০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এখন কোথায় আছেন সেই ওসি মোয়াজ্জেম?

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন - সংগৃহীত

মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দী ইন্টারনেটে ছড়ানোর অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেফতারি পরোয়ানা অবশেষে পৌঁছেছে তার বদলিকৃত কর্মস্থল রংপুর ডিআইজি অফিসে। জারির ১২ দিনের মাথায় পরোয়ানাটি শনিবার বিকেলে রংপুরে পৌঁছে। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস-সামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে তার বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছিলেন। তবে ওসি মোয়াজ্জেম এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। 

রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য গতকাল রোববার সাংবাদিকদের জানান, পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দেয়া গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশের কপি আমার কার্যালয়ে পৌঁছেছে। বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা তামিল করা হবে। তবে তিনি কোথায় আছেন তা এখনো ট্রেস আউট করা যায়নি। তাকে গ্রেফতারে অনুসন্ধান ও অভিযান চলছে। তিনি বলেন, ছুটি নিয়ে তিনি ফেনীতে মামলার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আনঅথরাইজড কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির স্টাফ অফিসার এএসপি শরিফুল আলম জানান, আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত হত্যার পর গত ১০ এপ্রিল ওসি মেয়াজ্জেমকে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় রংপুর রেঞ্জে। ৮ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১০ মে তিনি রংপুর রেঞ্জে যোগদান করেন। যোগদানের পর নুসরাতের ঘটনার সাক্ষ্য দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তলবে তিনি ঢাকায় যান। ঢাকায় থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামের একটি মামলার সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য কাগজ আসে। ২৯ মে বুধবার সেই সাক্ষ্য হওয়ার কথা। বিষয়টি আমরা তাকে জানানোর পর তিনি রংপুরে না ফিরে চট্টগ্রামে যেতে চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয়। এরপর তিনি আর রংপুরে ফেরেননি।

গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধে সোনাগাজী থানায় যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এজহারের পর তদন্তের জন্য সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে থানায় ডেকে নিয়ে জবানবন্দী নেন। তিনি নিজের মোবাইলে জবানবন্দীর ভিডিও রেকর্ড করে তা ইন্টারনেটেও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৬ এপ্রিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে নুসরাতকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। 

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) সূত্র নয়া দিগন্তকে জানায়, নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে ওসি মোয়াজ্জেমের নেয়া নুসরাতের জবানবন্দীর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। 

এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সুমন জানান, দেশ-বিদেশে আলোচিত এতবড় একটি ঘটনায় একজন পুলিশ অফিসার নিজের ফোনে জবানবন্দী রেকর্ড করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে অপরাধ করলেন। মামলা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেন। তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা দিলো। কিন্তু পরোয়ানা জারির ১৩ দিনেও তিনি গ্রেফতার হলেন না। পুলিশ বলছে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কেউ বিশ্বাস করেন না।


আরো সংবাদ



premium cement