২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব দিবস

অরক্ষিত ও বিপন্ন মেধাস্বত্ব

-

প্রতিটি মানুষের তার সৃষ্টিকর্মের ওপর নিজের অধিকার সবচেয়ে বেশি। মানুষ মৌলিক কিছু সৃষ্টি করলে মেধাস্বত্ব আইন তাকে সেই সৃষ্টির মালিকানা বা স্বত্ব দেয়। মুক্তবাজার বা মুক্তবাণিজ্য ও করপোরেট বিশ্বায়নের দুনিয়ায় মানুষের সম্পদ, সম্ভাবনা, জ্ঞান, মেধা সবই একতরফা দখল, নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানাধীন করার বৈধতা তৈরি করছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। গবেষণা ও উন্নয়নের নামে প্রচলিত আইনি বৈধতা নিয়েই মিলিয়ন, বিলিয়নিরা মেধাবীদের মেধা ও বুদ্ধিজাত সম্পদ, আবিষ্কার, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও প্যাটেন্টের একতরফা ছিনতাই করছে। চিন্তার স্বাধীনতা, কী জ্ঞানপ্রবাহের অসীম বিস্তারের দর্শনকে ধাক্কা মেরে মেধা, সৃজনশীলতা ও প্রাণসত্তার জটিল সম্পর্ককে বাজারি দরদামের ভেতর আটকে ফেলেছে করপোরেট বাণিজ্য। মেধাস্বত্ব বলতে বোঝায়, যা মানুষের জ্ঞান বা বুদ্ধি থেকে সৃষ্ট। সাহিত্য এবং শৈল্পিক বিষয়গুলো ছাড়াও এর আওতাভুক্ত রয়েছে কম্পিউটার সফটওয়্যার, বিজ্ঞাপন, মানচিত্র, প্রযুক্তিগত অঙ্কন, বই, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, উদ্ভাবন, আবিষ্কার, নকশা, পরিকল্পনা, ট্রেডমার্ক, সঙ্গীত, সিনেমা, পরিষেবা চিহ্ন ইত্যাদি। একজনের নাটক, গান, চলচ্চিত্র, বই, অনুমোদন ছাড়াই নকল করা ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, রেডিওতে প্রচার করাসহ বিভিন্নভাবে পাইরেসির পরিধি অনেক বিস্তৃত।
মেধাস্বত্ব অবশ্যই একটি ব্র্যান্ড। উদ্ভাবন বা আবিষ্কার, একটি নকশা বা পরিকল্পনা বা যেকোনো সৃজনশীলতা, যার দাবিদার এর মালিক তিনি কেনাবেচাও করতে পারেন। আমাদের দেশে মেধাস্বত্ব আইনের আশানুরূপ প্রয়োগ নেই। মেধাস্বত্ব অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন অনেক সৃজনশীল নির্মাতা।
কপিরাইট ও মেধাস্বত্বের সাথে তরুণেরা সরাসরি জড়িত বলে এটা সংরক্ষণেও তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। অথচ অনেক ক্ষেত্রে এ তরুণেরাই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মেধাস্বত্ব অধিকারের লঙ্ঘন করছে।
বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে যুক্ত সব শ্রেণীর শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, প্রডিউসার, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, আর্টিস্টদের কাছে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশী বা দেশী পণ্যের প্যাটেন্ট, ডিজাইন বা ট্রেডমার্ক চুরি করে নকল পণ্যে বাজার সয়লাব। কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইনের প্রয়োগ ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাবলয় নেই বলেই মেধাবী আবিষ্কারক, সৃষ্টিশীল ও নব উদ্ভাবকেরা বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এভাবে চললে অনেক মেধাবী মেধার চর্চা বন্ধ করে দেবেন, তেমনি ভোক্তারাও নকল পণ্যের ধোঁকায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ সুযোগে লুটেপুটে খাবে অসাধু বাণিজ্যিক মুনাফাখোররা।
মেধাস্বত্ব আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে সাধারণ জনগণ উচ্চ মূল্যে কেনা নকল পণ্য ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকবে। এ জন্যই মেধাস্বত্ব আইন সম্পর্কে ধারণা ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি, যাতে ভোক্তা, কোম্পানি উভয়ই সঠিক পণ্য ও সঠিক মূল্যায়ন পেতে পারে।
বুদ্ধিজাতসম্পদ ও স্বত্ব ঘিরে বাংলাদেশে যেসব আইন রয়েছে তাহলোÑ ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯, দ্য প্যাটেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন অ্যাক্ট ২০০৩ (১৯১১ সালের আইন), কপিরাইট আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০০৫) ও ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন ও সুরক্ষা আইন ২০১৩। কপিরাইট অফিসটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন। প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক এবং ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন। বাজারে এত পাইরেসিসহ নকল ও ভেজাল পণ্যের সয়লাব দেখে বলতে হয় প্রতি বছর ২৬ এপ্রিল আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব দিবস উদযাপনের পর তারা বছরজুড়ে কি সুখনিদ্রায় সময় কাটান? মেধাসম্পদের নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা, মেধাসম্পদ লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে অক্ষমতা পীড়াদায়ক। বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বেকায়দায় পড়ছেন সৃষ্টিশীল মানুষ। হ
মোহাম্মদ আবু নোমান


আরো সংবাদ



premium cement