২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অ্যাবের সেমিনারে মির্জা ফখরুল

ইভিএমে কেড়ে নেয়া হবে মানুষের ভোটাধিকার

অ্যাব আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নিতে প্রয়োজনে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল এক সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে। আরেকটি ১ ফেব্রুয়ারি আসছে, যে পদ্ধতিতে ঢাকার নগরবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে। আমরা তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছি। এখনো বলছি, এই ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখুন এবং প্রয়োজনে ভোট পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আজকে সবাই জনগণের কাছে বলি এ কথা যে, তারা অত্যন্ত জোরে তাদের ভয়েস, তাদের কণ্ঠকে সোচ্চার করুন যে, আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএম কখনোই জনগণের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে না। আমরা এই ইভিএম প্রত্যাখ্যান করছি।
রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (অ্যাব) উদ্যোগে ‘ইভিএমকে না বলুন, আপনার ভোট সুরক্ষিত করুন’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএমের কারিগরি অপব্যাবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল কারচুপির সম্ভাব্য সুযোগ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীমের নেতৃত্বে ড. এস এম আবদুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী আশরাফউদ্দিন বকুল, তানবিরুল হাসান, আসাদুজ্জামান ও মিজানুর রহমানের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল। সেমিনারে তথ্য চিত্রের মাধ্যমের ইভিএমে ভোট কারচুপির নানা দিক উপস্থাপন করা হয়। অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, ড. মামুন আহমেদ, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার, আশরাফউদ্দিন বকুল, নেওয়াজ হালিমা আরলী, কাদের গনি চৌধুরী, শামীমুর রহমান শামীম, জেবা খান, হাসান জাফির তুহিন, ডা: আবদুস সেলিম, রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম মিঞা, শায়রুল কবির খান, প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন, মিয়া মো: কাইয়ুম, অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আলমগীর হাছিন আহমেদ, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি কেন ইভিএম পদ্ধতির বিরোধিতা করছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মেশিন ব্যবহৃত হয় মানুষের দ্বারা। মেশিনের পেছনে কারা থাকবেন সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন। যেহেতু এই মেশিনের পেছনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আছে এবং এই সরকার রয়েছে যারা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে পরিচালনা করছে তাদের উপরে মানুষের কোনো আস্থা নেই। এবার দুই সিটি করপোরেশনের পুরো নির্বাচনটা ইভিএম দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হবে। আমরা প্রথম থেকে এর আপত্তি জানিয়ে আসছি। নির্বাচন কমিশনেও আমাদের প্রতিনিধি দল গিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। মূল প্রশ্ন হচ্ছে যে, নির্বাচনটা কেন? নির্বাচনের মূল কারণটি হচ্ছে, একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের জন্য। সেটা জাতীয় সরকারও হতে পারে, স্থানীয় সরকারও হতে পারে। আমরা বলে আসছি যে, এই নির্বাচন কমিশন যোগ্য নন, অদক্ষ। বর্তমানে যে অনির্বাচিত সরকার রয়েছেন তাদের আজ্ঞাবহ একটি কমিশন। তারা যে হুকুম করে কমিশন তাই করে। বিগত নির্বাচনে আমরা পুরোটাই দেখেছি তারা সরকারের পরিচালিত হয়ে নির্বাচন করেছে। যেটা জনগণের মতামতের বিরুদ্ধে গেল। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখে তারা করে ফেলেছে। এই কমিশনকে বিশ্বাস করবার আর কোনো কারণ থাকতে পারে না।
আ’লীগের প্রার্থী আতিকের বক্তব্য দুঃখজনক : বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত মঙ্গলবার আমাদের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রকাশ্যে তার ওপর আঘাত করলেন, তার ওপর আক্রমণ চালালেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনকভাবে ওই দলের (আওয়ামী লীগ) মেয়রপ্রার্থী বললেন, এটা তাদের দলের নিজস্ব প্রোবলেম। ভেরি সেইম, দুর্ভাগ্যজনক। এ রকম একজন ব্যক্তি যিনি এই কথা বলতে পারেন তার তো মেয়র হওয়ার কোনো যোগ্যতাই থাকতে পারে না। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএম একটা মাত্র ঘটনা, এটা একটি মেশিন। এ রকম হাজারো মেশিন দিয়ে আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, আমাদের পুরো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। পত্র-পত্রিকা খুললে দেখবেন, ব্যাংকগুলো নেই। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হচ্ছে প্রায়ই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একই অবস্থা। সরকারের বাজেট থেকে উল্টো দিতে হয় ব্যাংক পরিচালনার জন্য। ব্যাংক থেকে টাকা দেদারছে লুট হয়ে যায়। শেয়ার মার্কেট মুখথুবড়ে পড়ে গেছে। রফতানি আয় যে গার্মেন্ট থেকে সেই সেক্টরটা আজকে ক্রমান্বয়ের নিচের দিকে যাচ্ছে।
বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির জন্য যে বিচার অন্য আরেক ব্যক্তির জন্য সে রকম বিচার নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তাকে দুই বছর আটকিয়ে রাখা হয়েছে। যে জামিন তিনি পাওয়ার যোগ্য, যেটা আমার সংবিধানের মধ্যে আছে সেই জামিনও তাকে দেয়া হচ্ছে না শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। নাজমুল হুদা জামিন পেয়েছেন, মহিউদ্দিন খান আলমগীর জামিন পেয়েছেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জামিন পেয়েছেন। এ রকম অনেকে জামিন পেয়েছেন। অথচ দেশনেত্রীকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনি সুচিকিৎসা দরকার তার পরও বিচার বিভাগ জামিন দিচ্ছে না। সম্পূর্ণভাবে আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এ জন্য যে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement