২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাশোগি হত্যা : ভোল পাল্টালো সৌদি আরব

জামাল খাশে - সংগৃহীত

সাংবাদিক জামাল খাশোগির মৃত্যু নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অবস্থান পরিবর্তন করল সৌদি আরব। এবার তারা বলছে, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা শ্বাসরোধ করে খাশোগিকে হত্যা করেছে।

গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেট থেকে খাশোগি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর টানা দুই সপ্তাহ ধরে সৌদি সরকার দাবি করে আসছিল, ভিন্ন মতাবলম্বী ওই সাংবাদিক কনস্যুলেট থেকে জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে গেছেন। এরপর শুক্রবার প্রথমবারের মতো সৌদি আরব স্বীকার করে, খাশোগি কনস্যুলেটের মধ্যেই কর্মকর্তাদের সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে এক মারামরির ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

সৌদি সরকারের ওই বক্তব্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের রোববার মার্কিন টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, খাশোগিকে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা খুন করেছেন এবং এটা ছিল ‘ভয়ঙ্কর ভুল।’

তুরস্কের কর্মকর্তারা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে শুরু থেকেই বলে এসেছেন, খাশোগিকে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে হত্যা করে তার লাশ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়েছে। এমনকি খাশোগি জীবিত থাকা অবস্থায়ই তার শরীর বিচ্ছিন্ন করা শুরু হয় বলে তারা জানিয়েছেন।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রথম স্বীকার করলেন, খাশোগির নিহত হওয়ার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা ছিল না বরং পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু আদেল আল-জুবায়ের দাবি করেছেন, ‘সৌদি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অগোচরেই’ এ কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'একটি ভয়ঙ্কর ভুল হয়েছে এবং বিষয়টিকে চেপে রাখার চেষ্টা সেই ভুলকে আরো জটিল করে তুলেছে।'

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে দাবি করেন, যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের নির্দেশে এ কাজ করা হয়নি। এ ছাড়া খাশোগির লাশ কোথায় সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

খাশোগি হত্যায় জড়িত ১৮ ব্যক্তিকে আটক করেছে সৌদি আরব। এ ছাড়া, মোহাম্মাদ বিন সালমানের দু’জন সহযোগীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যুবরাজেরই নেতৃত্বে গোয়েন্দা বিভাগকে ঢেলে সাজানোর জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

ওসামা বিন লাদেনের বন্ধু ছিলেন খাশোগি!

সৌদি ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক, ওয়াশিংটপোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগি। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে নিখোঁজ, পরে বিশ্ববাসীর চাপে সৌদি আরব কর্তৃক তাকে হত্যার খবর স্বীকার করে নেয়া -এ নাটকীয়তায় তার সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই।

মার্কিন লেখক লরেন্স রাইটের লেখা ‘দ্য লুমিং টাওয়ার : আল কায়দা অ্যান্ড দ্য রোড টু ৯/১১’ নামের বই থেকে জানা গেছে, সাংবাদিকতা জীবনের বাইরে খাশোগির ভিন্ন রূপ।

বইটিতে বলা হয়েছে, তিনি আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। বইয়ের প্রথম দিকে বলা হয়, লাদেন ও খাসোগি উভয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন। ব্রাদারহুড মতাদর্শ থেকে হঠাৎই তিনি সরে যান। গঠন করেন জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। বইটির ৭৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়, কর্মজীবনে সৌদি আরবের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগান আক্রমণ ও ওসামা বিন লাদেনের উত্থানসহ অনেক গুরুত্বপর্ণ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেন সাংবাদিক খাশোগি।

আশি ও নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানের বিখ্যাত তোরাবোরা পাহাড়ে বেশ কয়েকবার ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খাসোগি। ১৯৮৮ সালের ৪ মে আফগানিস্তানে আল কায়দার অপারেশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আরব নিউজে ছবিসহ একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন তিনি। ছবিতে তাকে (খাশোগিকে) আফগানি পোশাক পরা ও তার ঘাড়ে আরবিজি রকেটলঞ্চার দেখা গেছে।

১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করা খাসোগির তার দাদা ছিলেন সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ আল সৌদের ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

দাদার সুবাদেই রাজপরিবারে খাশোগির বিচরণ। সৌদি রাজপরিবারের বহু গোপন বিষয়ও তিনি জানতেন। বলা হয়ে থাকে, খাসোগি রাজপরিবারের বাইরে থাকা একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন, যিনি আল কায়দার টুইন টাওয়ার হামলা নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারগুলো জানতেন।

সৌদি অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির ভাতিজা ছিলেন তিনি। অন্যদিকে তার আরেক চাচাতো ভাই দোদি আল ফায়েদ যিনি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে নিহত হন। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সখ্য থাকায় তুরস্কে বেশ গ্রহণযোগ্যতা ছিল খাশোগির।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর বিন লাদেনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বলে জানিয়েছিলেন সাংবাদিক খাসোগি।


আরো সংবাদ



premium cement