১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


মুসলমানদের সম্পর্কে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসছে

- ফাইল ছবি

সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু মুসলিম দেশকে ইসলামের ধুয়া তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে উসকানি দিয়েছে। এহেন উসকানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল সোভিয়েত রাশিয়া একটি নাস্তিক সমাজতান্ত্রিক দেশ এবং এর সীমান্তবর্তী ও অপরাপর মুসলিম দেশ ও মুসলমানদের জন্য হুমকিস্বরূপ। ধর্মভীরু মুসলমানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ যুক্তি গ্রহণ করে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র ও অর্থনৈতিক সাহায্যে পরিপুষ্ট হয়ে এ হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়েছিল।

পাকিস্তান অবশ্য ১৯৫০ সালেই প্রথম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে কমিউনিস্ট চীনকে স্বীকৃতি দিয়ে ২১ মে ১৯৫১ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৯৬০ সালে চীন-সোভিয়েত রাশিয়ার সম্পর্কে ফাটল ধরলে ১৯৬৯ সালে হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানের পেশোয়ার বিমানঘাঁটি থেকে গোপনে চীন সফর করেন। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে ওঠে এবং চীনও সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলে যায়। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন পাকিস্তান ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশকে সমরাস্ত্রে সজ্জিত করতে থাকে। অবশ্য পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকেই ব্যাপকভাবে উষ্ণতা লাভ করে।

যা হোক, এক কথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটকচালের ফলে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলে যায় এবং প্রয়োজনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার প্রস্তুতি নেয়। এর পেছনে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এককালীন পাদ্রি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডালেসের একটি ভুল ধারণা কাজ করেছিল। ডালেস মনে করতেন জোটনিরপেক্ষ দেশগুলো সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষে। যে কারণে মুসলিম দেশের কিছু নেতা যেমন মিসরের জামাল আবদুল নাসের ও ইন্দোনেশিয়ার সুকর্নোসহ তাদের দেশ ও আরো কিছু আফ্রো-এশিয়ান-ল্যাটিন আমেরিকান দেশও সোভিয়েত রাশিয়ার বলয়ে চলে যায়। তবে সে এক ভিন্ন প্রসঙ্গ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের সমর্থক ও ঠাণ্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী মুসলমান এবং তাদের দেশগুলোর অবস্থাই আমার আলোচ্য বিষয়।

১৯৮৯-১৯৯০ সালে বার্লিন ওয়াল পতনের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ঠাণ্ডা যুদ্ধের এক রকম অবসান হয়। ইত্যবসরে বিশ্বের মুসলিম দেশ ও মুসলমানদের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব মনে করতে শুরু করে মুসলমানরা জাতীয়তাবাদী এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতি হুমকিস্বরূপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিবিদ্বেষ লালন করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধারণা পাকাপোক্ত হয় ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ নিউ ইয়র্কে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র টুইন টাওয়ারে হামলার পর থেকে। এই ফাঁকে অবশ্য কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। যেমন- ১৯৭৯ ইরান বিপ্লব-পূর্বকালে রেজাশাহ পাহলভীর অনুকূলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ইরান বিপ্লবকে হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগে ৪ নভেম্বর ১৯৭৯ থেকে ২০ জানুয়ারি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তেহরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দখল করে রাখা। ১৯৯০ সালের আগস্টে ইরাকের কুয়েত আক্রমণ ও দখল করা।

এসব ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার অজুহাত এনে দেয়। প্রত্যুত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৭ জানুয়ারি ১৯৮০ সালে ছয়জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিককে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে স্বাধীন সার্বভৌম ইরানের অভ্যন্তর থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর তদানীন্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি করেন, ‘নো পার্ট অব দি ওয়ার্ল্ড ইজ বিয়ন্ড দি রিচ অব অ্যামেরিকা।’ জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি ১৯৯১ সালের যুদ্ধে তেলসমৃদ্ধ কুয়েতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থে মুক্ত করে। এ ছাড়া মুসলিম বিশ্বে ইসরাইল নিয়ে অসন্তোষ তো ছিলই, যা পশ্চিমা দেশগুলোর অপছন্দনীয়।

টুইন টাওয়ারে হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষত সৌদি বংশোদ্ভূত ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং বিশ্বের মুসলমানদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২ মে ২০১১ সালে পাকিস্তানের অজান্তে এবং বিনা অনুমতিতে ওসামা বিন লাদেনকে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে অতর্কিতে বিনা বিচারে হত্যা করে। বস্তুত টুইন টাওয়ার হামলার দিন ভবন দু’টিতে চার হাজার ইহুদি কর্মচারী-কর্মকর্তার কেউ উপস্থিত ছিল না। যদিও দাবি করা হয়, এ আক্রমণের শেষ হিসেবে ৪০০ ইহুদি নিহত হয়েছিল। এর থেকে স্বভাবতই এ ধারণা করা ভুল নয় যে, মুসলমানদের হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এটা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কালো হাত ও মধ্যপ্রাচ্যের ত্রাস ইসরাইলেরই কাজ। তবে এর জন্য মূল্য দিতে হয়েছে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের।

নিউ ইয়র্কের দু’টি ভবনধসের বদলা নিতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, পুরো মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ এনে মুসলমানদের মুখে কালিমা লেপন করে তাদের সমাজব্যবস্থা বদলে দেয়ার চেষ্টা চালায়। মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ অভিযানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জুনিয়র তো মুখ ফসকে সত্য কথাটিই বলে ফেলেছিলেন, এটা ক্রুসেড। বাস্তবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে পশ্চিমারা সে পথেই এগোচ্ছে।

এরপর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর প্ররোচনায় দেশে দেশে ‘সন্ত্রাস’ দমনের নামে বিভিন্ন দেশ এমনকি কিছু মুসলিম দেশও ভিন্নমতাবলম্বী মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে। এ যাত্রায় মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশও কম যায়নি। বিশেষত ১ জুলাই ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলে আর্টিজান বেকারি হামলার পর দেশে ‘সন্ত্রাস’ দমনের হিড়িক পড়ে যায়। রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘সন্ত্রাস’ দমনে এতটাই তৎপর হয়ে ওঠে যে, মুসলমানের শত্র“দের খুশি করতে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিনই ‘সন্ত্রাসী’ আবিষ্কার করে হয় তাদের ‘এনকাউন্টারের’ নামে হত্যা করে কিংবা আটক করে। এতে দেশে কত লোক হতাহত ও গ্রেফতার হয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব জনগণ জানে না। এতে করে দেশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এ নিয়ে দেশে বিস্তর রাজনীতিও হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, মধ্যপ্রাচ্যের যেসব নিরীহ মুসলিম দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের রোষানলে পড়ে ধ্বংস হলো, এর বিরুদ্ধে কোনো দেশকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতটাই সফল হয়েছে যে, পাশ্চাত্যসহ বিভিন্ন দেশে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘মুসলমান’ শব্দ দু’টি সমার্থক হয়ে ওঠে। যার ফলে বিশ্বে মুসলমানদের মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিঘিœত হয়।

এখন প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসছে। আরো মজার ব্যাপার হলো, খোদ পশ্চিমা বিশ্বেই সে সত্য উদঘাটিত হচ্ছে। সম্প্রতি ‘টেরর ভিক্টিমস অ্যাসোসিয়েশন’ নামক একটি ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থার প্রধান সেন্ট মার্ক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে একটি বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও উপাত্ত-নির্ভর সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা বেশি সন্ত্রসী হামলা চালায়, বহুল প্রচলিত এমন ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসল ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী যেসব সন্ত্রাসী হামলা চলে তার শিকার প্রধানত মুসলমানরাই অধিক। তিনি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন, এ পর্যন্ত বিশ্বে যত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার শিকার ৮০ শতাংশই মুসলমান। মুসলিমরাই সন্ত্রাসী এবং এর শিকার কেবল অমুসলিমরা- পাশ্চাত্যের এমন ধারণার প্রতি তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছেন, যেখানে বিশ্বের ৮০টি দেশ থেকে আগত সন্ত্রাসে আক্রান্ত ৪০০ জন যোগদান করেন।

সম্মেলনে মন্তব্য করা হয়, বিশ্বের দেশে দেশে নিরীহ মুসলমানদের সন্দেহের চোখে রাখার অভ্যস্ততার ফলে তাদের ওপর এহেন নিপীড়ন চলছে। দেখা গেছে, ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সময়কালে সন্ত্রাসী হামলায় ৯৯ শতাংশ মুসলমান ইউরোপে আক্রান্ত হয়েছে। সর্বশেষ এক উগ্রপন্থী ফ্রান্সের এক মুসলিম জামাতে গাড়ি তুলে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী হামলায় ১৫ হাজার ৯৫২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে আফগানিস্তানে নিহত হয়েছে সাত হাজার ৩৭৯ জন; নাইজেরিয়ায় দুই হাজার ৪০ এবং ইরাকে এক হাজার ৫৪ জন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোমালিয়া ও সিরিয়ার মুসলমানরা।

অন্যান্য দেশেও চার হাজার ১৭১ জনের বেশি মুসলমান নিহত হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৯৩ শতাংশ মুসলমান। এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে প্রমাণিত হয়, মূলত মুসলমানরা সন্ত্রাসী নয়, বরং বিশ্বের অমুসলিম সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত সন্ত্রাসের শিকার মুসলমানরা। এসবই ঘটেছে পাশ্চাত্যের ইচ্ছাকৃত মুসলিমবিরোধী প্রচারণার কারণে। এজাতীয় সন্ত্রাস রোধ করতে হলে পাশ্চাত্যকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবশ্যই অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বভাব হলো, প্রচুর মিথ্যা কথা বলা, যার প্রমাণ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় পাওয়া গেছে। আরেকটি হলো যাকে যখন প্রয়োজন তাকে কোলে তুলে নিজস্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করা। প্রয়োজন শেষ হলে ছেঁড়া কাগজের মতো দুমড়ে-মুচড়ে তাকে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ছুড়ে ফেলে দেয়া। এককালে চীনকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থে শোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এখন চীনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় ঠেলে দিয়েছে।

বৃহৎশক্তিগুলোকে চিরকালীন বন্ধু হিসেবে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় দেশটির শেষ প্রধানমন্ত্রী নগু দিন দিয়েমের প্রধান উপদেষ্টা ও ভ্রাতা নগু দিন নু-এর স্ত্রী ট্রান লি যোয়ান, যিনি সে সময় কার্যত ভিয়েতনামের ফার্স্ট লেডি ছিলেন। আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু, তার শত্র“র প্রয়োজন হয় না।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপদৃষ্টে এ কথা বিশ্বাস না করার কোনো কারণ নেই। অপর দিকে ভারত বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের ছদ্মাবরণে মুসলমানদের নির্যাতন করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া শুরু করেছে।

একটি কথা মর্মান্তিকভাবে সত্য যে, বিশ্বে মুসলমানদের আজ দুর্দিন চলছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু কাজটা সহজ নয় এ কারণে যে, শক্তিধর দেশগুলো এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায়। শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী মুসলমানদের ঈমান ও আদর্শ তাদের ভয়। যে কারণে মুসলিম দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত রেখে তারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চায়। এ ব্যাপারে মুসলিম দেশগুলোকে আরো সতর্ক হতে হবে এবং যতদূর সম্ভব নিজেদের মধ্যে ঈমানী সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে। আশার কথা এই যে, দেরিতে হলেও পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা বুঝতে পেরেছেন, মুসলমানরা সন্ত্রাসী নয়, বরং তারা অমুসলিমদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার।

অনেক উদাহরণের মধ্যে রোহিঙ্গা, প্যালেস্টাইনি ও কাশ্মিরি মুসলমানদের কথা উল্লেখ করা যায়। আশা করা যায়, মুসলমানদের সম্পর্কে পাশ্চাত্য দেশীয় ধারণার অবসান হবে। মুসলমানদের ওপর অমুসলিমদের চাপিয়ে দেয়া সন্ত্রাসী অভিধায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস গুটিয়ে আনবে। ইসলাম ধর্ম যে সন্ত্রাসকে লালন করে না, এ কথাটি পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের বুঝানো যাচ্ছিল না। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের চোখে আঙুল দিয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে, প্রকৃতার্থে মুসলমানরা সন্ত্রাসী নয় এবং ইসলাম ধর্মও এদের সন্ত্রাসী হতে বলে না। এর ওপর ভিত্তি করেই বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। মুসলমানরা তাদের ধর্মের শিক্ষানুসারে ধৈর্য ধারণ করেছে। মুসলমানদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। মুসলমানদের বিজয়কেতন আকাশে নিশ্চয়ই একদিন উড়বে।

লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক


আরো সংবাদ



premium cement