২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংসদ নির্বাচনে ভোটের হিসাব

সংসদ নির্বাচনে ভোটের হিসাব - ছবি : সংগৃহীত

আগামী ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে। ভারত, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনে জোট রাজনীতির ফল দেখে সবাই সেদিকে ঝুঁকছে। এজন্য বিভিন্ন দল ও জোট আছে মহাচিন্তায়, নির্বাচনের পর তাদের কপালে কী জুটবে? অভিজ্ঞ মহল ভেবে হয়রান, কী হবে আগামী নির্বাচনে। কূলকিনারা পাচ্ছেন না তারা। যে দলই ক্ষমতায় আসুক; তারা দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ পরিচালনা করবে, এটা যেন সুদূরপরাহত। জনগণের সামনে বিকল্প কোনো পথও দেখা যাচ্ছে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই তারা ছুটছে জোট রাজনীতির দিকে।

আমাদের দেশের রাজনীতির উত্থান-পতন, উন্নয়ন ও অবনায়নের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে হতাশ হতে হয়। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সততা, উদারতা ও দেশপ্রেম লোপ পেয়েছে। দেশ, রাজনীতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কে তাদের অধ্যয়ন ও চর্চা কমে গেছে বা নেই বললেই চলে। রাজনীতিবিদরা নিয়মিত পড়াশোনা করেন, এমন খুবই নগণ্য। সুতরাং না পড়লে, না জানলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এই সুযোগে যেসব দল অতিক্ষুদ্র, তারাও এমন সব দাবিদাওয়া পেশ করছেন, যা দেখলে মনে হবে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ এখন গর্তে পড়ছে। কথায় বলে, হাতি যখন গর্তে পড়ে, চামচিকাও না কি লাথি মারে।

এমতাবস্থায় বিএনপি-আওয়ামী লীগের মতো বড় বড় দলের নেতারা জোট রাজনীতি নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছেন। এসব দলের নীতিনির্ধারকরা তাদের শরিক বা ভাবি শরিকদের নিয়ে ভোটের জটিল অঙ্ক কষায় মাথা ঘামাচ্ছেন। এমতাবস্থায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বড় ধরনের ছাড় দিয়েও বৃহত্তর জোট গঠনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে ছোট ছোট দলগুলো দাবির ফিরিস্তি পেশ করে যাচ্ছে। এসব দেখে গল্প মনে পড়ে গেলÑ এক বাড়িতে এসেছে নতুন মেহমান। গৃহকর্তা খাবার পরিবেশনের সময় মেহমানকে মুরগির রান পরিবেশন করছেন, এমন সময় মেহমান বলছেন, না না আমাকে চার পিসের বেশি রান দেবেন না। খাবার বেলায় মেহমান যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো এমনিভাবেই দাবিদাওয়া পেশ করছে।

প্রতি নির্বাচনী মুহূর্তে বৃহত্তর দলগুলোকে সিট নিয়ে সঙ্কটে থাকতে হয়। নির্বাচনে অভিজ্ঞব্যক্তিদের মতে, জোটে দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো দল যেভাবেই দাবি করুক না কেন, যেকোনো দল সংসদের যে আসন চান, সেখানে ওই দলের অতীত নির্বাচনে অন্তত জামানত বাজেয়াপ্ত না হওয়ার রেকর্ড থাকা বাঞ্ছনীয়। অথবা সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা পৌরসভা অথবা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জামানত নিয়ে ‘প্যাভিলিয়নে ফেরা’র রেকর্ড থাকতে হবে। অন্যথায় জোটের সিটটা প্রতিপক্ষের হাতে দেয়ার মতো ঝুঁকিতে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এভাবে আলোচনা করলে দাবিদাওয়ার বহর কমে আসবে। অন্যথায়, সিট বণ্টনের সহজ কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।

২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিশেষ একটা দলের অস্তিত্ব নিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু দল নানা প্রশ্ন করছে। যাদের নিয়ে প্রশ্ন করছে সে দল অতীতে সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিতও হয়েছে। জনগণ যেখানে তাদের বাছাই করছে, সেখানে বিষয়ে নেতিবাচকভাবে মাথা ঘামানোকে সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়ন কি না, তা মনে করার যথেষ্ট সন্দেহ থাকতে পারে। কোনো আমলে কোনো একটা দলের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ওই দলকে নিষিদ্ধ করা বা না করার প্রশ্ন অবান্তর। কোনো একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে ওই গাড়িকে রাস্তায় নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয় কি? এ জন্য গাড়ির মালিক, ড্রাইভার, কন্ডাক্টর বা হেলপার দায়ী হতে পারে কিন্তু গাড়িকে দণ্ড দেয়ার হেতু দেখা যায় না। কোনো নেতা আদালত দ্বারা দণ্ডিত হলে তারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। রাজনৈতিক দলকে নিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও কেয়ারটেকার সরকার আন্দোলন যদি করা যায়, তবে এখন কেন করা যাবে না?

এখানে এমন কিছু দল আছে যারা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্রে একটা করে মোট ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আর আগামী নির্বাচনে বুথ আছে দুই লাখ ছয় হাজার ৫৪০টি। সেই পরিমাণ ভোট পাওয়া তাদের জন্য কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর যে দল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তারা প্রতিটি বুথে ২০ বা ৪০টি ভোট পাওয়া অসম্ভব নয়। সুতরাং, রাজনৈতিক মন্তব্য সতর্কভাবে করা উচিত। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, জেল-জরিমানা মোকাবেলা করে রাজনীতি করা বড়ই কঠিন। দেশের রাজনৈতিক আঙ্গিনায় যেন আগুন লেগেছে। এমতাবস্থায় কার আকার রাজার ন্যায়, আর আকার রানীর ন্যায়, তা দেখার সুযোগ নেই। আগে পানি দিয়ে আগুন নিভাতে হবে, তারপর জনগণ ভাববে কোন দল দেশে রাজনীতি করতে পারবে বা পারবে না। দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, ভোটের অঙ্কে কে কোথায় যাবে, বিবেচনা করে দেখবেন। এ দেশে কারা রাজনীতি করবে, তার ফয়সালা জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আপনাকে পরিমাপ করতে জনগণকে সুযোগ দিন। দেশের গণতন্ত্রায়নের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করুন এবং জনগণকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দিন।

সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ ১৪ ও ২০ দলীয় জোটের নানা দল, বিকল্পধারা, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, বাম জোট, ইসলামী দল এবং সুশীলসমাজের মধ্যে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেকোনো ব্যক্তি, দল ও জোটের ইতিবাচক পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।


আরো সংবাদ



premium cement
বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল