১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তানে শান্তি চুক্তির আশা পম্পেওর

-

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মঙ্গলবার বলেছেন, ১ সেপ্টেম্বরের আগেই ‘তালেবানের সাথে শান্তি চুক্তি’ করার আশা করছেন তিনি। গত বছর তালেবানের সাথে আলোচনা শুরুর পর কাবুলে প্রথম সফরে গিয়ে রাখা বক্তব্যে এই আশার কথা জানান তিনি।
আফগানিস্তানের রাজধানীতে এক দিনের সফরকালে পম্পেও দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং ন্যাটোর আফগানিস্তান মিশন ও দেশটিতে মার্কিন যুদ্ধ পদক্ষেপের নেতা জেনারেল স্কট মিলারের পাশাপাশি অন্যান্য উচ্চস্তরের আফগান কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ ছিল শান্তি। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ করার জন্য তালেবানকে আলোচনার টেবিলে আনতে একটি নতুন চাপ দেয়া শুরু করেছিল আমেরিকা। এই সফরের সময় পম্পেও বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি ১ সেপ্টেম্বরের আগে আমাদের শান্তি চুক্তি হবে, খুব দ্রুতই আমাদের মিশন ঠিক হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন যে, তারা আগামী আগস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে একটি চুক্তি করার আশা করছেন, যা ইতোমধ্যে দুইবার বিলম্বিত হয়েছে এবং এখন সেপ্টেম্বরে চুক্তিটি করার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। দোহাতে তালেবান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পরবর্তী আলোচনা ২৯ জুন শুরু হবে। এতে যে চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে : সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা, বিদেশী সেনাদের উপস্থিতি, একটি আন্তঃআফগান সংলাপ এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। তালেবান জোরালোভাবে বলেছে যে বিদেশী সৈন্যদের অবশ্যই চলে যেতে হবে। পুতুল সরকার বলে বিবেচনা করে কাবুলের আফগান সরকারের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেছিলেন তালেবান।
পম্পেও বলেন, আফগানিস্তানকে পুনরায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেবে না বলে তালেবানের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে একটি ‘খসড়া লেখা’ এর প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এই অগ্রগতির আলোকে আমরা তালেবানের সাথে বিদেশী সামরিক উপস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছি, যা শর্তের ভিত্তিতে আজো চলছে। যখন আমরা তালেবানের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, আমরা আমাদের বাহিনী প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তুত, আমি স্পষ্ট করতে চাই যে আমরা এখনো সেনা প্রত্যাহারের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণে সম্মত নই।’ আফগান সমাজের বেশির ভাগই উদ্বিগ্ন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তালেবানদের সাথে চুক্তি করে, তাহলে এরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করবে এবং নারী অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং আইনের সুরক্ষায় এতদিনের অগ্রগতি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেবে। আফগানিস্তানে শান্তি চুক্তির পরবর্তী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তেহরানের সাথে ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন।
এদিকে রয়টার্স জানায়, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আমন্ত্রণে আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা, সিনিয়র কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলকে সাথে নিয়ে দুই দিনের সফরে পাকিস্তান যাবেন। এই সময়ে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে তিনি বৈঠক করবেন।
আফগানিস্তানে ২ মার্কিন সেনা নিহত
রয়টার্স জানায়, আফগানিস্তানে দুই মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে বলে দেশটিতে মোতায়েন ন্যাটো মিশন জানিয়েছে। ন্যাটো মিশনের বিবৃতিতে গতকাল বুধবার তাদের নিহত হওয়ার কথা জানানো হলেও তারা কোথায়, কিভাবে নিহত হয়েছেন তা বিস্তারিত জানানো হয়নি। এদের নিয়ে চলতি বছর আফগানিস্তানে নিহত মার্কিন সেনার সংখ্যা অন্তত ছয়ে দাঁড়াল। আর ২০১৫-এর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত নিহত মার্কিন সেনার সংখ্যা দাঁড়াল অন্তত ৬৫ জনে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাবুলে সফরের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এ দুজন মার্কিন সেনা নিহত হলেন। পম্পেও কাবুল সফর করলেও তা ঘোষণা করা হয়নি। সফরে তিনি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও দেশটির সিনিয়র রাজনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছেন। এ সময় পম্পেও জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালেবানের সাথে শান্তি চুক্তি হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। ১৮ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধ অবসানে ২৯ জুন তালেবান কর্মকর্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে সপ্তম পর্বের শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আলোচনায় উভয়পক্ষ তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রে দাবিগুলো বিবেচনায় নিবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সব সেনার প্রত্যাহার চায় তালেবান, অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র চায় আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে হামলা চালানো বন্ধ হোক।
ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার বিদেশী সেনা আফগানিস্তানে মোতায়েন আছে। এদের বেশির ভাগই মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য। কিছু মার্কিন সেনা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে অংশ নিলেও বিদেশী সেনাদের বেশির ভাগই আফগান বাহিনীগুলোর প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও তাদের সহায়তা করার বিষয়গুলো দেখভাল করে। ফেব্রুয়ারিতে দেয়া এক রিপোর্টে জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলা ও আত্মঘাতী হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর রেকর্ড ৩,৮০৪ জন বেসামরিক আফগান নিহত হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement