২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অভিমত : পাট শিল্পকে রক্ষা করুন

-

বাংলাদেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের কথা এখন তেমন শোনা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বেশির ভাগ এলাকায় এক সময় ধান ও পাটের চাষ বেশি হতো। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী আমল থেকে বহু বছর পর্যন্ত পাট উৎপাদনে আমাদের দেশ পৃথিবীতে প্রথম স্থানে ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে পাট উৎপাদনে আমরা দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চক্রান্তে এ শিল্প বর্তমানে চরম অবহেলায় নিপতিত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ দেশের পাঁচ কোটিরও অধিক মানুষ পাট ও পাট শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পলিথিন বা সিনথেটিক আঁশের ক্রমাগত বিস্তারে পাটের কদর অনেকটা কমে গেছে। অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। লোকসান ও নানা জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত সরকার পৃথিবীর বৃহত্তম পাটকল আদমজীকে বন্ধ কর দেয়। যে কয়টি পাটকল এখনো চলছে, সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের প্রায় রাস্তায় দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে পাটের উৎপাদন লাভজনক না হওয়ায় অনেক কৃষক পাট চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের সরকারগুলোর অদূরদর্শী ও অবিবেচনাপ্রসূত নীতির কারণে আমরাই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছি আমাদের অতি সম্ভাবনাময় এ সোনালি শিল্পকে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত বর্তমানে পাট উৎপাদনে পৃথিবীতে প্রথম এবং পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতেও প্রথম স্থানে রয়েছে। আমাদের দেশের পাটের চাষ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে, কৃষকরা পাচ্ছেন না তাদের ন্যায্য দাম। ফলে হারাচ্ছি বাজার, এমনকি ভারতের বাজারও আমরা পাচ্ছি না। বাংলাদেশের মাটি পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আগে বৈশি^ক উৎপাদনের বেশির ভাগই হতো বাংলাদেশে। তারপরও বিশে^ যে পরিমাণ পাট উৎপাদন হয়, তার ২৬ শতাংশেরও বেশি হয় বাংলাদেশেই। আমাদের বিজ্ঞানীরা এর মধ্যে পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছেন। গবেষণার মাধ্যমে পাটের উন্নত জাত আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে, যাতে পাটের উৎপাদন ও মান দুটোই ভালো হয়।
দেশে বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে ৯৫ লাখ থেকে এক কোটি বেল পাট উৎপাদন হয়। এ পাট দেশের পাটকলগুলোতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুতলি বা চটের বস্তা তৈরির সাধারণ পাটকল ছাড়াও দেশে মোট ৯৮টি পাটসুতা প্রস্তুতকারী কারখানা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পাট রফতানি হয়, তার মধ্যে পাটসুতাই ৬৮ শতাংশ। বর্তমানে বছরে প্রায় ছয় লাখ মেট্রিক টন পাটসুতা রফতানি হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত তোষা পাট থেকে তৈরি বিশেষ ধরনের রঙিন সুতা এখন ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারতসহ অনেক দেশে রফতানি হচ্ছে। পাট থেকে কয়েক ধাপে প্রক্রিয়াকরণের পর কালার কোটেড, টাটমি, কার্পেট, হোপ টুইনসহ নানা ধরনের সুতা তৈরি হচ্ছে। এসব সুতা বিদেশে নার্সারি, কারু শিল্প, কার্পেট ও পাপোশ তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও দক্ষ শ্রমিক সঙ্কটের কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী সুতা উৎপাদন করতে পারছি না। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৯ এ পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ। এই তিন মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ২২ কোটি ডলার।
দুনিয়াব্যাপী প্লাস্টিক-পলিথিনের অপরিমিত ব্যবহারের ফলে পানি, মাটি ও বায়ুমণ্ডল ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জীবজগতের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিবেশবাদীসহ সচেতন নাগরিক প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে দুনিয়াব্যাপী আন্দোলন জোরদার করছে। ৩২টি দেশ এরই মধ্যে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। ফলে পাটের সুতা ও ব্যাগের কদর বৃদ্ধির বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগটি বাংলাদেশকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে হবে।
পাট খাতকে বাঁচাতে হলে, পাট শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পাট উৎপাদন বাড়াতে হবে, কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা পাটের নায্য দাম পায়। বৃহত্তম পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুটমিলস করপোরেশনকে (বিজেএমসি) কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার ১৯টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এ সংখ্যা অবশ্যই বাড়াতে হবে। সিন্ডিকেট চক্র ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অশুভ আঁতাত গুঁড়িয়ে দিয়ে যথাসময়ে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এ শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অত্যন্ত পুরনো। মেশিনারিগুলো বদলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ঘটাতে হবে। পাটকলগুলোর পাটপণ্য বাজারজাত করার সমস্যা চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এখানে নিয়োজিত শ্রমিক, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সর্বোপরি পাটকলগুলোর মানোন্নয়নে সরকারকে মনোযাগী হতে হবে। তবেই বাংলাদেশের সোনালি আঁশ তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে। পাটের অর্থনীতি তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। হ
মো: মাঈন উদ্দীন
সধরহ৭০৬@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

সকল