২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যাত্রীবেশে গাড়িসহ চালককে অপহরণ

নির্জন পথে পুলিশ সেজে অপহরণ করে ওরা; চার দিন পরে ভিকটিম উদ্ধার গ্রেফতার ৪ অপহরণকারী
র্যাবের হাতে আটক চার অপহরণকারী : নয়া দিগন্ত -

কোনো গন্তব্যে যাওয়ার কথা বলে প্রাইভেট কার ভাড়া করে যাত্রীবেশে চড়ে বসেন অপহরণকারীরা। মাঝপথে চক্রের অন্য সদস্যরা পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি থামায়। এরপর তারা গাড়িতে উঠেই অস্ত্রের মুখে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। নির্ধারিত স্থানে চালককে বেঁধে রেখে চলতে থাকে নির্যাতন। এখানেই শেষ নয়, অপহৃত চালকের ফোন নম্বর থেকেই পরিবারের সদস্যদের কাছে দাবি করা হয় বিশাল অঙ্কের মুক্তিপণ। কখনো কখনো মুক্তিপণের বিনিময়ে চালককে ছেড়ে দিলেও গাড়ি ফিরিয়ে দেয় না। অনেক সময় গাড়ি ফিরিয়ে নিতে চাইলেও চক্রটি দাবি করে বিশাল অঙ্কের টাকা। এ চক্রটি সবসময় রেন্ট-এ-কারের নতুন গাড়ি এবং চালকের আর্থিক অবস্থা দেখে টার্গেট করে থাকে বলে জানিয়েছে র্যাব। গত ১৯ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর থেকে মাদারীপুর যাওয়ার কথা বলে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া নেয় দুই ব্যক্তি। এরপর যাত্রীবেশে গাড়িতে চড়ে বসেন অপহরণকারী চক্রের এই দুই সদস্য। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ২টায় কাঁঠালবাড়ি এলাকা থেকে আরো কয়েকজন গাড়িটি থামিয়ে গাড়িসহ চালককে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। এরপর অপহরণকারীরা চালকের পরিবারকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করলে র্যাব-৪ এ একটি অভিযোগ করা হয়। এর ভিত্তিতে টানা অভিযান চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মাদারীপুরের দুর্গম চর থেকে চালক এনায়েত উল্লাহকে (৩২) উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে গাড়িটিসহ আটক করে র্যাব। তারা হলেনÑ শাহ জালাল, ফয়সাল, জয়নাল হাজারী ও রাকিব।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা ভিকটিম এনায়েত উল্লাহকে মাদারীপুরের দত্তপাড়া চর এলাকায় কাশবনে ছোট একটি ঘরে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালাতে থাকে। গাড়িটি ফরিদপুরের সদরপুরে নিয়ে যায় তারা। ভিকটিম এনায়েতকে মারধর করে তার মোবাইল থেকে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ভিকটিমের পরিবার থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানে নামে র্যাব-৪। প্রায় তিন দিন টানা অভিযানের পর দুর্গম চর থেকে এনায়েতকে উদ্ধারসহ চারজনকে আটক করা হয়।
চক্রের সদস্যরা যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে বিভিন্ন পন্থায় অপহরণ ও ছিনতাই করে আসছিল। কখনো গাড়িতে উঠেই চালকের হাত-পা বেঁধে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়, কখনো তারা অস্ত্রের মুখে চালককে নির্ধারিত স্থানে যেতে বাধ্য করে। কখনো মাঝপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তল্লাশির নামে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা।
মোজাম্মেল হক বলেন, ভিকটিম এনায়েতকে অপহরণের সাথে ১০ জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। চারজনকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। আশা করছি শিগগিরই তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
র্যাব জানায়, ভিকটিম এনায়েত উল্লাহ সম্প্রতি ১২ লাখ টাকা দামে অগ্রিম ছয় লাখ টাকা দিয়ে একটি নতুন প্রাইভেট কার কেনেন। বাকি টাকা প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা কিস্তিতে শোধ করার কথা ছিল। সে দিন তার কাছে দুই মাসের কিস্তির ৭০ হাজার টাকাও ছিল।
ভিকটিম এনায়েত উল্লাহ বলেন, চক্রের কেউ আমার পূর্ব পরিচিত নয়। তারা আমাকে ফোন করে গাড়ি ভাড়ার জন্য ঠিক করে। কাঁঠালবাড়ি এলাকায় গেলে টর্চ লাইট দিয়ে আমাকে থামার নির্দেশ দেয়। এরপর গাড়িসহ আমাকে নিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement