২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চকবাজারের ইফতার : রঙের ফিচার

-

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার ইফতারের খ্যাতি অনেক পুরনো। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য যেমন চকবাজারের সুনাম রয়েছে, পাশাপাশি দেশীয় ঐতিহ্যবাহী নানা স্বাদের খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ চকবাজার। চকবাজারের বাহারি ইফতারের খবর কে না জানে! বড়বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবারের নাম। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে চকবাজার এলাকায় গেলে চোখে পড়বে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিক্রেতারা ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’ ঠিক এভাবেই চিরচেনা সুরে ডাকছেন। আর ক্রেতারা তাদের ডাকে সারা দিয়ে ভিড় করছেন চকবাজারের ইফতারের দোকানগুলোতে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ও খানদানি ইফতারের টানে ক্রেতারা রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন এই চকবাজারে। মানুষের হইচই বাহারি ইফতারিরর আয়োজন, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় আর বিকিকিনিতে রোজার প্রথম দিন থেকেই জমে উঠেছে ইফতার বাজার।
চকবাজারের খাবার ছাড়া যেন ইফতার আয়োজন সম্পন্ন হয় না অনেক পরিবারের। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও ইফতারের জন্য ছুটে যান চকবাজার। দুপুরের পর থেকেই শায়েস্তা খাঁর আমলের শাহি মসজিদের সামনের রাস্তার জায়গাজুড়ে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা ইফতারির দোকানগুলোতে বাহারি ইফতারের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে দোকান তৈরি করে থাকেন এখানকার দোকানিরা। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে চকবাজারের ইফতার বাজার। পুরান ঢাকাবাসীর ইফতারির আয়োজনে থাকে চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের। বড় বাপের পোলায় খায় ছাড়াও সুতি কাবাব, জালি কাবাব, মুঠি জালি কাবার, নারগিস চাপ, শাক ফুলুরি, টিকা কাবাব, ডিম চপ, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, দই বড়া, হালিম, নুরানি লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, পরোটা, ছোলা, পিঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ফালুদা, শাহি জিলাপি ও বোম্বে জিলাপির কদর রয়েছে সমানভাবে। এ ব্যাপারে কথা হয় রফিকুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতার সাথে। তিনি জানান, সারা দেশের মানুষের কাছে পুরান ঢাকার ইফতার কদর অনেক আগে থেকেই। গুণে মানের দিক থেকে এখানকার ইফতার অতুলনীয়। তাই সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
বড় বাপের পোলায় খায় এই খাবারের আইটেমটি পুরান ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কামাল মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির সৃষ্টি। যিনি কামেল মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করতেন। প্রায় ৭০-৭৫ বছর আগে তিনিই প্রথম এই খাবারটি তৈরি করেন বলে জানা যায়। ইফতারি আয়োজন এখন আর পুরান ঢাকার চকবাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। লালবাগ, ওয়ারী, টিকাটুলি, নারিন্দা, ধোলাইখাল, সদরঘাট, নওয়াবপুর, বংশাল, বাবুবাজার, নয়াবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাহারি ইফতারির বাজার। তবুও চকবাজার-এর ইফতারের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে একইভাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement