২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রূপগঞ্জে স্কুলছাত্র জিসানকে পিটিয়ে হত্যা বিচারের দাবিতে সহপাঠীদের মানববন্ধন

-

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জিসান হোসেন (১৬) নামে নবম শ্রেণীতে পড়া এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যার ঘটনার পর থেকেই খুনিদের ভয়ে নিহত জিসানের পরিবারের লোকজনসহ আত্মীয়স্বজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ দিকে পেরাব আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে জিসানের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় এলাকাবাসীও ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গোলাকান্দাইল এলাকায় সন্ত্রাসীরা জিসান হোসেনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার পর গত শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।
নিহত জিসান হোসেন ঢাকা জেলার সূত্রাপুর থানার ধোলাইখাল রাশাবাজার এলাকার গোপাল হোসেনের ছেলে। স্থানীয় পেরাব আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়া ছাত্র জিসান। জিসানের বাবা গোপাল হোসেন তার পরিবার নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার কান্দাপাড়া এলাকায় প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে তারা পশ্চিম কান্দাপাড়া এলাকার মনোয়ার হোসেনের বাড়িতে বসবাস করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৫ দিন আগে গোলাকান্দাইল মধ্যপাড়া এলাকার ছাত্রলীগের নামধারী নেতা সৌরভের ছোট ভাই সিয়ামসহ তার লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাগেরবাগ বউবাজার এলাকার মাসুদ রানাকে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় বউবাজার এলাকার বাদল নামের একজন প্রতিবাদ করলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। ওই সময় নাগেরবাগ বউবাজার এলাকার লোকজনও পাল্টা সিয়ামের দু’জনকে পিটিয়ে আহত করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার সকালে নাগেরবাগ বউবাজার এলাকার হৃদয় হাসান শুভ স্কুলছাত্র জিসান হোসেনকে সাথে নিয়ে গোলাকান্দাইল মধ্যপাড়া এলাকায় ক্রিকেট খেলা দেখতে যায়। নাগেরবাগ বউবাজার এলাকার হওয়ায় গোলাকান্দাইল মধ্যপাড়া এলাকার সৌরভসহ তার ছোট ভাই সিয়াম, বিদ্যুৎ, ইকরাম, শাওন, রোহান, আলামিন, নিরব, আরমান, ইমন, সাকিব, হৃদয়, ইয়ামিন, ফাহিম, মাসুম, মোস্তাকিমস আরো বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী হৃদয় হাসান শুভ ও জিসান হোসেনকে জোরপূর্বক উঠিয়ে গোলাকান্দাইল হাটসংলগ্ন বালুর মাঠে নিয়ে রড ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে শরীর থেতলে দেয়। পরে সেখান থেকে তুলে এনে সৌরভের অফিস কক্ষে দুই দফা পেটানো হয়। সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় হৃদয় হাসান শুভ। একপর্যায়ে দিবালোকে জিসানকে প্রায় ১০ ফুট উঁচু থেকে মাটিতে বেশ কয়েকবার আঁচড়ে ফেলা হয়। পরে বালুর মাঠে গুরুতর অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনার পরের দিন গত শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিসান মারা যায়। ঘটনার পর থেকেই হত্যার সাথে জড়িতদের এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও পাচ্ছে না।
প্রত্যক্ষদর্শী ফুলজান বেগম বলেন, ‘উদ্ধারের সময় আহত জিসান বলছিল আমার কোনো অপরাধ নেই, আমাকে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে ও আঁচড়ে আহত করা হয়েছে। পায়ে ধরেও রেহাই পাইনি আমি।’ কথাগুলো বলার সময় আমিসহ আশপাশের লোকজন কান্না ধরে রাখতে পারেনি। নিহত জিসান হোসেনের চাচী সুমি বেগম জানান, ছেলে জিসানকে হত্যার পর বাবা গোপাল হোসেনসহ পরিবারের লোকজন হত্যার ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। খুনিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা-মোকদ্দমা করতে সাহস পাচ্ছেন না। জিসানের লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।


আরো সংবাদ



premium cement