১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে

-

বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যাকে অন্যতম প্রধান সমস্যা বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম জনবহুল রাষ্ট্র। ২০৫০ সালে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ ওপরে উঠে ষষ্ঠ স্থানে দাঁড়াবে। তখন জনসংখ্যা হবে ২৩০ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৩ কোটি। বিশ্বেও জনসংখ্যা বর্তমানে অধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ হলো বাংলাদেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৯৩ জন লোকের বসবাস এখানে। আলজাজিরা সূত্র মতে, ১৩ জুলাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৭২০ কোটি হবে। বর্তমানে ৭৪০ কোটি। ৫০ বছর আগে ছিল ৩০০ কোটি। জাতিসঙ্ঘ জনসংখ্যা তহবিলের মতে, ১২ বছর আগে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৬০০ কোটি।

অর্থাৎ এক যুগে জনসংখ্যা বেড়েছে ১০০ কোটি। ২০২১ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজার ৯০ কোটিতে। জনসংখ্যার এই দ্রুত বৃদ্ধির জন্য উচ্চ জন্মহারকেই দায়ী করছে জাতিসঙ্ঘ। জানা যায়, আগামী শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই পৃথিবী হবে ১৬৬০ কোটি মানুষের আবাসস্থল। গত এক শতকে (১৯০০-২০০০) বিশ্বে জনসংখ্যা ১৬০ কোটি থেকে ৬১০ কোটিতে পৌঁছেছে। ২০২৫ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা ৮০০ কোটি, ২০৪৩ সালে ৯০০ কোটি এবং ২০৮৩ সালে এক হাজার কোটিতে পৌঁছবে। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র ৩০ বছরেই বিশ্বের জনসংখ্যায় আরো ২০০ কোটি মানুষ যোগ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ২০৫০ সালে বিশ্বে মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৭৭০ থেকে ৯৭০ কোটিতে। বিশ্বের জনসংখ্যা চলতি শতকের শেষ নাগাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। ওই সময় জনসংখ্যা হবে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি। এ দিকে, অচিরেই চীনকে ছাড়িয়ে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশে পরিণত হবে।

জাতিসঙ্ঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সহকারী মহাসচিব উ-হংবো বলেন, বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরগতির। কিন্তু কিছু উন্নয়নীল দেশ বিশেষ করে আফ্রিকায় ‘দ্রুত গতিতে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে’। উল্লেখ্য, ১৮০৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। এর ১২৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯২৯ সালে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ২০০ কোটি। ১৮০০ সালের পর গত দুই শতকে বিশ্বের জনসংখ্যা সাতগুণ বেড়ে গেছে। ১৯৬০ সালে বিশ্বে যে জনসংখ্যা ছিল এখন তার দ্বিগুণ। ২০১১ সালের অক্টোবরে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পৌঁছানের এক প্রতীকী দিন ছিল। পৃথিবীর ৭০০ কোটিতম শিশু হচ্ছে, বাংলাদেশের ঢাকার ঐশী (প্রতীকী)। ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি আর্থার এরকেন বলেন, এ শিশুকে পৃথিবীতে স্বাগতম। তার স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে সঠিক পরিবেশে বড় করে তোলার দায়িত্ব সবার। তিনি আরো বলেন, জনসংখ্যা কোনো সমস্যা হবে না যদি তা জনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আজো অনেকে জীবিত আছেন যারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যা দেখেছেন ২০০ কোটিরও কম। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ বেড়েছে। এরকেন বলেন, ‘প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করলে ৭০০ কোটি ভালো কাজ হবে, যা পৃথিবীর পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট।’

