফাত্তাহ মুরো ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনে অংশ নেবেন। গত মাসে রাষ্ট্রপতি বেজি কেইদ এসেসবসি মারা যাওয়ায় এই নির্বাচন নভেম্বরের পরিবর্তে সেপ্টেম্বরে এগিয়ে আনা হয়েছে। লিবারেল প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ ছাহেদের দল তাহা টোনেস পার্টি তাকে সমর্থন করবে বলে ঘোষণা করেছে। এর ফলে আন-নাহদার প্রার্থী এসেসবসির নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অন্য যারা প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে উদারপন্থী সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেহেদি জোমায়া এবং অতীতের স্বৈরশাসক জাইন আল আবেদিন বেন আলীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তিন বছর অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী মনসিফ মারজৌকিও রয়েছেন।

আন-নাহদার অন্যতম উদার নেতা মুরো দীর্ঘ দিন ধরে দলটিকে আরো উন্মুক্ত করার জন্য এবং অন্য আরব দেশগুলোর মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে আলাদা হতে সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। সমালোচকেরা বলছেন, মুরোর দ্বিমুখী নীতি রয়েছে। সমাজে ইসলামের ভূমিকার বিষয়ে মুরো পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে ধারণ করেন। আন-নাহদার জ্যেষ্ঠ নেতা আইমেদ খিমিরি এই সমালোচনাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘মুরো তিউনিসিয়ায় অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি তিউনিসিয়ানদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। এখন এটাই তিউনিসিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

প্রেসিডেন্ট এসেসবসির মৃত্যুর পর সাবেক স্পিকার মোহাম্মদ এনাসেসি অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বর্তমানে মুরো সংসদের ভারপ্রাপ্ত স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংশয়বাদী পরলোকগত প্রেসিডেন্ট এসেসবসি মৃত্যুর আগে মুরোকে বলেছিলেন, ‘আপনাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে জানি। জানাজার পর লাশের সাথে গিয়ে আপনি আমাকে কবরে শায়িত করবেন।’ জানাজার পর মুরো প্রেসিডেন্টের লাশের সাথে হেঁটে গিয়ে তাকে কবরে শায়িত করে সেই অনুরোধ আবেগভরে রক্ষা করেছেন। এই ঘটনা মুরোর ইমেজকে বেশ বাড়িয়েছে।
তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতির একেবারে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নেই। তিনি প্রধানত পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিমালার ওপর সরাসরি কর্তৃত্ব করেন আর অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয়ে সংসদ দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর কাজ তদারকি করে থাকেন।

আগামী পার্লামেন্ট এবং প্রেসিডেন্টের নির্বাচন হবে দেশটির তৃতীয় দফা নির্বাচন, যাতে ২০১১ সালের বিপ্লবের পরে তিউনিসিয়ানরা নির্দ্বিধায় ভোট দিতে পারবেন। সংসদীয় নির্বাচনে আন-নাহদা পার্টি, প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ ছাহেদের ধর্মনিরপেক্ষ তাহা টোনেস পার্টি, রাষ্ট্রপতির পুত্র হাফেদ কেয়েদ এসেসবসির নেতৃত্বে নিদা টোনেস দল এবং কুরান্ট ডেমোক্র্যাট পার্টির মধ্যে নিবিড় লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তারা একসাথে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি শাসন করে আসছেন। তবে তাদের জোট নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক সংস্কারকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করেছে। এই কারণে দেশটিতে যে রাজনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, তার সাথে অর্থনৈতিক অগ্রগতি মেলে না। দুর্বল প্রবৃদ্ধি এবং কম বিনিয়োগের কারণে ২০১০ সালের ১২ শতাংশের চেয়ে বেড়ে বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে এখন প্রায় ১৫ শতাংশে।
তিউনিসিয়া এখন এমন একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র যেখানে একটি বহুদলীয় ও এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা রয়েছে। আর সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির। সংবিধান দেশটির নাগরিকদের গোপন ব্যালট এবং সার্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ক্ষমতা দিয়েছে। জনগণ একইভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্যও তাদের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি, সংসদ একটি নির্বাচনী আইন পাস করেছে যাতে পৌরসভা ও স্থানীয় নির্বাচন সম্পর্কিত নিয়মকানুনকে পুনর্বিন্যাস করা হয়। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এবং নিরাপত্তা পরিষেবাগুলোর ভোটাধিকার দেয়ার ব্যবস্থা এতে রাখা হয়েছে। এর আগে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ’ হতে হবে যুক্তি দেখিয়ে তাদের ভোটাধিকারের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছিল।

