০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ব্রুনাই হাইকমিশনের ভেতর যুবককে মারধর, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা

ব্রুনাই হাইকমিশনের ভেতর এক যুবককে মারধর, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা - সংগৃহীত

সম্প্রতি ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভেতরে একজন প্রবাসীকে এক কর্মকর্তার সামনে মারধরের ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

আজ বুধবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২১ আগস্ট ,‘ব্রুনাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনার অভিযোগের বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। দায়িত্বশীল ও মর্যাদাপূর্ণ শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় উক্ত অনাকাঙ্খিত ঘটনাটির বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ 

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে চেয়ারে বসে থাকা কর্মকর্তার নাম আব্দল্লাহ আল রশিদ। তিনি হাইকমিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ভিডিওতে দেখা যায়, এই কর্মকর্তার সামনের চেয়ার ও সোফায় বসে আছেন কয়েকজন, দাঁড়িয়ে আছেন আরো কয়েকজন ব্যক্তি। কয়েকজন মিলে পালাক্রমে যাকে মারছেন (কেউ লাথি মারছে, কেউ বা ঘুষি মারছে) তার নাম কামরুল হাসান। তিনি একজন সেখানকার সাব এজেন্ট। ভিসা দালাল হিসেবে পরিচিত।

জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যারা শ্রমিক হিসেবে ব্রুনাইতে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই ভিসা ট্রেডিংয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। নিজের নামে কোম্পানি খুলে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন বৈধ-অবৈধভাবে। যদিও এসব শ্রমিকের অধিকাংশকেই কাজ দিতে পারেন না তারা। ফলে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটাতে হয় তাদের। প্রতিবাদ করলে মারধরেরও শিকার হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা। ভিসা ট্রেডিংয়ের সাথে জড়িতদের মধ্যে কামরুলও একজন বলে জানায় বাংলাদেশ হাইকমিশন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় হাইকমিশনের কাছে ব্যাখ্যা চায়। এরপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার ব্রুনাইস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রবাসী কল্যাণ সচিবকে চিঠি লিখেন হাইকমিশনা  এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হুসাইন। চিঠিতে তিনি জানান, কামরুল হাসান ব্রুনাইস্থ প্রবাসী ভিসা দালাল ও মানবপাচারকারী আব্দুর রহিমের সাব এজেন্ট। মাসুক, মুস্তফা কামাল, ওমর ফারুক, জাহের শেখ, রফিকুল ইসলাম, মো. আউয়াল, সেরাজুল ইসলাম ও ফিরোজ মিয়া নামের ৮ জন হাইকমিশনের শ্রম উইংয়ে অভিযোগ করে তাদেরকে কাজ দেয়া হচ্ছে না, বেতন ভাতা পাচ্ছে না। গত ২১ আগস্ট অভিযোগকারীগণ এবং অভিযুক্ত কামরুলকে হাইকমিশনে ডাকা হয়। অভিযোগের বিষয়ে উভয়পক্ষের তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল রশেদের সামনেই ওই ৮ শ্রমিক কামরুলকে মারধর করে। যা কামরুলের বন্ধুমহল গোপনে ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়, যা পরে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল রশিদকে শ্রম উইংয়ের সকল কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এবং এ ঘটনা তদন্তে হাইকমিশনের হেড অব চ্যানচেরিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চিঠিতে ব্রুনাইতে ভিসা ট্রেডিংয়ে দালালচক্রের দৌরাত্ম এবং তা বন্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়ার উপরও জোর দাবী জানানো হয়।

এদিকে, কামরুল হাসানকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হলেও তার আরো একটি ভিডিওতে দেখা গেছে বিমানবন্দর কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে (বডিকন্ট্রাক্ট) এসব বাংলাদেশীকে শ্রমিক হিসেবে ব্রুনাইতে নিয়ে গেছেন বলে স্বীকার করছেন। এর সাথে জড়িত আরো একজন ব্যক্তির নামও তিনি বলেছেন।

মারধরের শিকার কামরুলের এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে সেটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ আরো কিছু দপ্তর ও গুরুত্‌পূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কাছেও পাঠানো পৌঁছে ভিডিওটি। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে কয়েকদিন হলো। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ব্রুনাই হাইকমিশনে সংঘটিত ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা আসে আজ।  


আরো সংবাদ



premium cement