২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : গাড়ির কাগজপত্র নবায়নে জরিমানা

-

সরকার আগেও বেশ কয়েকবার গাড়ির ব্লু-বুক, রুট পারমিট, টেক্স টোকেন, ফিটনেস ইত্যাদি নবায়নে ছাড় দিয়েছে। তখন অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করেছেন, আনেকেই করতে পারেননি। কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, যারা ছাড়ের সময় সুযোগ নিতে পারেননি তাদের বেশির ভাগই লোকাল রোডে চালিত গাড়ির মালিক এবং তাদের আর্থিক অবস্থা সঙ্গতিপন্ন নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিটি গাড়ির মালিক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ এমন চাপে তারা আর কখনোই পড়েননি। সরকারের তরফ থেকে ছাড় দেয়া হবে কি হবে নাÑ এ চিন্তায় তারা ব্যাকুল। যাদের কাগজপত্র দুই-তিন বছর-মেয়াদোত্তীর্ণ তারাই কেবল জরিমানা দিয়ে কাগজপত্র করতে পারছেন। কিন্তু যাদের ৫-১০ কিংবা ততধিক বছর মেয়াদোত্তীর্ণ তাদের পক্ষে বড় অঙ্কের জরিমানা দিয়ে কাগজপত্র নবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। দেখা যায়, যদি আসল হয় এক লাখ বা সোয়া লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয় তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ কিংবা তারও বেশি। অথচ একটি পুরনো (টাটা-৯০৯) গাড়ি কিনতে লাগে আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। লোকাল রোডে গাড়ির যে ব্যবসা তাতে অনেকের পেট চালানোই দায়। এ দেশের বহু শিক্ষিত বেকার ছেলে চাকরি না পেয়ে অতি কষ্টে দু-একটি পুরনো গাড়ি কিনে ওই রোজগার দিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন। এমন সব রুটে লোকাল বাসগুলো চলাচল করে যে, গাড়ির খরচ তুলাই মুশকিল। কোনো মাসে হয়তো ১০-১২ হাজার টাকা থাকে আবার কোনো মাসে খরচ তার চেয়েও বেশি। রাস্তার এমনই দুরবস্থা যে প্রায় প্রতিদিন দু-চারটি ট্রাক রাস্তায় ফেঁসে বা আটকে যায়। ফলে অন্য গাড়িগুলো আর চলতে পারে না। একে তো রাস্তার অবস্থা খারাপ, তার ওপর যদি এসব রাস্তায় ৩০-৪০ টন মালবোঝাই ট্রাক প্রতিনিয়ত ঢোকে, তাহলে এমন অবস্থা হওয়াই স্বাভাবিক। রাস্তাগুলো ফেটে চৌচির, খণ্ড-বিখণ্ড, পাকা রাস্তা ফেটে হাজার হাজার গর্ত হয়ে কাদামাটি বের হয়ে যায়। বৃষ্টির সময় তো আরো নাজুক অবস্থা, বলতে গেলে গাড়ি চলাচল প্রায়ই বন্ধ থকে। এসব রুটে ট্রাকগুলো চলাচলের উপযোগী কি না তা দেখার যেন কেউ নেই। ফলে ভুগতে হয় লোকাল বাস, মালিক, পিকআপ, ভ্যান এবং যাত্রী সাধারণের। এমন দুর্গম রাস্তা হলোÑ ময়মনসিংহ-ধেবাউড়া, ময়মনসিংহ-জারিয়া-দুর্গাপুর, ময়মনসিংহ-হুগলা। অবশ্য কাগজের পাতা খুললেই দেখা যায় বাংলাদেশের সর্বত্রই এমন দৃশ্য বিরাজমান। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। ফলে এসব রুটের গাড়ির মালিকদের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। তার ওপর কাগজ নবায়নের চাপ। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তারপরও বহুজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তারা জরিমানা মওকুফের অপেক্ষায় আছেন। এ ছাড়া লোকাল বাসমালিকদের পক্ষে বহুদিনের পুঞ্জীভূত জরিমানাসহ কাগজপত্র নবায়ন করা একেবারেই অসম্ভব। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে যেখানে গাড়ি ঠিক রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে বিপুল অঙ্কের জরিমানা গোনা তাদের পক্ষে দুরূহ ব্যাপার। তাই বর্তমানে দরিদ্রবান্ধব সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন, পুরনো এসব গাড়ি ড্যামেজ না করে জরিমানা ছাড় দিয়ে কাগজপত্র নবায়ন করার সুযোগ দানে সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবেন। গাড়ি কখনো বুড়ো হয় না। যে পার্সটা নষ্ট হয় তা বদলিয়ে নিলেই আবার সচল হয়ে যায়। নির্বাচনী বছর। প্রত্যাশা রইল সরকার মহানুভবতার পরিচয় দেবে। আবারো আবেদন, এবারের মতো ছাড় দিয়ে দেখুন, তাতে কাজ হবে। সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে।
মো: হেলাল উদ্দিন,
পাটগুদাম বাস টার্মিনাল, ময়মনসিংহ

 


আরো সংবাদ



premium cement