১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

২৫ বছর আগের হত্যা মামলায় ৫ জনের ডাবল মৃত্যুদণ্ড

-

২৫ বছর আগে কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর পিতা-শরীফ ও শিশু পুত্র খোকনকে হত্যা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ জন কে ডাবল মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ৭তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাঃ বজলুর রহমান বেলা ২ ঘটিকার সময় জনার্কীণ আদালতে এ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। তাছাড়া শরীফ হোসেন এর ছেলে শাহজাহানকে কুপিয়ে আহত করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে এদের প্রত্যেককে আরো ৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন।

রায় দেওয়ার সময় ভিকটিমের দুই ছেলে আব্দুর রহিম ও শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। তারা এ রায়ের সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন। তবে ২ আসামী পলাতক থাকায় তাদেরকে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান। সেজন্য তাদের নিরাপত্তার জন্য সরকার এর কাছে আবেদন জানান।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পি.পি রুহুল আমীন এ.পি.পি মোঃ আজহার ও এ.পি.পি ভোলানাথ।
যাদের কে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন তারা হলো, শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ওরফে নজু, মিস্টার ওরফে ছোট মিস্টার, মো. আরিফ ও মো. মাসুদ। আসামিদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ওরফে নজু, মিস্টার ওরফে ছোট মিস্টার, কারাগারে আছেন। রায় ঘোষণার সময় তাদের আদালতে হাজির করা হয়। অপর দুই আসামি মো. আরিফ ও মো. মাসুদ পলাতক। তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য সাজা পরোয়ানা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে। প্রত্যেক আসামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পাশাপাশি ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে এবং ৫ বছর কারাদণ্ডের সাথে এদের প্রত্যেককে আরো ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা টাকা অনাদায়ে আরো ১ বছর কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০০৪ সালে ২১ জুলাই তারিখে আলোচিত এ মামলায় ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ কামরুল ইসলাম মোল্লা উল্লেখিত ৫ ব্যক্তিকে পিতা-পুত্র হত্যার অপরাধে ডাবল মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেন। এ মামলায় শফিকুল ইসলাম হাইকোর্টে আপীল করিলে আদালত যেহেতু এ মামলায় ৩ জন আসামী পলাতক ছিল তাদের পক্ষে আলাদা আলাদা স্টেট ডিফেন্স লইয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সেজন্য আদালত ২০০৮ সালে পুনরায় আলাদা স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দিয়ে বিচার কার্য সম্পাদন করার জন্য পুনরায় বিচারিক আদালত কে নির্দেশ দেন। সে মতে মামলাটি সে আদালতে আসলে আদালত আলাদা আলাদা স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দিয়ে যুক্তিতর্ক শুনানীর সময় বিচারক বদলী হওয়া মামলাটি ঢাকার ৭তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলী করা হয়। এ আদালত গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে যুক্তিতর্ক শুনানী গ্রহন করে এবং রায় ঘোষনার জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ ধার্য্য করে। গতকাল আসামীদের উপস্থিতিতে উল্লেখিত মামলায় ৫ জন কে দোষী সাব্যস্ত করে পিতা হত্যা মামলায় ফাসি ও পুত্র হত্যা মামলায় ৫ জন কে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য-১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই রাতে কেরানীগঞ্জের বরিশুর বাজারের পশ্চিম পাশে মালোপাড়া সংলগ্ন নিজ দোকানে ব্যবসায়ী শরীফের দুই শিশুপুত্র খোকন (৯) ও শাহজা‎হান (১২) বাবার জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসে। বাবার কাছে রাতের পড়া শেষে তারা দোকানের পিছনের রুমে ঘুমিয়ে যায়। রাত আনুমানিক ৩/৪টার সময়ে আসামিরা দোকানে এসে সিগারেট ও কিছু মালামাল বাকি চায়। শরীফ বাকিতে মাল বিক্রি করবে না বলে জানালে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দা, চাপাতি দিয়ে তাকে কোপাতে শুরু করে। তার চিৎকারে তার পুত্ররা এগিয়ে এসে পিতাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে। আসামিরা তাদেরকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই শরীফ ও তার শিশুপুত্র খোকন মারা যায়। ওই ঘটনায় শরীফের ছেলে আব্দুর রহিম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করে করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল কবির ১৯৯৪ সালে ৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটিতে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত জেলা ও দাযরা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা (বর্তমানে বিচারপতি) এ মামলায় ১৮ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের ডাবল মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত।

আসামিরা এ মামলায় উচ্চ আদালতে আপিল করলে উচ্চ আদালত মামলাটি বিচারিক আদালতকে আসামিদের পক্ষে পৃথক পৃথক স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করে পূর্ণ বিচার করার নির্দেশ দেন। সে মতে আসামিদের পক্ষে পৃথক পৃথক স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। আদালত উভয়পক্ষের যুক্তি তর্ক শেষে মামলাটি আবার রায় প্রদান করলেন।


আরো সংবাদ



premium cement