গৌরীপুরে বখাটের ছুরিকাঘাত স্কুলছাত্রী আহত, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে পাপিয়া সুলতানা (১৪) নামে এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেছে স্থানীয় মাদকাসক্ত বখাটে যুবক জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার এক সহযোগী।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন।

আহত স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

পাপিয়া সুলতানা অচিন্তপুর ডক্টর এম.আর করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে অচিন্তপুর ইউনিয়নের চড়াকোনা গ্রামের কৃষক আবুল হাসিমের মেয়ে। আর বখাটে যুবক জহিরুল ইসলাম একই গ্রামের মৃত সামছুল ইসলামের ছেলে।

ঘটনার পর থেকে জহিরুল এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।

এ ঘটনায় জড়িত বখাটে যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে দুপুর ১২টায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন অচিন্তপুর বাজারে গৌরীপুর-শাহগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিয়া বখাটে যুবককে দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন তারা।

আহত স্কুল ছাত্রী পাপিয়া জানায়, স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বখাটে যুবক জহিরুল বিভিন্ন সময় তাকেসহ তার সহপাঠীদের উত্যক্ত করত ও নানা কু-প্রস্তাব দিত। এতে প্রতিবাদ করায় জহিরুল ও তার লোকজন তাদেরকে নানা হুমকিও দিয়ে আসছিল। আজ ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে কোচিং করার উদ্দেশ্যে অচিন্তপুর বাজারে যাচ্ছিল সে। এসময় তার পেছন পেছন আসছিল জহিরুল। এক পর্যায়ে তার পেটের ডান দিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় জহিরুল। ঘটনার সময় জহিরুলের সাথে অজ্ঞাত এক যুবক ছিল বলে জানায় পাপিয়া।

গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার মৌপ্রিয়া মজুমদার জানান, পাপিয়া এখন শঙ্কামুক্ত। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

গৌরীপুর থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং বখাটে যুবককে আটকের জন্য এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ড. এম.আর করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, মাদকাসক্ত বখাটে যুবক জহিরুল স্কুলের ছাত্রীদের রাস্তায় প্রতিনিয়ত উত্যক্ত করে থাকে। স্কুলের ছাত্রীদের উত্যক্তের ঘটনায় তার পরিবারের লোকজনের কাছে বিচার দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরাও জহিরুলের বিচার করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে জহিরুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অভিভাবকরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গৌরীপুর থানার পুলিশ জহিরুলকে আটকের জন্য তার বাড়িতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও তাকে ধরতে পারেনি। পুলিশী অভিযানের মুখে জহিরুল প্রায় এক বছর আত্মগোপনে থাকার পর অতি সম্প্রতি সে বাড়িতে আসে। বৃহস্পতিবার ভোরে তার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পাপিয়াকে ছুরিকাঘাত করে জখম করে জহিরুল।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, জহিরুল একজন মাদকাসক্ত বিবাহিত যুবক। তার সন্তানও রয়েছে। জহিরুলের কু-কর্মে স্কুলের ছাত্রীসহ অভিভাবকরা ছিল অতিষ্ঠ। পুলিশী অভিযানের মুখে প্রায় এক বছর আত্মগোপনে থাকার পর ফের বাড়িতে এসে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় সে।

ঘটনার খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এএসএম রিয়াদ হাসান গৌরব (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) আহত স্কুলছাত্রীকে হাসপাতালে দেখতে যান। এসময় তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।