২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : শিল্প খাতে বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী কে?

-

এককালে যা ছিল দেশের অন্যতম লাভজনক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, লোকসানে তা আজ স্থবির। কোটি কোটি টাকা লোকসানের কারণে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে। অথচ নেই কোনো সংস্কার। বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃষিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলসের কথা বলছি। ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা প্রতি বছর সরকারকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব প্রদান করে আসছেন। সেই প্রতিষ্ঠানই আজ অপরাজনীতি এবং অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজদের কারণে ধ্বংসের মুখে পতিত প্রায়। রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস ঠেকানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে। অথচ কেউ কেউ মাস শেষে কাজ না করেই হাজার হাজার টাকা বেতনভাতা নিচ্ছে। তাদের দেখে দিন দিন গজিয়ে ওঠা অনেক নেতা, পাতি নেতা, উপনেতা সরাসরি অপরাজনীতি করে প্রতিষ্ঠানের কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। এতে দিন দিন প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়ে দেউলিয়া হতে যাচ্ছে। অন্য দিকে চাষিদের কাছ থেকে বাকিতে কেনা আখের আনুমানিক ৩০-৩৫ কোটি টাকা দীর্ঘ দিন ধরে পরিশোধ করা হচ্ছে না। শ্রমিক-কর্মচারীরা পাচ্ছেন না মাসের পর মাস বেতনভাতা। যদিও পান তাও আবার কম। এটা খুবই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক। স্বাধীনতার আগে ও পরে আমরা দেখেছি, অনেকেই জাতীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকেও শ্রমিক রাজনীতি করতেন। তা ছিল খুব গোপনভাবে। কিন্তু আজ প্রকাশ্যে জাতীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে শ্রমিক রাজনীতি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অনেকেই তা দেখে নিজেরাও জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি শ্রমিক রাজনীতির হর্তাকর্তা হয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। তারা কাজ না করে রাজনীতি করছেন এবং কর্মস্থলে না এসে সারা দিন রাজনীতির মাঠে ময়দানে বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করে সামাজিক মাধ্যমে ছবি আপলোড দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর ক্ষমতার এই দাপট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে হাত গুটিয়ে বসে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, নাটোর জেলার লালপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের একজন স্থায়ী কর্মচারী বিশেষত আখ মাড়াই মওসুমে তার চাকরি সার্বক্ষণিক। অথচ তিনি চাকরিতে সময় না দিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে দলীয় মিছিল-মিটিং ও দলীয় প্রচার নিয়ে ব্যস্ত। অভিযোগ আছে, সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কেউ তাকে কিছু বলার সাহস পর্যন্ত রাখে না। শুধু কি তাই? একই মিলে চাকরি করে ওই মিলের রাস্তা উন্নয়ন খাতের সদস্যও তিনি, যা শ্রম আইন পরিপন্থী এবং বিএসএফআইসির প্রবিধানমালার লঙ্ঘন। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর অষ্টম অধ্যায়ের বিবিধ ধারা ৮৭ তে বলা হয়েছে, ‘একজন চাকরিজীবী কোনো সঙ্ঘের সাথে, প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা অঙ্গসংগঠনের সাথে কোনোরূপ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না।’ কিন্তু আইনের কোনো তোয়াক্কাই নেই। আইন ভঙ্গ করে অনেকেই দেশ ও জাতির মান ক্ষুণœ করছে। তাই অবিলম্বে শ্রম আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
খন্দকার শহিদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন


আরো সংবাদ



premium cement