২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হতে পারে

-

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বাজেটে প্রস্তাবিত বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর রয়েছে ৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ধিত এই কর আরোপের প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, সমাজের মধ্যবিত্ত, অবসরভোগী ও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের আয়ের ওপর সরাসরি আঘাত করবে এই বর্ধিত কর। এমনকি সংসদে এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত উৎসে কর প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার বিষয়ে সরকারের দুটি চিন্তা রয়েছে। এর একটি হচ্ছেÑ বাজারে প্রচলিত সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে। অথবা, শুধু পরিবারভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর তা প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয় নিয়ে শিগগিরই অর্থ ও এনবিআর কর্মকর্তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আজ পর্যন্ত আমরা যা জানি তাতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কিন্তু সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর তা প্রত্যাহার করা হবে, না শুধু পারিবারিক ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর প্রত্যাহার করা হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়টি জানতে হলে অর্থবিল যে দিন পাস করা হবে সে দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। সে দিন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তা প্রত্যাহারের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে পারেন। উল্লেখ্য, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র শুধু মহিলারা ক্রয় করতে পারে। আর পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন অবসরভোগী চাকরিজীবীরা।
বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী একজন ৫ শতাংশ কর কর্তনের মুনাফা হিসেবে পাচ্ছেন ৯৫ টাকা। কিন্তু আগামী অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর কর্তনের পর মুনাফা হিসেবে পাবেন ৯০ টাকা। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত একজন অবসরভোগী পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সর্বাধিক ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ বা ক্রয় করতে পারেন। বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী ৫ শতাংশ কর কর্তনের পর ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের ওপর বার্ষিক মুনাফা পান ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কর্তন করা হলে তার মুনাফা ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে কমে হবে ৫ লাখ ২৯ হাজার ২০০ টাকা। সেই অবসরভোগী বার্ষিক ২৯ হাজার ৪০০ টাকা কম মুনাফা পাবেন।
এ দিকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে মূল বাজেটে প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এই ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ৫ গুণেরও বেশি। প্রতি বছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কী পরিমাণ ঋণ নেবে তার একটি প্রক্ষেপণ বাজেটে উল্লেখ থাকে। কিন্তু বিগত ৫ বছরের কোনোটিতেই সরকারের পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যে স্থির থাকা সম্ভব হয়নি। যেমন-২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৯ হাজার কেটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ঋণ নেয়া হয় ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। অন্যান্য বছরেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা), ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা), ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা) এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা) ঋণ নেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি মানে সরকারকে বেশি করে ঋণের সুদ গুনতে হয়। আগামী অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সুদ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ২৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement