২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

  বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : দেশে-বিদেশে

  সময়-অসময়
-

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা, আলোচনা, সমালোচনা ও অভিযোগ চাউর হচ্ছে। সব সরকারই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বদ্ধপরিকর হওয়ার কথা দৃঢ়তার সাথে বারবার নিশ্চিত করেছেন, যদিও কথাগুলো একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পর্যালোচনার বিষয় এই যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কি নিশ্চিত হয়েছে, নাকি দিন দিন অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে? বিচারপতি নিয়োগে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কি (সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৯৫ মোতাবেক) নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সাথে সুপারিশ করতে পারছেন, নাকি সরকারের সিদ্ধান্তই প্রধান বিচারপতির কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়নের দাবি সরকার উপেক্ষা করছে প্রতিবার, যদিও সরকার থেকে বারবার আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে কমিটমেন্ট করার পরও সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেনি। এ সম্পর্কে জাতীয় পত্রিকায় (সূত্র : ২৩-১০-২০১৯) প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ‘উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম থেমে আছে। কিন্তু থেমে নেই নিয়োগ। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রায় দুই বছর আগে আইনটির খসড়া প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল সরকার। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগকে প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়ে ২০১৭ সালের মে মাসের মধ্যে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করার টার্গেটও দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে খসড়াটি তৈরি করা হয়। বিচারক নিয়োগে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত থাকলেও গত দুই বছরের অধিক সময়ে এর কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি।’
প্রভাববিহীন বিচারব্যবস্থা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর সদিচ্ছার ওপর। কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ যতই স্বাধীন হোক না কেন, সেখানে রাষ্ট্র কর্ণধারকে কোনো না কোনো কারণে অযাচিত খুশি রাখা যেন একটি অলিখিত কনভেনশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিশ্বসভ্যতা অনেক এগিয়ে, যুগ যুগ ধরে অনুকরণ করার মতো দৃষ্টান্ত কোথাও না কোথাও এখনো রয়েছে। যেমনÑ তিউনিসিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ তার বিচারক স্ত্রীকে পাঁচ বছরের জন্য ছুটিতে যেতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার স্ত্রী যত দিন ছুটিতে থাকবেন তত দিন তাকে কোনো বেতনভাতা দেয়া হবে না। কায়েস সাঈদ জানিয়েছেন, তিনি পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ সময়টায় বিচার বিভাগে তার স্ত্রীর উপস্থিতির কারণে ওই বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক তিনি তা চান না (সূত্র : জাতীয় পত্রিকা, ২৬-১০-২০১৯)।’ বিচার বিভাগ যাতে প্রভাবিত না হয় এ জন্য রাষ্ট্র কর্ণধারেই উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষ বিভিন্ন কারণে প্রভাবান্বিত হয়, আবার অবচেতন মনেও প্রভাবান্বিত হতে পারে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিউনিসিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্য বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতে চান না বলেই তার পক্ষে ওই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে।
বিচার বিভাগ সভ্যতার সোপান এবং সবার চেয়ে সম্মানজনক আসনে রয়েছে বিচার বিভাগ। বিশ্ব বিচারব্যবস্থার দিকে যদি দৃষ্টি দেয়া যায় তবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে কতটুকু স্বাধীন তা অনুমান করা যায়। এখানে আমেরিকার বিচারব্যবস্থা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমনÑ ‘‘দাতব্য তহবিলের অর্থ নির্বাচনী প্রচারণায় খরচ করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গত ৭ নভেম্বর ২০ লাখ ডলার জরিমানা করেছেন নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। এতে বিচারক স্যালিয়ান স্কারপুলা জরিমানার এই অর্থ ট্রাম্পের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই এমন আটটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্বার্থে তার নামের ওই দাতব্য সংস্থাটি ব্যবহৃত হতো বলে কৌঁসুলিদের অভিযোগ করার পর ২০১৮ সালে দ্য ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ফাউন্ডেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। স্কারপুলা তার রায়ে ট্রাম্প এবং তার তিন সন্তান তাদের পরিচালিত এ দাতব্য প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন। ভেটেরানদের জন্য তোলা অর্থ ২০১৬ সালের আইওয়া প্রাইমারিতে খরচ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘জিম্মাদারের দায়িত্ব লঙ্ঘন’ করেছেন, বলেছেন নিউ ইয়র্কের এ বিচারক। ট্রাম্পকে জরিমানার পাশাপাশি ফাউন্ডেশনটির বাকি তিন পরিচালক ডোনাল্ড জুনিয়র, এরিক ও ইভাংকাকে ‘দাতব্য সংস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও পরিচালকদের’ কাছ থেকে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণও নিতে হবে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেতিসিয়া জেমস।”
তবে এ সম্পর্কে ভিন্নতাও আছে। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইদি আমিনের বিরুদ্ধে রায় দেয়ায় চার দিন পর ওই রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতির লাস ড্রেনে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদায় ঘণ্টাও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে তিনি কালের সাক্ষী হয়ে এখনো বেঁচে আছেন, পৃথিবীর আলোবাতাস ভোগ করছেন। এ ব্যতিক্রমতা নিয়েই বিচার বিভাগকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ অনেক, তদুপরি ওই রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তারা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অথচ এ দৃষ্টান্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে দেখাবে, এটাই সভ্যতা প্রত্যাশা করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়েও অনেক কথা আছে। কঠিন থেকে কঠিনতর আইন প্রণয়ন করে সাংবাদিকদের হাতকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে সাংবাদিকদের লেখনী নিজেরাই সঙ্কুচিত করে ফেলেছেন। এর পেছনের কারণও বলা যাবে না। বাংলাদেশে কিছু প্রধান সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও আশঙ্কা করছেন। যেমন-ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন। তিন ফসলি জমিতে কোনো মিল কলকারখানা গড়ে তোলা বা ফসলি জমিতে আবাসন প্রকল্প না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ফলাওভাবে প্রচার করার পর বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প করার জন্য ভূমিদস্যুরা কৃষকের জমি ভরাট করে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। প্রতিনিয়তই লোভী ব্যক্তিরা রাজনীতির ব্যানারে জনগণের রক্ত চুষে খাচ্ছে। এসব ঘটনায় সাংবাদিকতার কলম যেভাবে গর্জে ওঠার কথা ছিল সে অনুপাতে গর্জে উঠছে না। এর পেছনেও বিস্তর ঘটনা ও সংবাদ ভাইরাল হচ্ছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে রোধ করার জন্য কৌশলে সরকার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিভিন্ন জটিল আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। ফলে দেশে যেমন এখন রাজনীতি নেই, সেরূপই গণমাধ্যম জগতেও সাংবাদিকতা ভাটা পড়েছেÑ পেছনের কারণ অনেক, কোথাও ব্যক্তিগত আবার কোথাও সমষ্টিগত। হ
লেখক : কলামিস্ট ও আইনজীবী (আপিল বিভাগ)
ঃধরসঁৎধষধসশযধহফধশবৎ@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না

সকল