আগেরবার, ২০১৪ সালে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে নিদা টোনেস (তিউনিসিয়ার ডাক) পার্টি বিজয়ী হয়। বেজি কেইদ এসেসবসি প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ের পর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন। নাহদা পার্টি এবং বেশ কয়েকটি ছোট দল নিয়ে নিদা টোনেস একটি জোট সরকার গঠন করে। ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ ছাহেদের দ্বিতীয় সরকার সংসদে অনুমোদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাহেদকে তার সেকুলার নিদা টোনেস পার্টি বরখাস্ত করার চেষ্টা করেছিল। জোটের অংশীদার আন-নাহদা তা প্রত্যাখ্যান করে। তবে তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।

তিউনিসিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ উত্তরণ রাজনৈতিক ঐকমত্য দ্বারাই করা উচিত বলে মনে করা হয়। দেশটির পরলোকগত রাষ্ট্রপতি বাজি এসেসবসি ১৬ জুলাই ২০১৮-তে তিউনিসের তিনটি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলকে এক সাক্ষাৎকার দেন। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকা উচিত নয় বলে উল্লেখ করে এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে অবশ্যই বলতে হবে যে, আমরা খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছি এবং এটাকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, আর জনগণের দাবির প্রতি সাড়া দিতে কোনো সরকার সফল না হলে জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী তার পরিবর্তন প্রয়োজন।’
তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি আরো বলেছিলেন যে, ‘প্রধানমন্ত্রী ইউসুফকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হওয়ার পরিবর্তে বর্তমান পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। সবার দৃষ্টি এখন ২০১৯-এর দিকেই যাচ্ছে, তবে এখনকার সরকারকে ২০১৯-এর কথা না ভেবে চিন্তা করা উচিত সরকারের সাফল্য নিয়ে। আর যিনি ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সফল হননি, ২০১৯ সালে তিনি ক্ষমতায় আসবেন না।’

রাষ্ট্রপতি এসেসবসি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য কোনো দলকে বাদ না দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য অর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আইনের শাসনের দিক দিয়ে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে এবং তিউনিসিয়ায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভঙ্গুর এবং আমরা একটি নবীন গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতায় এগিয়ে চলেছি আর এতে বিভিন্ন দলের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনা নিরসনে সব পক্ষের এক হয়ে কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

তিনি আন-নাহদা রেনেসাঁ আন্দোলনকে সংলাপ ও সরকারের বাইরে রাখার জন্য তিউনিসিয়ায় কিছু প্রগতিশীল শক্তির প্রয়াসের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘রেনেসাঁ একটি শক্তিশালী দল এবং আমি তাদেরকে সরকারে রাখার পক্ষে কাজ করেছি এবং আমরা রেনেসাঁ শুধু নয়, কোনো দলকে বাদ দিতে চাই না।’
এর মাধ্যমে আল-এসেসবসি ন্যাশনাল স্যালভেশন ব্লকের কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে তিউনিস প্রকল্পের সব দল, আফাক এবং আল-মাসার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা রেনেসাঁকে সরকার থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।

নারী অধিকারের ব্যাপারেও তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে তিউনিসিয়ায়। ডা: লায়লা হাম্মামিকে ২০১৯-এর রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রথম মহিলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বিশ্বাস করেন যে, নারীর মর্যাদা আইনি ও রাজনৈতিক মর্যাদার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং এই অবস্থানকে আসল সম্ভাবনার দিকে ফিরিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। এটি প্রথম গণতান্ত্রিক আরব দেশ তিউনিসিয়ায় নারীদের উত্থানের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে।
তিউনিসিয়ার ইসলামপন্থী আন-নাহদা পার্টির বহুলালোচিত প্রভাবশালী নেতা রাশেদ ঘানুসি আগামী অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। তার এই অংশগ্রহণকে প্রধানমন্ত্রী বা সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জাইন আল আবেদিন বেন আলীর সময়ে লন্ডনে প্রায় দুই দশক নির্বাসিত, ঘানুসি তিউনিসিয়ার ২০১১ সালের বিপ্লবের পর থেকে একটি প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। তবে তিনি কখনো কোনো সরকারি পদে যাননি। ৭৮ বছর বয়সী ঘানুসি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রপতি বেজি কেইদ এসেসবসির (৯২) সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি বেজি এসেসবসি গত ২৫ জুলাই রাজধানী তিউনিসের সামরিক হাসপাতালে ৯২ বছর বয়সে মারা যান। তিউনিসিয়া প্রজাতন্ত্রের ঘোষণার ৬২তম বার্ষিকীতে তার মৃত্যু হলো। এসেসবসি ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বাকস্বাধীনতা এবং তিউনিসিয়াকে অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার মতো মৌলিক অধিকারের গ্যারান্টিযুক্ত একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের খসড়া তৈরি করতে সহায়তা করেছিলেন। তিনি তার নিদা টোনেস আন্দোলন এবং ইসলামপন্থী দল আন-নাহদার মধ্যে একটি ঐতিহাসিক ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তিও সমর্থন করেছিলেন, যা দেশকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছিল। কারণ সিরিয়া, ইয়েমেন বা লিবিয়ার মতো এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ সহিংসতার সাথে লড়াই করেছিল। সমালোচকেরা অভিযোগ করেছিলেন, এসেসবসি তার ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার চেষ্টা করেছিলেন এবং স্বৈরাচারী শাসনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে ট্রুথ কমিশনকে সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এসেসবসি জুনেই ঘোষণা করেছিলেন, নভেম্বরে নির্ধারিত নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন না, আর একজন অল্প বয়স্ক ব্যক্তিরই দেশের নেতৃত্ব দেয়া উচিত।

প্রভাবশালী আরব দেশগুলোর অনেকেই চাননি, মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্ত-উত্তর কোনো দেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটুক। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বাম সেকুলারিস্ট এবং ডান ইসলামিস্টদের মধ্যে বিরোধ ও সঙ্ঘাত সৃষ্টি এবং এর পথ ধরে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টা যেখানে সফল হয়েছে সেখানে সেকুলারিস্ট অথবা ইসলামিস্ট কেউই চূড়ান্তভাবে রেহাই পাননি আবদেল ফাত্তাহ। জেনারেল সিসি মিসরের ক্ষমতায় বসার পর দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মুরসির সরকারকে উৎখাত করতে মোহাম্মদ আল বারাদিসহ যে সেকুলারিস্টদের সহায়তা নিয়েছিলেন তিনি, তারা আজ হয়তো নির্বাসিত, নয়তো জেলে অন্তরীণ রয়েছেন। তিউনিসিয়ার রাজনীতিবিদেরা এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই শিক্ষা নিয়েছেন।

আন-নাহদা কোয়ালিশন সরকার গঠনের পর যখন যে দাবি জনগণের পক্ষ থেকে উত্তাপিত হয়েছে তার সাথে সমন্বয় করেছে। দলের নেতা ড. রশিদ ঘানুসির সিদ্ধান্তক্রমে আন-নাহদার সরকার পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করেছে। বিপ্লবের পর দলের আদর্শ বাস্তবায়নের চেয়ে দেশকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন রশিদ ঘানুসি। একটি সাংবিধানিক কাঠামো নির্মাণের জন্য সবাইকে নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। নিজ দলের প্রতি জনসমর্থন থাকার পরও একজন বাম রাজনীতিবিদকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন করেছেন। পরের বার প্রার্থী না দিয়ে থেকেছেন নিরপেক্ষ। ফলে দেশে বিদেশে যারা আন-নাহদাকে ক্ষমতা ও রাজনীতির অঙ্গন থেকে নেপথ্যে ঠেলে দিতে চেয়েছেন, তারা সফল হননি। এভাবে ঘানুসি ও তার দল আরব বিশ্বের ইসলামিস্টদের সামনে সমন্বয় এবং সবাইকে নিয়ে দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আগামী প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হতে পারে এই মূল্যায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক; যেখান থেকে বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের ইসলামিস্টরাও শিক্ষা নিতে পারেন।
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement