২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অশুচির ‘শুদ্ধাচার’

-

যার নিজেরই শুদ্ধতা নেই, সে অন্যকে বিশুদ্ধ করবে কিভাবে? শুদ্ধাচারী হতে গেলে তো সবার আগে নিজেকেই সংশোধন হতে হবে। আমরা আয়নায় নিজেদের অবয়ব দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। নিজের কর্মের বৈধতা না থাকলেও অন্যের কাজের শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে আমরা খুবই করিৎকর্মা। তাই আমাদের সমাজে অশুচিই এখন রীতিমতো শুদ্ধাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দুর্গন্ধ দূর করতে সুগন্ধির পরিবর্তে কদর্যতাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলাফলও হচ্ছে অন্তঃসারশূন্য।
এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশে অবক্ষয় ও অনৈতিকতার শেকড়-বাকড় ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনÑ কোনো ক্ষেত্রই এই সর্বনাশা প্রবণতা থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ বা প্রতিবিধান করে সমাজ ও রাষ্ট্রে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা যাদের দায়িত্ব, তারা নিজেরাই এসব মুদ্রাদোষ থেকে মুক্ত নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বিস্তৃতিও ঘটেছে আশঙ্কাজনকভাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব এবং নির্বাচনী ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের দায়ে মামলা এমন অভিযোগকে জোরালো ভিত্তি দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন, বিরোধী দলের ওপর জুলুম-নির্যাচন, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংসের অভিযোগ তো নতুন নয়। মূলত দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর সংবিধান সংরক্ষণ করে গণমানুষের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। কিন্তু আমাদের এ জাতির চরম দুর্ভাগ্য, সেই নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি ও বিচার বিভাগের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি সাবেক একজন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনজনিত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর তার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তো রয়েছেই। ফলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন এবং অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রদত্ত বিভিন্ন রায়ের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সঙ্গত অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অবক্ষয় ও অশুচির ঢেউ আছড়ে পড়েছে আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বত্রই। বাদ যাচ্ছে না রাষ্ট্রের অঙ্গ ও উপ-অঙ্গগুলোও। সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্র ও সরকার নৈতিকতা ও সততার মানদণ্ডে কার্য সম্পাদন করতে পারছে না বা করছে না। অশুচি যে কখনো শুদ্ধাচারী হতে পারে, এসবই তার যথোপযুক্ত প্রমাণ।
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গÑ নির্বাহী তথা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। নির্বাহী বিভাগের মূল কাজ আইন অনুযায়ী শাসনকাজ পরিচালনা করা। আইন বিভাগের কর্তব্য হলো, নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরনো আইন সংশোধন। আর আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে সুবিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। সাধারণভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে কেন্দ্র করে যে বিভাগ গড়ে ওঠে, তাকেই এক কথায় ‘নির্বাহী বিভাগ’ বলা হয়। নির্বাহী বিভাগের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ব্যুরোক্রেসি বা আমলাতন্ত্র। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ স্বতন্ত্র সত্তা হলেও এগুলো একে অন্যের পরিপূরক।
অধ্যাপক গার্নারের মতে, নির্বাহী বিভাগ তথা শাসন বিভাগের কার্যাবলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়Ñ ১. অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বিষয়ক (অফসরহরংঃৎধঃরাব), ২. পররাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও বৈদেশিক সম্পর্ক (উরঢ়ষড়সধঃরপ), ৩. সামরিক ব্যবস্থা (গরষরঃধৎু), ৪. বিচারবিষয়ক ক্ষমতা (ঔঁফরপরধষ) ও ৫. আইনবিষয়ক ক্ষমতা (খবমরংষধঃরাব)।
নির্বাহী বিভাগকে সফল ও সার্থক করে তুলতে উপরিউক্ত সব উপবিভাগের একটি কার্যকর সেতুবন্ধন জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গই যথাযথভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারছে না। বরং এই অঙ্গগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছেন তারাও রাষ্ট্র, জনগণ, আইন-সংবিধান ও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, অবক্ষয়হীন ও মূল্যবোধভিত্তিক রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার গঠন করতে হলে সবার আগে রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর অস্বচ্ছতা ও অবক্ষয় রোধ করতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রের সাথে অন্য ইউনিটগুলোর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। একই সাথেÑ এই অঙ্গগুলো পরিচালনার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকেন, তাদেরকেও রাষ্ট্রীয় সংবিধান, প্রচলিত আইন, জনগণ ও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকেই নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিজেকে কদর্য ও অশুচির নিগঢ়ে আবদ্ধ রেখে অন্যদের শ্বেত-শুভ্র করার কর্মকাণ্ড কখনোই সফল ও সার্থক হয়নি আর হবেও না। কারণ, নাপাকি দিয়ে কখনোই কোনো কিছুকে পাক করা যায় না।
‘আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও’ এই আপ্তবাক্যটি আমাদের সমাজে প্রচলিত। কিন্তু কথাটার প্রতিফলন প্রায় সব ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কোনো ক্ষেত্রেই এর পুরোপুরি প্রতিফলন লক্ষ করা যায় না। রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গই যথাযথভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারছে না অথবা করতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ রাষ্ট্রকে সার্থক করে তোলার জন্য এর সব অঙ্গ ও উপ-অঙ্গের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।
শাসন বিভাগের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে আমলাতন্ত্র বা ব্যুরোক্রেসি। সংবিধানে আমলাদের ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দলবাজ আমলাদের কারণে প্রজাতন্ত্র যে তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তা খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এই সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা এবং গ্রেফতার অভিযানকে আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দায়িত্ব বলে দাবি করা হলেও নির্বাচনে ভোট চুরি রোধে প্রশাসনের ভূমিকা গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এমন গর্হিত ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজকে প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগও জোরালো ভিত্তি পেয়েছে এবং পরে এর অবগুণ্ঠনও উন্মোচিত হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ও সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন। আমাদের সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'ঊাবৎু ঢ়বৎংড়হ রহ ঃযব ংবৎারপব ড়ভ ঃযব ৎবঢ়ঁনষরপ যধং ধ ফঁঃু ঃড় ংঃৎরাব ধঃ ধষষ ঃরসব ঃড় ংবৎাব ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব.' অর্থাৎ ‘সব সময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ কিন্তু আমাদের দেশের সিভিল প্রশাসন কি সেই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ? উত্তরটা নিঃসন্দেহে নেতিবাচকই হওয়ার কথা।
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমলাদের অপেশাদার ও দলবাজ হওয়ার কোনো সুযোগ ও কারণ নেই। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অগ (ঙমম) বলেন, ('ঞযব নড়ফু ড়ভ ঃযব পরারষ ংবৎাধহঃং রং ধহ বীঢ়বৎঃ, ঢ়ৎড়ভবংংরড়হধষ, হড়হ-ঢ়ড়ষরঃরপধষ, ঢ়বৎসধহবহঃ ধহফ ংঁনড়ৎফরহধঃব ংঃধভভ.') অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা হবে সুদক্ষ, পেশাদার, অধীনস্থ কর্মকর্তা যারা স্থায়ীভাবে চাকরি করেন এবং রাজনীতির সাথে যাদের কোনো সংস্রব নেই’।
আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও ব্যর্থতার অভিযোগ নতুন নয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেছে সুপরিচিত নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিকÑ সুজন’। সংগঠনটি একাদশ সংসদ নির্বাচনে নানা অনিয়মের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের জোর দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির ভাষায়, ওই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের ৪০ হাজার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১২৭টি কেন্দ্রে, ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০৪ কেন্দ্রে, ৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮ কেন্দ্রে এবং ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬ ভোটকেন্দ্রে। সম্প্রতি ইসির দেয়া কেন্দ্রভিত্তিক ফল অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে ৬৯টি কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে শতভাগ ভোট গ্রহণ স্বাভাবিক নয় বলে স্বীকার করেছেন সিইসি নিজেই। তবে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে এখন আর ‘করার কিছু নেই’। সুজন-এর দেয়া তথ্য মতে, গোপালগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের ৩৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৩৯টি কেন্দ্রে প্রদত্ত (৬১.৭৫ শতাংশ) সব ভোট নৌকায় পড়েছে, যা অবিশ্বাস্য বলেই মনে করা যায়।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শুধু ভোটে সীমাহীন অনিয়মই নয়, বরং নির্বাচন কমিশনও ফলাফল ‘জালিয়াতি’ করেছে বলে সুজন অভিযোগ করেছে। দাবি করা হয়েছে, ঢাকা-১০ আসনে তাৎক্ষণিক ফল ঘোষণায় ৬৯.৯২ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানানো হলেও কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে তা বেড়ে ৭৩.০৯ শতাংশ, ঢাকা-১১ আসনে ৬০.৪৬ শতাংশের জায়গায় ৬২.৬৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে ৭৪.৪৪ শতাংশের বিপরীতে ৭৬.৭২ শতাংশ এবং গোপালগঞ্জ-৩ আসনে ৯৩.২৪ শতাংশের পরিবর্তে ৯৪.৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়। অনিয়ম তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রাম-১০ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থীর বেসরকারি ফলাফলে প্রাপ্ত ভোট ‘শূন্য’ দেখানো হলেও কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে দেখানো হয়েছে যে, ওই প্রার্থী ২৪৩টি ভোট পেয়েছেন।
ব্যালট পেপার এবং ইভিএমে ভোট প্রদানের মধ্যে ভোটের পার্থক্য ২৯.৩৮ শতাংশ উল্লেখ করে জানানো হয়, এবার নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ছয়টি আসনে সম্পূর্ণরূপে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। ৩০০ আসনে গড় ভোট পড়েছে ৮০.২০ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যালট পেপারে ভোট নেয়া ২৯৪টি আসনের গড় ভোট ৮০.৮০ শতাংশ হলেও ইভিএমে গড় ভোট পড়েছে ৫১.৪২ শতাংশ। যে ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে, তা ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৭৫টি নির্বাচনী এলাকার ৫৮৭টি ভোটকেন্দ্রে প্রদত্ত সব ভোট নৌকা প্রতীকে পড়েছে, যা ‘সুস্থ বিবেকসম্পন্ন কোনো মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না’।
তথ্যগুলো সুজন-এর কোনো গবেষণার তথ্য-উপাত্ত নয় বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেও এসব তথ্য দেয়া হয়নি, বরং এগুলো খোদ নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত তথ্য। বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক রিপোর্ট করেÑ টিআইবি থেকে শুরু করে অন্যান্য সংগঠন- তখন সরকার বা ইসির পক্ষে বলা হয়, তাদের তথ্যের উৎস সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য দিয়ে ‘সুজন’ যে বোমা ফাটিয়েছে তা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান খোদ নির্বাচন কমিশনকেই এবার বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
এসব অভিযোগ শুধু নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নয়, বরং জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধেও নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এই বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অপরাধ ও পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অথচ তাদের দায়িত্ব হলো আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের। খোদ পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ঘুষ নেয়া, নানাভাবে হয়রানি, বিয়ের পর স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দেয়া ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মামলা দায়েরের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া, জমিসংক্রান্ত এবং পুলিশ সদস্যের হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তা চাওয়ার অভিযোগ আসছে তাদের বিরুদ্ধেই। এগুলোর মধ্যে ঘুষ ও হয়রানির পর ভরণপোষণ না দেয়ার জন্য পুলিশ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগই বেশি। মাদক ব্যবসা, বিক্রি ও সেবনের অভিযোগও আছে। গত ৩১ জানুয়ারি সদর দফতর থেকে সারা দেশের পুলিশের জন্য ১০টি নির্দেশনা দেয়া হয়। যারা মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেন, তাদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দেয়া হয়। তার সাথে এবার নতুন অভিযোগ যুক্ত হয়েছে, নির্বাচনী ক্ষমতাসীনদের পক্ষে প্রভাব খাটানো।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অশুচি ও অশুদ্ধতা এখন আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। প্রজাতন্ত্রের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম’ মনে করতে শুরু করেছে। আর কর্মচারীরা বনে গেছেন জনগণের প্রভু। মনে রাখা দরকার, রাজতন্ত্রের কর্মচারী ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এক নয়। রাজতন্ত্রের কর্মচারীরা রাজার বেতনভুক এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নাগরিকদের বেতনভুক। ঔপনিবেশিক শাসকরা স্বাধীনতাকামীদের যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিকামী বাংলাদেশীদের যেভাবে নির্যাতন করেছে, স্বাধীন দেশের গণমানুষের অধিকার হরণ এবং সে কাজকে আরো নির্বিঘœ করতে জনগণের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগপত্র এবং নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আর দাবি করা হচ্ছে তারা নিজেরাই ‘শুদ্ধাচারী’। এ কথা মনে রাখতে হবে, অশুচি কখনো শুদ্ধাচারী হতে পারে না, বরং শুদ্ধাচারী হতে হলে আগে নিজেকেই শুদ্ধ করতে হবে। হ
ংসসলড়ু@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement