২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অধ্যক্ষের কক্ষে অভিভাবককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিলো সভাপতির লোকজন

-

অধ্যক্ষের কক্ষে কমিটির সভাপতির সামনে অভিভাবককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। অভিভাবকের দুই কর্মচারীকেও সেখানে আটকে রেখে বেধড়ক পেটাল সভাপতির লোকজন। এ ঘটনায় আহত অভিভাবক সাত দিন ধরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে রয়েছেন। গত ১৬ জুলাই গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে এ ঘটনা ঘটে। আহত অভিভাবকের নাম আব্দুর রাজ্জাক (৫৫)। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনের মালিক। তার দুই সন্তান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশুনা করে।
আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি চান্দনা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিন বছর মেয়াদে ১০ লাখ টাকা জামানত দিয়ে মাসিক ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় স্কুলের ক্যান্টিন চালান। তাকে গত ১৬ জুলাই অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়; তিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হালিম সরকারকে গালমন্দ করেছেন। একপর্যায়ে সভাপতির সামনে ৫-৭ জন লোক অধ্যক্ষের কক্ষের দরজা বন্ধ করে তাকে নির্মমভাবে মারধর করে। এ সময় প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারীসহ কয়েকজন শিক্ষকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হজ পালন করতে যাওয়ায় অধ্যক্ষ অফিসে ছিলেন না। পরে পলাশ নামে এক ব্যবসায়ী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিলে পরে তাকে গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই এক্সরে করে দেখা গেছে তাকে মারধরের ফলে তার বাম হাত ভেঙে গেছে, বুকের একটি পাঁজর ও কোমরের হাড় ফেটে গেছে। তিনি বলেন, বিনা দোষে আমাকে মারধর করা হয়েছে। আমার ধারণা কেউ আমার সম্পর্কে সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সভাপতিকে ভুল বুঝিয়েছে। সভাপতি আমার কোনো কথাই শুনেননি। সুস্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
আহত আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে তার এক মেয়ে ১০ম শ্রেণীতে এবং ছেলে কলেজ শাখায় একাদশ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। এ ঘটনার পর ভয়ে তার সন্তানেরা বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ক্যান্টিনটি জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়ে চাবি নিয়ে গেছে সভাপতির লোকজন। দোকানে নগদ ৩২ হাজার টাকা ও মালামাল ছিল। সেগুলোর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কমিটির সভাপতি এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারে না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ক্যান্টিনের ভাড়ার বিষয় নিয়ে ক্যান্টিন মালিক আব্দুর রাজ্জাক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে গালমন্দ করেছিলেন বলে শুনেছি। বিষয়টি পরস্পর জানতে পেরে সভাপতি ক্যান্টিনের দুই কর্মচারীকে বিদ্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে মালিক রাজ্জাক সাহেবকে ডেকে আনা হয়। তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলে একপর্যায়ে আব্দুর রাজ্জাককে মারধর করা হয়। সেখানে পূর্ব থেকেই তার দোকানের কর্মচারী জিয়ান (১০) ও ম্যানেজার রজব আলীকেও আটকে রেখে মারধর করা হয়। ওই দিন রাত এগারোটার দিকে দুই কর্মচারীকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ দিকে ঘটনা অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হালিম সরকার বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ক্যান্টিনের ১১ মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। তাকে ডেকে ভাড়া পরিশোধের কথা বলা হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল