০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অতীত ব্যর্থতা মাথায় রেখে হোক নতুন বাজেট

অতীত ব্যর্থতা মাথায় রেখে হোক নতুন বাজেট - ছবি : সংগৃহীত

আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিই না। এটাই আমাদের এগিয়ে চলার সঠিক পথচিত্র তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও এই সত্যের প্রতিফলন দেখতে পাই। প্রতি বছর বাজেট প্রণয়নের সময় এলেই আমাদের অর্থমন্ত্রীদের মাথায় সবার আগে চিন্তা আসে, কী করে বাজেটের বিশাল অঙ্ক ও অত্যধিক মাত্রার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এগুলো নিয়ে সস্তা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে দেশের মানুষের বাহবা কুড়ানো যায়। বাজেট-অঙ্ক অতিমাত্রায় বাড়িয়ে দিলে দেশের মানুষের কাছে সরকার পক্ষ তখন বলতে পারে, গত বছরের চেয়ে সরকার আরো বড় অঙ্কের বাজেট দিতে পেরেছে। এটি এই সরকারের একটি সাফল্য। বিভিন্ন খাতে বাস্তবতাবর্জিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বেলায়ও একই কথা খাটে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, সরকার প্রতি বছরই এ ধরনের বাজেট বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। বছর শেষে বাজেট কাটছাঁট করতে হয়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অপূর্ণ থেকে যায়। অথচ আমরা যদি বিগত বছরের বাজেট বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হলো বা হলো না, কিংবা কী কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলো না- এসব বিষয় পর্যলোচনা করে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে বাজেট প্রণয়নে নামতাম, তা হলে একটি সুষ্ঠু ও বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো।

আমরা ২০১৭-২৮ অর্থবছরের একদম শেষপাদে এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, এই অর্থবছরের বাজেটে আমরা রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু ২০১৭-১৮ অর্থবছরই নয়, টানা ছয়টি অর্থবছরে আমরা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ, এসব অর্থ বছরের বাজেটে আমরা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্র যা নির্ধারণ করেছি, তা ছিল অবাস্তব ও উচ্চাভিলাষী। একই সাথে আমরা অর্জন করতে পারিনি কিছু লক্ষিত অর্থনৈতিক সূচক।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও কর কর্মকর্তারা মনে করেন, এসব ক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা, কর প্রশাসনের সংস্কার বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ব্যর্থতা। প্রধানত এসব কারণে আমরা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারি না। মনে হয়, এই ব্যর্থতার আরো কারণ রয়েছে। আমরা যখন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ও বাজেটের অঙ্ক নির্ধারণ করি তখন সরকারপ্রধান ও অর্থমন্ত্রীর মাথায় এক ধরনের পপুলিজম বা লোকানুবর্তিবাদের আবেশে আবিষ্ট হয়ে পড়েন। কিংবা বলা যায় আবিষ্ট থাকেন।

পপুলিজমের বা লোকানুবর্তিবাদের আরো কিছু গ্রহণযোগ্য পরিভাষা অনেকেই ব্যবহার করেন। এগুলোর মধ্যে আছে : লোকরঞ্জনাদ বা জনতুষ্টিবাদ। আজকের দিনে রক্ষণশীল পপুলিজম বা জনতুষ্টিবাদের মূল কথা হচ্ছে- জনগণের চাওয়া-পাওয়া অনুযায়ী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা বা ক্ষমতায় ঠিকে থাকা। তা যদি নৈতিকতা বা সমাজের দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধ বা আদর্শবিরোধী হয় কিংবা তা বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কাও থাকে, তবু জনগণকে খুশি করার জন্য সে অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি দেয়া। এই পপুলিজম আজ ব্যাপকভাবে কাজ করে আমাদের বাজেট প্রণয়নের সময়। সে জন্য বাজেট হয়ে ওঠে অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী ও অতি উঁচু অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণীমূলক। একটানা বিগত ছয়টি অর্থবছরে এই পপুলিজম প্রবলভাবে কাজ করেছে সরকারপ্রধান ও অর্থমন্ত্রীর মাথায়। সে জন্য আমরা বাজেট বাস্তবায়ন ও বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। আগামী অর্থবছরের বাজেট আসছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে। ফলে এই বাজেটে পপুলিজমের তীব্রতা আরো প্রবল হবে, সেটি সহজেই অনুমেয়। ধরেই নেয়া যায়, আগামী বাজেট হবে আরো অনেক বড় অঙ্কের। আর বাজেটে থাকবে জনতুষ্টিমূলক নানা প্রতিশ্রুতি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নিশ্চিতভাবেই আসছে বিশাল নির্বাচনী বাজেট। বাজেটের বিশাল আকার পপুলিজম বা জনতুষ্টিবাদেরই অংশ। তা ছাড়া, এরই মধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, বাজেটের অর্ধেক টাকাই যাচ্ছে ভোটারবান্ধব ১০ মন্ত্রণালয়ে। এটি জনতুষ্টিবাদেরই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এবারের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে চার লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার বরাদ্দ হচ্ছে জনসম্পৃক্ত ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১০টি মন্ত্রণালয়ে।

আমরা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, আমাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সরকার এরই মধ্যে রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে ২২৫ হাজার কোটি টাকা। এখন বাস্তবে দেখা গেছে, পুনর্নির্ধারিত এই টার্গেটও পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, কর কর্মকর্তারা এই অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সংগ্রহ করেছেন মাত্র ১৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। এ সময়ে রাজস্ব সংগ্রহের কথা ছিল ১৯০ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ধীরগতিতে চলে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রকৃত রাজস্ব আয় ১৭১ হাজার ৫১০ কোটির তুলনায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৪৫ শতাংশ। অথচ বিগত পাঁচ বছরে গড়ে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধিও হার ছিল গড়ে মাত্র ১৪.২৮ শতাংশ। এখন সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে রাজস্ব বোর্ডকে মে ও জুন এই দুই মাসে রাজস্ব আদায় করতে হবে আরো ৬৫ হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। যেখানে বিগত পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪.২৮ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছরে হঠাৎ করে সে লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ শতাংশে নির্ধারণ ছিল সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতারই পরিচায়ক।

আসলে সরকার যদি এর আগের বছরের রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত চিত্রটা লক্ষ করত, সে বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিত, তবে এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আসলে যেকোনো সরকারকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করতে হয় দেশের অর্থনীতির সার্বিক সবলতার সাথে তাল মিলিয়ে। যেখানে বিগত অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২০ শতাংশ, সেখানে পরের অর্থবছরে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ৪৫ শতাংশ নির্ধারণ ছিল সম্পূর্ণ অবাস্তব। রাজস্ব কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন, এবার রাজস্ব আয় ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার প্রধানতম কারণ হচ্ছে এই অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের কর ফাঁকি ঠেকানোয় দক্ষতার অভাবও ছিল প্রবল। রাজস্ব বোর্ড এও প্রচার করেছিল, নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় আরো অতিরিক্ত ২৪ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হবে চলতি অর্থবছরে, যা বাস্তবে ঘটেনি। সরকার চলতি অর্থবছরে উল্লেখযোগ্যমাত্রায় করদাতার সংখ্যা বাড়িয়েছে, কিন্তু সে তুলনায় কর আদায় বাড়াতে পারেনি। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি পড়েছে তিনটি ক্ষেত্রে : আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক।

আমাদের মাথায় রাখতে হবে চলতি অর্থবছরে আমাদের অগ্রাধিকারমলূক ‘ফাস্ট-ট্র্র্যাক’ প্রজেক্টগুলোর নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারের শতভাগ অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ পরিবহন পরিকল্পনাগুলো, বিশেষত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। সরকার ২০১৪ সালে হাতে নেয় ১০টি ফাস্ট-ট্র্যাক মেগাপ্রকল্প। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয় পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক, ঢাকার মেট্রোরেল, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন নির্মাণের ওপর। বিশষ করে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এসব জনতুষ্টিমূলক প্রকল্প এ সরকার হাতে নেয়। এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রকল্পের মোট বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি ১৭,১২,১,২৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়ে গেলেও কাজ হয়েছে প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম। ফলে এসব প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মাত্র ৫৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ছে। চলতি অর্থবছরে এর কাজের অগ্রগতি ঘটেছে মাত্র ৯ শতাংশ।

কারণ, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৪৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছিল। সহজেই অনুমেয় এই সেতু প্রকল্পের বাকি ৪৭ শতাংশ কাজ নির্ধারিত আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। পাঁচ মেট্রোরেল প্রকল্পের তিনটিরই গতি নেই। আর এসব প্রকল্প বিলম্বে বাস্তবায়নের অপর অর্থ নির্মাণ ব্যয় আরো লাখ লাখ কোটি বেড়ে যাওয়া। এ দিকে গত ২২ মে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদ পদ্মা সেতু মাল্টি লিঙ্ক প্রকল্পের ব্যয় ৪২৫৭.৯৪ কোটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৯২৫৮.১৩ কোটি টাকা। আগে এই ব্যয়ের পরিমাণ ধার্য করা হয়েছিল ৩৪৯৮৮.৮০ কোটি টাকা। ফলে এসব প্রকল্প থেকে যতটুকু লাভবান হওয়ার কথা সে সুযোগহারা হবো আমরা।

আমরা প্রতি অর্থবছরের শেষপ্রান্তে এসে বাজেটের আগে এমন একটি প্রবৃদ্ধি হার প্রকাশ করি, যা নিয়ে নিয়মিত নানা প্রশ্ন ওঠে। এবারো এই সময়টায় এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবারো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭.৬৫ শতাশ, যা নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে বিতর্ক উঠেছে। তারা বলছেন, এই প্রবৃদ্ধি হার অর্থবছরের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জিডিপির এই প্রাক্কলন নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরাও বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতিতে এই ৭.৬৫ শতাংশ হারের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। রফতানি আয়ের ও প্রবাসী আয়ের বর্তমান প্রবৃদ্ধি হারও এই ৭.৬৫ শতাংশ হারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

চলতি অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে খুবই প্রান্তিকভাবে। শিল্প খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে নামমাত্র। শ্রমিকদের আয়ে পতন ঘটেছে। ব্যাংক খাতে সারা বছর ধরে চলেছে এক ধরনের অস্থিরতা। মূলধন হারিয়ে অনেক ব্যাংক ফতুর। খেলাপি ঋণের পাহাড় জমেছে। ব্যাংকগুলো উৎপাদন খাতে ঋণ দিতে পারেনি সেভাবে। এবার নিয়ে এক নাগাড়ে চার বছর সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার ৭ শতাংশের উপরে দেখাচ্ছে। কিন্তু এই চার বছরের একটিতেও অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ মহল, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এই হারের সাথে একমত হতে পারেনি। আসলে পপুলিজমের বশবর্তী হয়ে সরকার প্রতি বছর এ ধরনের অবাস্তব প্রবৃদ্ধি হার ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বাহবা নিতে চায়। বাজেটেও ঘোষিত হয় একইভাবে উচ্চাভিলাষী অঙ্ক নিয়ে। কিন্তু প্রতি বছরের বাজেট বাস্তবায়নে নেমে আসে নানা ধরনের ব্যর্থতা। তা কাটিয়ে উঠতে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেটে চলে কাটছাঁট। ব্যাংক থেকে নেয়া হয় অস্বাভাবিক হারে ঋণ। অনেক বাজেট থাকে অবাস্তবায়িত। বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ার কারণে বাড়ে দফায় দফায় বাজেট ব্যয়। আর এসব দায়ভার পড়ে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর।

একই ধরনের ঘটনা ঘটে সরকারের মূল্যস্ফীতির হার ঘোষণার বেলায়। এ বছরটিতেই এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়নি। সরকার চলতি বছরের বাজেটে যে পরিমাণ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, সরকারি হিসাব মতে ঘোষিত মূল্যস্ফীতির হার এর কাছাকাছি। অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন ৫.৫ শতাংশ। অপর দিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, এই হার ৫.৬৩ শতাংশ। কিন্তু ভোক্তারা মনে করে, বাজারের পণ্যমূল্যের সাথে মূল্যস্ফীতির এই হার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবারের বোরো ধানের বাম্পার ফলনের ফলে চালের দাম কিছুটা কমে এসেছে। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে চলা অব্যাহত আছেই। ফলে সাধারণ মানুষকে মূল্যস্ফীতির ফাঁদে আটকে থেকে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে বাংলাদেশে একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে- এ দেশে যখন খাদ্যপণ্যের দাম কমে, তখন অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ে। আবার যখন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে, তখন অন্যান্য পণ্যের দাম কমে। অথচ অন্যান্য দেশে দেখা যায়- যখন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে তখন অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ে। আবার যখন খাদ্যপণ্যের দাম কমে তখন অন্যান্য পণ্যের দামও কমে।

আমরা দেখেছি, চলতি অর্থবছরে কিছু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট খাদ্যপণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে চালের দাম বাড়িয়েছে। সরকার এই সিন্ডেকেট ভাঙতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। সার্বিকভাবে বলতে গেলে সরকার বরাবর বাজারের পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।
শেষ কথা হচ্ছে, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি মাথায় রেখে নতুন বাজেট প্রণয়ন করি না। বাজেটে থাকে জনতুষ্টির ছাপ। ফলে বাজেটের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় পপুলিজমের ওপর নির্ভর করে। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে থাকে নানা ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পূর্ববর্তী অর্থবছরগুলোর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই বাজেট তৈরি করতে হবে। আর এটাই হচ্ছে সার্থক বাজেট সৃষ্টির মূল কথা। এ ধরনের বাজেটে জাতি উপকৃত হয়। জাতি বেঁচে যায় নানা অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকেও।

 


আরো সংবাদ



premium cement