০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চামড়ার নিচে মাইক্রোচিপ ঢোকানোর হিড়িক, কিন্তু কেন?

চামড়ার নিচে ঢোকানো হচ্ছে ইলেকট্রনিক মাইক্রোচিপ। এটাই সুইডেনে অনেককিছুর ডিজিটাল চাবি - সংগৃহীত

সুইডেনে হাজার হাজার মানুষ তাদের হাতের চামড়ার নিচে ইলেকট্রনিক চিপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেটি আসলে তাদের বাড়িতে ঢোকার চাবি, অফিসের আইডি কার্ড এমনকি ট্রেনের টিকেট। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতের প্রযুক্তির চেহারা এরকমই হবে, অর্থাৎ মানুষের শরীর আর নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি এভাবেই মিলে-মিশে একাকার হয়ে যাবে। যদিও অনেকে এতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

স্টকহোমের প্রাচীন অংশের পাথর বিছানো রাস্তা। মধ্যযুগের পুরোনো লাল, হলুদ রঙের সব বাড়ী। যে নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, এই জায়গাটাকে তার সঙ্গে মেলানো যায় না। কিন্তু সুইডেনের ডিজিটাল বিপ্লবের কেন্দ্র এটাই, এখানেই থাকেন এরিক।

এরিকের হাতের আঙ্গুলের চামড়ার নিচে একটা মাইক্রোচিপ ঢোকানো আছে। সেটা ব্যবহার করে এরিক তার দরজার তালা খুললেন।

বয়স তিরিশের এই তরুণ পেশায় একজন ডিজাইনার এবং ওয়েব ডেভেলপার। তার ঘরটা সাজানো হয়েছে স্ক্যানডিনেভিয়ান স্টাইলের আড়ম্বরহীন আসবাবপত্র দিয়ে।

সুইডেনে যে চার হাজার মানুষ তাদের শরীরের চামড়ার নিচে মাইক্রোচিপ লাগিয়েছেন, তিনি তাদের একজন।

"মাইক্রোচিপটা লাগানো আছে এখানে। আমার বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথায়। আমি যদি আমার আঙ্গুল মুঠো না করি, তাহলে আপনি এটা দেখতেই পাবেন না। এটা সিরিঞ্জ দিয়ে এখানে ঢোকানো হয়েছে। এটা আঙ্গুলে ঢোকাতে মাত্র এক সেকেন্ড সময় লাগে। এটা একদম আপনার চাবির ট্যাগের মতোই কাজ করে। যেভাবে আপনি আপনার গ্যারেজের দরোজা খোলেন, বা অফিসে ঢোকেন, অনেকটা সেরকম।"

সিলভিয়া এরিকের সাথে একই বাড়িতে থাকেন। তার আঙ্গুলেও মাইক্রোচিপ লাগানো।

"আমি দুই মাস আগে ইলেকট্রনিক চিপ পেয়েছি। এরিক আমাকে এখানে একটা পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেখানে আমি এই চিপটা পাই। আমি আমার জীবনটা একটু সহজ করতে চেয়েছি। এই একই চিপ দিয়ে কিন্তু আমি অফিসের দরোজাও খুলতে পারি। এটাকে আপনি আপনার ট্রেনের টিকেট হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি কোনো জিমে যান, সেখানেও কিন্তু এটিকে ব্যবহার করতে পারেন।"

ভবিষ্যতে কি এই ইলেকট্রনিক চিপ সবাই ব্যবহার করবে? এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হবে?

সিলভিয়ার ধারণা তাই।

"আমার তো তাই মনে হয়। আমার মনে হয় এটা এমন এক প্রযুক্তি, যেটা এখনো হয়তো একেবারে তার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এটার ব্যবহার এখনো অনেকের কাছে বোকা বোকা লাগতে পারে, এটা দিয়ে খুব বেশি কিছু করা যায় না। তবে আমার মনে হয়, এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ।"

সুইডেনে যে এই ইলেকট্রনিক চিপ এতটা জনপ্রিয়, তার কারণ, এটি একটি প্রযুক্তি বান্ধব দেশ। সুইডেন যোগাযোগ প্রযুক্তির দিক থেকে বেশ ভালো অবস্থায় আছে, সেখানে লেন-দেনে নগদ অর্থের ব্যবহার প্রায় উঠেই যাচ্ছে।

আরেকটি কারণ হচ্ছে, সুইডিশরা তাদের সরকার এবং কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট বিশ্বাস করে। তাদের নানা গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য সরকারের সঙ্গে শেয়ার করতে সুইডিশরা অতটা দ্বিধাগ্রস্থ নয়। এসব কারণেই কি এখানে ইলেকট্রনিক চিপস এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে?

এরিকের মতে সেটা একটা কারণ। তবে এর পাশাপাশি অন্য কিছু বিষয়ও কাজ করছে।

"সুইডিশরা বেশ বাস্তববাদী। আর চিপ কিন্তু বেশ কাজের। লোকজন তাই সহজেই একটা গ্রহণ করেছ। তাদের বিরুদ্ধে এটা ব্যবহৃত হতে পারে, এরকম ভয় তারা পাচ্ছে না।"

এসব কারণে শরীরে মাইক্রোচিপের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সুইডেনে।

এরিক তার অফিসে ঢুকলেন একইভাবে আঙ্গুলের ডগায় লাগানো ইলেকট্রনিক চিপ দিয়ে। অনেক মানুষই সাধারণত এরকম চিপ ব্যবহার করতে চান না, এটা তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন করতে পারে এমন আশঙ্কায়। কিন্তু এরিক বললেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।

"এই চিপে যে তথ্য রাখা হয়, তা একেবারেই প্রাথমিক। আপনার হাতে একটা মাইক্রোচিপ ঢুকানো আছে, এটা শুনতে বেশ ভয়ঙ্কর মনে হয়। কিন্তু আপনার হাতের কী ট্যাগের সাথে এর কোনো তফাৎ নেই। এছাড়াও এই ট্যাগ খুলে ফেলা বেশ সহজ।"

তবে মাইক্রোচিপ নিয়ে সুইডেনেও কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। সুইডেনে এ নিয়ে কোনো আইন এখনো তৈরি হয়নি।

মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ভবিষ্যতে কিভাবে অন্যকাজে ব্যবহৃত হতে পারে সেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

তা সত্ত্বেও চামড়ার নিচে যারা মাইক্রোচিপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এভাবেই দৈনন্দিন সব কাজে ব্যবহৃত হবে এই প্রযুক্তি।


আরো সংবাদ



premium cement