৭০ হাজার বছর আগে যখন সর্বশেষে বরফযুগ শুরু হয়, তখন বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর বর্তমান বয়স ৪৬০ কোটি বছর। ব্রিটেনে তখন কোনো মানুষ বাস করত না। মাত্র ৩০ হাজার বছর আগে ব্রিটেনে মানবজাতির পদার্পণ ঘটে। আজকের যুগে দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনার সাথে জনসংখ্যার বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের সঠিক জনসংখ্যা জানা না থাকলে পরিকল্পনাই সঠিকভাবে গ্রহণ করা যায় না। জাতিসঙ্ঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ’র সর্বশেষ রিপোর্ট এবং বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০১০ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার। সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা আট কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার এবং নারী আট কোটি ২৬ লাখ ৮৭ হাজার। এ দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০২ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি। তবে পাঁচ বছর পর ২০০৭ সালের সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি। আর জাতিসঙ্ঘ একই সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখায় ১৫ কোটি ৯০ লাখ। একইভাবে, ২০০৬ সালে ইউএনএফপিএ পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৪ কোটি ৪০ লাখ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখানে স্বাধীনতার পর মাত্র ৪৮ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের জন্য বাড়তি হয়রানি ও অস্থিরতা বয়ে আনছে। আবার বাড়তি জনসংখ্যাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে জনশক্তিতে পরিণত করা গেলে তা একটি দেশের জন্য বিরাট সম্পদও হয়ে উঠতে পারে।

জাতিসঙ্ঘের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ২০৫০ সালে বিশ্বের নতুন জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশের এবং বর্তমানে তা ৩৮ শতাংশ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এত বেশি যে, সারা পৃথিবীর মানুষ যদি যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয় তাহলেও সেখানে জনঘনত্ব এত হবে না। সচেতন ও বিত্তবান মানুষের এক থেকে দু’টি সন্তান, অন্য দিকে অসচেতন দরিদ্র ও বিত্তহীন মানুষদের এমনকি আট-দশটি সন্তান রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে ১.৩৯ শতাংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অন্যতম পূর্বশর্ত। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যক্রম ও উদ্যেগ শিথিল হয়ে পড়েছে। এমনকি, জনসংখ্যা নিয়ে যে পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে, তা-ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিমূলক। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে যত দ্রুত সম্ভব জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রত্যাশিত সীমায় হ্রাস করতে হবে।

জনসংখ্যার বৃদ্ধি যাতে জনবিস্ফোরণে রূপান্তরিত না হয় তার জন্য কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কমিটিগুলো নিষ্ক্রিয়। কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ছয় ধরনের কমিটি থাকলেও তাদের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে এত অধিক লোকের বসবাস কেবল ঝুঁকিপূর্ণই নয়। বরং তা বড় ধরনের বিপর্যয়েরও কারণ হতে পারে। তাই জনসংখ্যার ভয়াবহ বিস্ফোরণরোধে সরকারের সব দফতরকে সমন্বিত করে জনগণের সাহায্যে দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এক সন্তানের জন্মদাতাদের সরকারি চাকরিতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা এবং তার সন্তানকেও সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমে জনসংখ্যা ইস্যু নিয়ে প্রচারাভিযান চালাতে হবে। এতে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান, মসজিদের ইমাম, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক, বিভিন্ন এনজিওসহ সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে অধিকতর কার্যকর করতে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা উচিত।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা


আরো সংবাদ



premium cement
এক বছর পর দাউদকান্দিতে ড. মোশাররফ গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবিতে সুষ্ঠুভাবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন রাজধানীতে আ’লীগের শান্তি সমাবেশ আজ কুয়াকাটা সৈকতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমুদ্রস্নান সরকারি হাসপাতালে অবৈধ ক্যান্টিন ও ওষুধের দোকান বন্ধের নির্দেশ ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে আ’লীগ জনগণকে নাগরিক হিসেবে বাতিল করেছে : জোনায়েদ সাকি ইবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা টঙ্গী পর্যন্ত বর্ধিত হচ্ছে মেট্রোরেলের লাইন মালয়েশিয়ায় বিএমইটি কার্ডের নামে প্রতারণার ফাঁদ : সতর্ক করল দূতাবাস ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল আল মাহমুদপুত্র মীর তারিকের ইন্তেকাল

সকল