২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘শহীদ আসাদ প্রেরণার উৎস’

শহীদ আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ - সংগৃহীত

আজ ২০ জানুয়ারি ঊনসত্তরের মহান গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটি শহীদ আসাদ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন পৃথকভাবে কর্মসচি নিয়েছে।

শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত গতকাল এক বিবৃতিতে ৬৯’র গণ-আন্দোলনের মহান শহীদ আসাদুজ্জামানের অমলিন স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশর স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ আসাদ এক অবিস্মরণীয় নাম। সামরিক স্বৈরশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে অকুতোভয় এ বীর সেনানী রাজপথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার শোণিতের ধারা বেয়ে স্বৈরশাসনের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল, অর্জিত হয়েছিল এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতন্ত্রের জন্য শহীদ আসাদের আত্মদান পরবর্তীকালে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আজো এ দেশে একদলীয় একচেটিয়াত্ব প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে গায়ের জোরে, তাতে গণতন্ত্র ধ্বংসের পাশাপাশি সামজিক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে। আইন, বিচার, প্রশাসন, পুলিশ সবকিছু আইন অনুযায়ী নয় বরং ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশের মানুষ বর্তমানে অবৈধ নির্দয় শাসকগোষ্ঠীর শিকলে বন্দী হয়ে পড়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়- একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন শহীদ আসাদুজ্জামান। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে আমরা যদি এ দেশের মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলেই তার প্রতি দেখানো হবে যথাযথ সম্মান। এমতাবস্থায় আজকের এই দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণই সবচেয়ে জরুরি কাজ। এ জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই।

বিএনপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ১৯৬৯ সালে আইউববিরোধী গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের আত্মত্যাগ গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে আমাদের প্রেরণার উৎস। যে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জীবন দিয়ে গেছেন, সেটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। সে লক্ষে গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তিগুলোর চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। শহীদ আসাদ দিবসে এই হোক আমাদের দৃপ্ত শপথ।

এ দিকে অন্য এক বিবৃতিতে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং শহীদ আসাদের আত্মদানকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সিঁড়ি’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ।

পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বিবৃতিতে বলেন, শহীদ আসাদের রক্তদানই আইয়ুব শাহীর পতনের পথ সুগম করে। এই গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরেই স্বাধীনতা সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়। বিবৃতিতে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে শহীদ আসাদের আত্মদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। শহীদ আসাদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) নেতা ছিলেন। ঊনসত্তরের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছাত্রমিছিলে পুলিশ গুলি চালালে আসাদ শহীদ হন।

এ দিকে শহীদ আসাদের ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকীতে শহীদ আসাদ দিবস ও ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানের ৫০ বছর পালন জাতীয় কমিটি আজ সকাল ৮টা ৩০ এ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে নির্মিত আসাদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে এবং আসাদের সংগ্রামী স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে। একই সাথে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আগামীকাল বেলা ১১টায় নরসিংদীর শিবপুরে শহীদ আসাদের কবরেও পুষ্পস্তবক প্রদান করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।

এই উপলক্ষে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে পোস্টার ও স্মরণিকা স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে ২৪ জানুয়ারি বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দ্বীপে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, লেখক সেরাজুল আনোয়ার ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ। সভাপতিত্ব করবেন পর্ষদের আহ্বায়ক হায়দার আনোয়ার খান জুনো। সকাল ৮টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে শহীদ আসাদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement