পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ভিড়ল কয়লাবাহী জাহাজ

পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে নির্মাণাধীন পায়রা কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন কাজে ব্যবহারের জন্য কয়লাবাহী প্রথম জাহাজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বালিকপানান বন্দর থেকে ছেড়ে আসা এমভি জিন হাই টং-৮ নামের হংকংয়ের পতাকাবাহী জাহাজটি ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়ে। জাহাজটির আগমনকে কেন্দ্রে করে জেটি এলাকায় এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এ সময় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সফলতা কামনা করে বিশেষ দোয়া-মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জামে মসজিদের পেশ ইমাম মো: সোলায়মান হোসেন দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম, প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মওলা, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, চিফ হাইড্রোগ্রাফার লে. কমান্ডার মো: সাইফুল ইসলাম, বিসিপিসিএলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক চি ইউসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পায়রা বন্দরের একটি সূত্র জানায়, প্রথম কয়লাবাহী জাহাজটি ফেয়ার ওয়ে বয়া অতিক্রম করে রাবনাবাদ চ্যানেলে সকাল ৯টায় প্রবেশ করে। এরপর জাহাজটির শুল্কায়নসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া পায়রা বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন করে শেষ বিকেলের দিকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জেটিতে ভিড়ে।
জার্মানির ওল্ডেন ড্রাফট কেরিয়ার্স লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেনকন সেটারনস লিমিটেড পোর্ট এজেন্ট হিসেবে এ কয়লা আমদানি করেছে। দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এ মালেক বলেন, আমরাই পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সব সময় কয়লা আমদানি করব। দেশের অগ্রগতির সাথে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুষম উন্নয়নের ফসল হলো পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা আনার মধ্য দিয়ে নতুন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কার্যক্রম শুরু করা যাবে। আমরা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে পারব।’ তিনি আরো বলেন, কনভেয়ার বেল্টের ওপরে ঢাকনা দেয়া আছে। তা ছাড়া যেখানে কয়লা রাখা হবে, সেখানেও ঢেকে রাখা হবে। ফলে কয়লার কারণে বায়ু-পরিবেশ ক্ষতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডক মাস্টার এস এম শরিফুর রহমানের দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (বিসিপিসিএল) বছরে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করবে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যতদূর জানি বিসিপিসিএল জেটিতে অক্টোবর মাসে চারটি জাহাজ আসবে। ডিসেম্বর মাসে আটটি জাহাজ আসবে। মাসে সর্বোচ্চ ২০-২২টি জাহাজ আনতে পারব। এর মাধ্যমে আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের পায়রা বন্দরের বাস্তবায়ন শুরু হলো। তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দরের মুরিং পয়েন্টে শিপ টু শিপ লাইটারেজের মাধ্যমে আংশিক অপারেশনাল কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৪টি বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম পায়রা বন্দরের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।